মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
দিয়ারা জরিপ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ও জনবান্ধব হবে। স্যাটালাইটের মাধ্যমে পিসিএসএম পিলার দ্বারা ইলেকট্রনিক টোটাল সেটেলমেন্ট (ইটিএস) মেশিন দিয়ে অক্ষাংশ-দ্রাগিমাংশ ধরে পূঙ্খানুপুঙ্খরূপে সার্ভে করা হবে। জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শুদ্ধ ও সঠিক জরিপ করে ভূমি যথাযথভাবে রেকর্ড করা হবে। দিয়ারা জরিপের মাধ্যমে প্রকৃত ভূমি মালিকদের তাদের নিজ নিজ মালিকানা সুনিশ্চিত করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের অডিটরিয়ামে কক্সবাজারের ঝিলংজা মৌজার চলমান ডিজিটাল (দিয়ারা) জরিপ কার্যক্রম সম্পর্কে ভূমি মালিক ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহা: মুনিরুজ্জমান একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, গণমানুষের হয়রানি রোধে জমির ডিজিটাল (দিয়ারা) জরিপ করা হচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমি সেবা জনবান্ধব, সহজলভ্য এবং ভূমি মালিকদের বহুমুখী সুবিধা দিতে সরকার দিয়ারা জরিপ করছে। তিনি বলেন, এখন থেকে কোন জমি আর এজমালি থাকবেনা। জমি হবে এখন একক মালিকানায়। প্লট টু প্লট জরিপ করা হবে। ওয়ান প্লট, ওয়ান খতিয়ান নীতির ভিত্তিতে জমি রেকর্ড করা হবে। ভূমি বিরোধকে জিরো পর্যায়ে নিয়ে যেতেই সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল ভূমি জরিপের ১২ টি ধাপ রয়েছে। জরিপ চলাকালে ন্যুনপক্ষে প্রথম ৫ টি ধাপে জমির মালিক অথবা তার প্রতিনিধিদের সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নিয়ে স্পটে থাকার আহবান জানান। নির্ভুল ও সঠিক জরিপের প্রয়োজনে জমির মালিকদের ডিজিটাল ভূমি জরিপ নিয়ে সচেতন থেকে মাঠপর্যায়ে জরিপকার্যে নিয়োজিতদের সহায়তা করার অনুরোধ জানান তিনি।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহা: মুনিরুজ্জমান আরো বলেন, জরিপ শেষ হলে পরিপূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ ম্যাপ পাওয়া যাবে, যা অনলাইনে সবার জন্য উম্মুক্ত থাকবে। যেখানে জমির মালিকের এনআইডি, ছবি, স্থায়ী ঠিকানা সংযুক্ত থাকবে। প্রত্যেক ৬ মাস পর পর এটি আপডেট হবে। এর মাধ্যমে জমি নিয়ে মামলা, বিভিন্ন জটিলতা ও হয়রানি অনেকটা হ্রাস পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আগের মতো ঢালাওভাবে আর নামজারী খতিয়ান সৃজন করা হবেনা।
তিনি আরো বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর গঠিত অন্তর্বতীকালীন সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তার অন্যতম ফসল হচ্ছে, চলমান ডিজিটাল ভূমি জরিপ। এখন শুধু ঝিলংজা মৌজার জরিপ হলেও ক্রমান্বয়ে পুরো কক্সবাজার জেলাকে ডিজিটাল জরিপের আওতায় আনা হবে। তিনি পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, আবার ফিরে যাব মাটিতে। আবার উত্থিত করা হবে মাটি থেকেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সব কাজ রের্কড করছেন। কার কাজ বেশী ভালো, তা জানার জন্য।
সভার বিশেষ অতিথি কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, আগের ভূমি আইনের জটিলতার কারণে তার দাদার আমলের মামলা এখনো তিনি টেনে চলেছেন। ডিজিটাল জরিপের পরেও একই অবস্থা থেকে গেলে ভূমি মালিকদের কোন লাভ হবেনা। তাই হয়রানি নিরসন করে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করতে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তাছাড়া, দেশের কোথাও জমি বিক্রির সময় অনুমতির প্রয়োজন না হলেও কক্সবাজারে জমি বেচা কেনার সময় অনুমতি নিতে হয়। এটি একটি ভোগান্তি, যা দূর করা দরকার।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ এর সভাপতিত্বে দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশনের চার্জ অফিসার (সিনিয়র সহকারী সচিব) মো: সায়েদুল আরেফিন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত অবহিতকরণ সভায় চলমান ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রমের বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশনের সেটেলমেন্ট অফিসার (উপসচিব) মো. নাজমুস শোয়েব। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবর রহমান, সদর উপজেলা জামায়াত ইসলামীর আমীর অধ্যাপক খোরশেদ আলম আনছারী, কক্সবাজার জেলা হেফাজতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইয়াছিন হাবিব, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি জিনিয়া শারমিন রিয়া, শাহেদ মুহাম্মদ লাদেন, নোমান, জামায়াত নেতা শহীদুল আলম বাহাদুর, অ্যডভোকেট নুরুল আলম, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী, সিনিয়র সাংবাদিক শামসুল হক শারেক, সাংবাদিক এম আর মাহবুব, বিএনপি নেতা মোস্তফা কামাল প্রমুখ। সভায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে মতবিনিময়কালে ঝিলংজা মৌজার ভূমি মালিকেরা বলেন, এই ডিজিটাল জরিপটা সঠিকভাবে হচ্ছেনা। গত এক বছর ধরে এই জরিপ শুরু হলেও সদর উপজেলার ঝিলংজা মৌজা এলাকার মানুষ এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে সভায় অভিযোগ করা হয়। সভায় ভূমি মালিকদেরগণ অগোচরে, অনেকটা গোপনে ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রম চলছে বলে ভূমি মালিকগণ অভিযোগ করেন। ঝিলংজা মৌজার সংশ্লিষ্ট অনেকেই এই জরিপ সম্পর্কে খুব একটা অবহিত নন। এরফলে, সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্বেও ভূল জরিপ হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাতে ভূমি দস্যূদের দৌরাত্ম্য, মামলা, অপরাধ কর্মসহ বিভিন্ন জটিলতা বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে বলে ভূমি মালিকেরা অভিযোগ করেন। ভূমি মালিকদের এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান অতিথি ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহা: মুনিরুজ্জমান প্রকাশ্যে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার আশ্বাস দেন এবং গণমাধ্যম সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ডিজিটাল ভূমি জরিপের বিষয়ে প্রচারণা চালানোর অনুরোধ জানান। চলমান ডিজিটাল ভূমি জরিপ নির্ভুল ও নিষ্কন্ঠক করতে জনসম্পৃক্ততা ও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে বলে মহাপরিচালক মহা: মুনিরুজ্জমান আশ্বাস দেন। জরিপ অধিদপ্তরের পক্ষ হতেও মাঠপর্যায়ে আরো ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে বলে তিনি জানান।
মহাপরিচালক আরো বলেন, বিগত ফ্যাসস্টি সরকার দেশটাকে লুটপাট করেছে। ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর দেশ এখন স্বৈরাচারমুক্ত। আমরা দেশটাকে এখন সম্মিলিতভাবে সুন্দর করে গড়ে তুলবো। সভায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি নোমানের দাবির প্রেক্ষিতে কক্সবাজারে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও সার্ভে টেকনোলজিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের চলমান ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রমে ইন্টার্নশীপ করার সুযোগ দেওয়া হবে বলে মহাপরিচালক আশ্বাস দেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, আগে কোন সময় ভূমি মালিক ও সংশ্লিষ্টদের সাথে অবহিতকরণ সভা করে জরিপ কার্যক্রম হয়নি। এবার তার ব্যতিক্রম হচ্ছে। সকলে জরিপ কার্যক্রম জানতে পারছে। এই ডিজিটাল ভূমি জরিপের মাধ্যমে ভূমি বিরোধ কমে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কক্সবাজারের এডিশনাল এসপি জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সমাজে অধিকাংশ অপরাধের কারণ হচ্ছে ভূমি। তাই ভূমি জরিপ নির্ভুল ও নিষ্কন্ঠক হওয়া বাঞ্ছনীয়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।