শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের অবসানে গণতন্ত্রের আশার পথে যাত্রা

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের তিন মাস পূর্ণ হয়েছে, যা ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফল। গণতান্ত্রিক সংস্কার ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এ সরকারও তিন মাস পার করেছে।

অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফিরছে, তবে আছে ঋণের বোঝা

নতুন সরকারের শুরুতেই পূর্ববর্তী সরকারের রেখে যাওয়া বিশাল ঋণের চাপে পড়তে হয়। সরকারিভাবে জানানো হয়েছে, ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ এবং ৬,৭৯০ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ বর্তমান সরকারের ওপর ভার হয়ে আছে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরছে, রেমিট্যান্স ও রিজার্ভ বেড়েছে, যা শৃঙ্খলার ইঙ্গিত।

ব্যাংক খাতের সংস্কারে পদক্ষেপ: টাস্কফোর্সের উদ্যোগ
রিজার্ভ সুসংহত রাখতে ব্যাংকিং খাতে ছয় সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ব্যাংকিং খাতের সমস্যা নিরূপণ ও মন্দ সম্পদের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাজনীতিতে অস্বস্তি: দ্রুত নির্বাচনের দাবি জোরালো হচ্ছে
নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় বিএনপিসহ বিভিন্ন দল দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। রাষ্ট্রপতির বক্তব্য এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে।

স্বস্তি ও সংকট: জনজীবনে উন্নতির চ্যালেঞ্জ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণ অস্বস্তিতে রয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো পুরোপুরি সক্রিয় করা সম্ভব হয়নি।

পর্যবেক্ষকদের মতামত: বাস্তবায়নের ত্রুটি ও সমন্বয়হীনতার অভিযোগ

পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারের সৎ উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও সমন্বয়হীনতা ও অভিজ্ঞতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন সংস্কার কমিশন চালু হলেও তাদের কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে রয়েছে। নির্বাচনী রোডম্যাপ ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা ও প্রত্যাশা
বিএনপি, জামায়াত, কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং গণতান্ত্রিক মঞ্চের নেতারা দ্রুত নির্বাচন ও সংস্কারের দাবি জানাচ্ছেন। তারা মনে করেন, জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই এই সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ।