সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:

কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের কার্যকরী কমিটির কার্যক্রমে ‘বৈষম্যে’র অভিযোগ তুলে কমিটির সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সাংবাদিক, গবেষক ও লেখক মুহম্মদ নূরুল ইসলাম। তিনি বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ক্লাবের সভাপতি মাহবুবর রহমানের হাতে লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দেন।

পদত্যাগপত্রে সাংবাদিক মুহম্মদ নূরুল ইসলাম দাবি করেন, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের বর্তমান কার্যকরী কমিটি জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের ফসল। রক্তাক্ত পথ পাড়ি দিয়ে দায়িত্ব নেয়ার পরেই কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বরা শুরু করেন সেই চিরচেনা বৈষম্য। সেই বৈষম্যের কারণে প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটিতে নিজের ‘বাকস্বাধীনতা বন্ধক’ দিয়ে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয় জানিয়েছেন।

মাত্র ৪ মাস আগে গত ৮ আগষ্ট কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের এই কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়েছিল। জুলাই-আগষ্ট অভ্যূত্থানে স্বৈরাচারি দোসরদের হাত থেকে এই ক্লাব রক্ষা করে ছাত্র প্রতিনিধিরাই বর্তমান নেতৃত্বের হাতে ক্লাবের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু অল্প দিনেই সেই কমিটি নিজেরাই ‘বৈষম্য’ ও ‘স্বৈরাচারী’ আচরণ শুরু করে। যা মানতে না পেরে ক্লাবের সিনিয়র সদস্য মুহম্মদ নূরুল ইসলাম কার্যকরী কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।

মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম তাঁর পদত্যাগপত্রে তাঁর পদত্যাগের বেশ কিছু কারণ তুলে ধরেছেন। তার ভাষ্যমতে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে ৮ আগস্ট আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরে অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় মাসিক সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি গঠন করা হয়। গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটির কাছে চিঠি যাওয়ার আগেই সভাপতি মহোদয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনের জন্য গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রয়োজন নেই। আমরা যেহেতু অন্তর্র্বতীকালীন কমিটি সেহেতু মাত্র ৪ মাসের মাথায় নির্বাচন করা অপরিহার্য কেনো আমার মাথায় ঢুকে না। আর চার মাসের মাথায় নির্বাচনই যখন করতে হবে তখন গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি করার দরকার কি ছিলো ? এটা নেহায়েতই একটি ধাপ্পাবাজি।

পদত্যাগ পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ছিলো বৈষম্যের বিরুদ্ধে। গণ-অভ্যুত্থানের মুখে কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তার দেখানো কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিবাদ দেশে রয়েছে গেছে। যেমন রয়ে গেছে আমাদের কক্সবাজার প্রেসক্লাবে। সাংবাদিকদেরকে বলা হয় ফোর্থ স্টেট। অথচ আমরাই প্রেসক্লাবে লালন করছি বৈষম্য।

প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন সদস্য পদ পেতে হলে দরখাস্ত করতে হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সে সব দরখাস্ত যাচাই- বাছাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি পূর্ণাঙ্গভাবে যাচাই-বাচাই করার মাধ্যমে কার্যকরী পরিষদের সাংবাদিকদের তালিকা জমা দেবেন। কার্যকরী পরিষদের দায়িত্ব সে সব সদস্যদের সদস্যপদ দেওয়া। নতুন করে আবার যাচাই-বাছাই করার দরকার নেই। কার্যকরী পরিষদকে সদস্যদের আবেদন যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন হলে এই তথাকথিত যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করার দরকার কি ?

পদত্যাগ পত্রে আরো বলা হয়েছে, আমাদের কার্যকরী কমিটি বিগত অক্টোবর মাসে যাচাই-বাছাই কমিটি বাছাই করে ১৭ জন নতুন সদস্যের তালিকা কমিটির কাছে জমা দিয়েছে। কমিটিতে ১৭ জনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা উত্থাপন না করে সভাপতি মাত্র ৯ জনের নাম উল্লেখ করে সদস্য পদ প্রদান করেন। অবশিষ্ট ৮ জনের নাম পর্যন্ত সভাপতি মহোদয় মাসিক মিটিং-এ উত্থাপন করেননি। কথা ছিলো পরবর্তী মিটিং এ অবশিষ্ট সদস্যদের নামের তালিকা উত্থাপন করা হবে এবং তাদের সদস্যপদ প্রদান করা হবে। কিন্তু বিগত ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত মাসিক মিটিং-এ সভাপতি সাহেব সেই তালিকা আর উত্থাপনই করেননি। বৈষম্যের কারণে উক্ত ১৭ জন সাংবাদিক দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করলেও প্রেসক্লাবের ফ্যাসিস্টদের কারণে সদস্যপদ পায়নি। বর্তমান কমিটিও হাটছে সেই পথে। এটা স্পষ্ট বৈষম্য। এই বৈষম্যকে মেনে নেওয়া যায় না।

তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখা উচিত বিনয় মানে দুর্বলতা নয়। কাকেও সালাম দেওয়া, সম্মান করা, বিনয় দেখানো এটাকে দুর্বলতা মনে করা নেহায়েত বোকামী ছাড়া আরে কিছু নয়।

পদত্যাগ পত্রের উপসংহারে তিনি উল্লেখ করেন যেখানে কথা বলা যায় না, কথা বললেই ঝগড়া মনে হয়। সংখ্যা গরিষ্টতার জোরে সব কিছু করা যায়। শেখ হাসিনাও সংখ্যা গরিষ্টতার জোরে ফ্যাসিস্ট হয়েছে, হয়েছে স্বৈরাচার, হয়েছে কতৃত্ববাদী। জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের শহিদদের রক্তের সাথে বেঈমানী করে, নিজের স্বকীয়তাকে নষ্ট করে কমিটিতে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমি কমিটির নির্বাহী সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করছি।