রামু প্রতিনিধি
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তীব্র প্রতিবাদের মুখে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের ফের যোগদানের খবরে কলেজ ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
৭ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) কলেজ ছুটির পর বিকাল তিনটার দিকে একঝাঁক বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করেন মুজিবুল আলম। ওইদিন সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের হামলায় কয়েকজন ছাত্র আহত হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল ও রামু থানার ওসি এমন কান্তি চৌধুরী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জানা গেছে আগেরদিন বুধবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুপ্রতীম বড়ুয়ার কাছ থেকে কলেজ অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন মুজিবুল আলম। এখবর ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চায়ক হয়।
এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ছাত্রদের সাথে বৈঠক করে সহকারী কমিশনার (ভূমি), ওসি ও কলেজ শিক্ষকবৃন্দ। বৈঠক শেষে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করার পর বিকাল ৩টার দিকে সিএনজি গাড়িযোগে কলেজে প্রবেশ করেন অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম। এসময় মুজিবুল আলমের সাথে বহিরাগত এবং কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের নিয়ে অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম কলেজে প্রবেশ করে শিক্ষকদের সাথে কথা বলে নিজের কক্ষে যান। সেখানে তাঁর সাথে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী ও বহিরাগত তরুণের সাথে ছবি তুলে স্বল্প সময়ের মধ্যে কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। তবে যাওয়ার আগে তিনি শিক্ষকদের বলে যান- আগামী রবিবার থেকে তিনি নিয়মিত কলেজে এসে দায়িত্ব পালন করবেন।
কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান- মুজিবুল আলমের কলেজে যোগদান করাতে একটি চক্র রহস্যজনক কারণে উঠেপড়ে লেগেছে। চক্রটি বহিরাগত লোকজন দিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে জোরপূর্বক মুজিবুল আলমকে কলেজে ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে বাঁধা, শিক্ষার্থীকে মারধর, মামলার হুমকি, ছাত্রলীগ ও পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে হয়রানি এবং কলেজ ফান্ডের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে অধ্যক্ষের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। গত ১৯ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেন মুজিবুল আলম। তিনি কলেজে অনুপস্থিত থাকায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও কলেজের স্টাফরা সেদিন অধ্যক্ষের কক্সবাজারস্থ বাড়িতে গিয়ে অব্যাহতি পত্রে সই নিয়ে আসেন। ওইদিন অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ ও অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে।
ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই অধ্যক্ষের অনিয়ম দুর্নীতির খবর বাংলানিউজসহ প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইনের অন্তত ৩০ টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পৃথক তদন্ত কমিটিও হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এবং তদন্ত কমিটির লোকজনকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নিজের অনিয়ম দুর্নীতি ধামাচাপা দিয়েছেন অধ্যক্ষ।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুপ্রতীম বড়ুয়া জানান, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের সই করা অব্যাহতি পত্রটি অফিসিয়েল নিয়ম মেনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল। গত বুধবার তিনি ফের কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছেন।
অপরদিকে কলেজের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন- অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের বিরুদ্ধে কলেজের সকল শিক্ষক-কর্মচারী লিখিতভাবে অনাস্থা দিয়েছেন। তাঁরা চান- কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসুক।
এ ব্যাপারে জানার জন্য শুক্রবার রাতে মুজিবুল আলমের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ কারণে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।