ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার :
দীর্ঘ দুই মাস অতিবাহিত হলেও কক্সবাজার জেলা ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটি হয়নি। ফলে ঝিমিয়ে পড়েছে জেলার ক্রীড়াঙ্গন। নিয়মিত কোনো খেলাধুলার আয়োজন হচ্ছেনা। ফুটবল বা ক্রিকেটে হচ্ছে না কোনো লীগ-টূর্ণামেন্ট। এতে ক্রীড়াপ্রেমী মেধা বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার কিশোর-তরুণরা।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে সবশেষ ক্রীড়া সংস্থার চার বছর মেয়াদি কমিটি হয়েছিল। যার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৮ সালে। কিন্তু ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানে আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তন হয়ে যায়। তারপর ভেঙে দেয়া হয় জেলা-উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সব কমিটি। এরপর মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে ৭ সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠনের পরিপত্র জারি করে। এরপ্রেক্ষিতে অনেকে বায়োডাটা সম্বলিত আবেদনও করেন। তারপর সংশ্লিষ্টদের জোরালো কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় নতুন কমিটি আলোর মুখ দেখেনি।
জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা যায়, জেলা ক্রীড়া সংস্থায় ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদে ১৭টি পদ রয়েছে। যার পদাধিকার বলে সভাপতি জেলা প্রশাসক, সহ-সভাপতি পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। এছাড়া বাকি চারজন সহ-সভাপতি, একজন সাধারণ সম্পাদক, একজন অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক, দুজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও একজন কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এডহক কমিটিতে পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক আহবায়ক, ক্রীড়া অফিসার সদস্য সচিব, তিনজন ক্রীড়াবিদ, একজন ক্রীড়া সাংবাদিক ও একজন ছাত্র প্রতিনিধি নিয়ে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হবে। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থায়ও ইউএনও আহবায়ক, সমবায় কর্মকর্তা সদস্য সচিব, তিনজন ক্রীড়াবিদ, একজন ক্রীড়া সাংবাদিক ও একজন ছাত্র প্রতিনিধি সদস্য নিয়ে কমিটি করার আদেশ রয়েছে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হারুন উর রশীদ বলেন, এডহক কমিটি গঠনের আদেশ ছিল দুই মাস ধরে কিন্তু এখনো কমিটি হয়নি। তিনি দ্রুত এডহক কমিটি গঠন করে জেলা-উপজেলার ক্রীড়াঙ্গন সরব রাখে টুর্ণামেন্ট ও লীগ শুরু করার কথা বলেন।
সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও জেলাদলের কােচ মাসুদ আলম বলেন, জেলার ক্রীড়াঙ্গন অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। এখন কমিটি করে ক্রীড়া সজাগ না রাখলে কীভাবে ভালো খেলোয়াড় তৈরি হবে? এ কারণে আমাদের স্বপ্ন অনেকটাই ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে আমরা চাই নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন আর এভাবে ভঙ্গ না হোক।
জেলা ফুটবল সাপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক এম আর মাহবুব বলেন, আমরা চাই নতুন নির্বাচিত এডহক কমিটির মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থায় প্রাণ ফিরে আসুক। দীর্ঘ সময়ে ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচিত কমিটি না থাকায় নিয়মিত খেলাধুলা হচ্ছে না। প্রতিবছরের ন্যায় ডিসি গোল্ডকাপসহ বিভিন্ন টুর্ণামেন্ট না হওয়ায় নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ।
জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে খেলোয়াড় তৈরির জন্য জেলা-উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কোনো বিকল্প নেই। তবে আদেশের পরেও ক্রীড়া সংস্থার কমিটি না থাকায় জেলার ক্রীড়াঙ্গন স্থবির হয়ে পড়েছে। দ্রুত সাবেক ক্রীড়াবিদ, যারা দক্ষ সংগঠক রয়েছে তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হোক।
এদিকে, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের কমিটি বিলুপ্ত করার পর ক্রীড়া মন্ত্রনালয় থেকে এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ ও গেজেট হয়। এখনো সেই এডহক কমিটি গঠিত হয়নি। সংশ্লিষ্টদের উচিত-দ্রুত কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে ক্রীড়া সংস্থার ধারাবাহিক কার্যক্রম চালু রাখা। ক্রীড়া সংস্থা পরিচালনার জন্য যে কেউ আসুক, কিন্তু আমি চাই তারা প্রকৃত ক্রীড়ার মানুষ আসুক। এতে তাদের দায়বদ্ধতা কাজ করবে।
জেলা ক্রীড়া অফিসার মাঈন উদ্দিন মিলকী বলেন, এডহক কমিটি গঠনে মন্ত্রনালয়ের আদেশ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে অ্যাডহক কমিটিতে পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক সভাপতি ও আমি সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছি। এখন এডহক কমিটি গঠনে প্রক্রিয়া চলছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, এডহক কমিটি গঠনের জন্য ইতিমধ্যে অনেকজনের আবেদন জমা হয়েছে। আমরা যাচাই বাছাই করে দ্রুত কমিটি গঠন করব। অবশ্যই সচল হবে ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম।