এ.এম হোবাইব সজীব:
আব্দুল আজিজ প্রকাশ পানি আজিজ। বয়স ৩২ এর কাছাকাছি। বাড়ি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের মিয়াজী পাড়া গ্রামে। তিনি নিজেকে কখনো জনপ্রতিনিধির ঘনিষ্ঠজন, কখনো কেন্দ্রীয় নেতার সাথে সম্পর্ক, কখনো যুবলীগ নেতা, আবার সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে গভীর সখ্যতার পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম ও প্রতারণা করে আসছে এই আজিজ নামে যুবকটি।
এক সময়ে স্থানিয় মজিদিয়া মাদ্রাসায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ছাত্রলীগ নেতা টিপু আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতার ছত্রছায়ায় যুবলীগ নেতা বনে যান। তিনি আওয়ামীলীগের পক্ষ হয়ে ফেসবুকে সরব এখন। এভাবে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবসার নামে নানা কমিশন বাণিজ্যে ও দূর্নীতি করে অল্পদিনে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে সে। প্রকল্পের ছোয়ায় ভাগ্য বদল হয় তার।
জানাগেছে, উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের মনহাজী পাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মোনাফের পুত্র তিনি। তার পুরো পরিবার আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তার দুই ভাই বর্তমানে বোল্ট পাল্টিয়ে অঘোষিত বিএনপির বিভিন্ন মিটিং-এ অংশ নিচ্ছে।
জানাগেছে,মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শেখ পরিবারের বির্তকিত সংগঠন হিসাবে খ্যাত সিআরআই ও সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নাম ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক টিপু ও মাতারবাড়ির ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল আজিজ প্রকাশ পানি আজিজ সিন্ডিকেট করে প্রকল্পের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়ে দলের প্রভাব কাটিয়ে নামে-বেনামে টেন্ডার বাণিজ্য ও টেন্ডার বিহীন কোটি কোটি টাকার মালামাল পাচার করে লুটপাট ও পাচারের অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে। এবিষয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদ পত্রে শিরোনাম হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা। এসব ঘটনায় আজিজসহ কয়েকজন রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা এমন একটি অভিযোগ দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্দক প্রধান কার্যালয়ে। জমা পড়া এমন একটি কপি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
এছাড়াও প্রকল্পে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ করতে সিআইআর সংগঠনের কর্মকর্তা ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপির পিএস দিয়ে কর্মকর্তাদের ফোনে ও সরাসরি তাদেরকে নামে মাত্র মূল্য দিয়ে টেন্ডারসহ যাবতীয় মালামাল তাদের মাধ্যমে সরবরাহ ও পাচার করার জন্য বলা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।
এই সুযোগে সাবেক ছাত্রলীগ ও বর্তমান যুবলীগ নেতা আব্দুল আজিজ ও ইকবাল হোসেন টিপু সিন্ডিকেট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের আগে কোটি কোটি টাকার টেন্ডার ও টেন্ডার বিহীন মালামাল হাতিয়ে নিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ছাত্রলীগ নেতা টিপু পলাতক থাকলেও মালামাল গুলো এখন বের করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ নেতা আজিজ প্রকাশ পানি আজিজ ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা। তিনি ইতিমধ্যে প্রকল্পের কয়েকজন কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতার সাথে সিন্ডিকেট করে লিয়াজোঁর মাধ্যমে মালামাল গুলো বের করার জন্য আপপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের এক কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে অভিযোগ উঠে- মাতারবাড়ি মজিদিয়া আলিম মাদ্রাসার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল আজিজ প্রকাশ পানি আজিজ আওয়ামী লীগের স্থানীয় জেলা-উপজেলার নেতাদের সহযোগিতায় নামে বেনামে বিভিন্ন কোম্পানি খুলে প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে কমিশন বাণিজ্য,অবৈধভাবে মালামাল সরবরাহ ও পাচার,চাকুরি দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ করেছেন আব্দুল আজিজ। মাতারবাড়ী মিয়াজী পাড়া পাঁচ তলা বাড়ি রয়েছে তাঁর। এ ছাড়া উত্তর খুলশীতে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট আছে। কিনেছেন ৫০ লাখ টাকার মূল্যের গাড়ি। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার জমিও ক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিজের ও আত্মীয় স্বজনদের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে রেখেছেন কোটি কোটি টাকা।
এছাড়াও পানি আজিজের বিরুদ্ধে প্রকল্পের বিভিন্ন কোম্পানির কাজ ভাগিয়ে নেওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের কক্সবাজার বিভিন্ন নামদামী হোটেলে মদের আসরের ব্যবস্থা করে কাজ ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এবিষয়ে মাতারবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সাবেক ইউপি সদস্য হামিদ হোছাইন বলেন-প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লুটপাট করে দুর্নীতি করে অবৈধ ভাবে লাখ টাকা মালিক হয়েছে। সরকারের পতনের পর কোন বিএনপির নেতাকর্মী তাদের সাথে সিন্ডিকেট করে প্রকল্প লুটপাটে জড়িয়ে পড়লে তার দায় বিএনপি নিবে না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে পানি আজিজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রকল্পে ব্যবসা বাণিজ্য করে যাচ্ছে বলে স্বীকার করে অনিয়মের সাথে জড়িত নেই বলে দাবি করেন।
মাতারবাড়ি প্রকল্পের কোলপাওয়ারের চীফ ইঞ্জিনিয়ার সাইফুর রহমান বলেন- সরকারের পতনের আগে টিপু-আজিজসহ আরও কয়েকজন অফিসে এসে যোগাযোগ করত। মাঝেমধ্যে সিআরআই এর নাম ব্যবহার করত। তবে তারা বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের সাথে যোগাযোগ করে মালামাল নিয়েছে কিনা সে বিষয়ে তেমন অবগত নেই বলে জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রাষ্ট্রের সম্পদ যে সব মেগা প্রকল্পে মেগা লুটপাট হয়েছে সব প্রকল্পে আমাদের নজরদারি রয়েছে। জড়িতদের আইনের আওতায় আনার কাজ চলতেছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।