সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
আদালত, পুলিশ এবং সিভিল সোসাইটির সমন্বয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আইনগত সহায়তা শক্তিশালী করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) শহরের একটি তারকা মনের হোটেলের কনফারেন্স হলে “রোহিঙ্গা কমিউনিটিকে আইনগত সহায়তা প্রদান: বাস্তবতা ও পরবর্তী করনীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তাগণ এমন মন্তব্য করেন।

BLAST এবং UNHCR এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজারের বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মো. মুন্সী আবদুল মজিদ, বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আক্তার হোসেন, অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) মোঃ মোহাম্মদ শামসু দ্দৌজা, কক্সবাজার এপিবিএন-এর ডিআইজি প্রলয় চিশিম, কক্সবাজারে UNHCR-এর সিনিয়র প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর জিং সং এবং কক্সবাজারে UNHCR-এর সিনিয়র প্রোটেকশন অফিসার (আইনি সুরক্ষা ইউনিট) হিরোশি মিয়াউচি।

বক্তারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা কমিউনিটিকে আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।

আইনগত সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা নিরসন করতে বক্তারা বিশেষ তদন্ত ইউনিট ও আদালত প্রতিষ্ঠা, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি বাস্তবায়ন, ক্যাম্পে নারী কর্মী নিয়োগ এবং লজিস্টিক সহায়তা উন্নত করার জন্য পরামর্শ দেন। আদালতের কার্যক্রমের বিষয়ে সুপারিশগুলির মধ্যে ছিল দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য অনলাইন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, রোহিঙ্গা কমিউনিটির জন্য অনলাইন জিডি করার ব্যবস্থা, ক্যাম্প এলাকায় ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (OCC) প্রতিষ্ঠা, সংশ্লিষ্ট বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি, আইনি সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান আইনি অধিকারসমূহ কার্যকর করা।

সভায় কক্সবাজার বার এসোসিয়েশন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, কারা কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সংস্থা – UNHCR ও IOM এবং জাতীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ও জাগো নারী উন্নয়ন সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহন করেন।

পটভূমি:
২০১৯ সাল থেকে BLAST, UNHCR-এর সহায়তায় কক্সবাজারের ১৭টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা কমিউনিটিকে আইনি সহায়তা প্রদান করে আসছে, যার মধ্যে আইনি পরামর্শ, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, রেফারেল সার্ভিস এবং বিশেষ করে নারীর প্রতি সহিংসতার শিকারদের জন্য আদালতে আইনগত প্রতিনিধিত্ব প্রদান করে আসছে। অত্র কাজে উল্লেখযোগ্য সাফল্য থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন আইনি এবং প্রতিষ্ঠানগত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এই সমস্যাগুলি মোকাবেলা করতে সরকারের আইন, বিচার ব্যবস্থা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং আইনগত সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলির মধ্যে আরও কার্যকর সমন্বয় প্রয়োজন।

মতবিনিময় সভাটি কক্সবাজারের বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মো. মুন্সী আবদুল মজিদ- এর সভাপতিত্বে একটি আলোচনা পর্ব দিয়ে শুরু হয়।

আবিদ নওয়াজ এবং জনাব খুরশিদা আখতার রোহিঙ্গা কমিউনিটিতে আইনি সহায়তা প্রদানের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন এবং আইনি সহায়তা প্রদান করতে গিয়ে প্রচলিত নীতি রীতি ও বাস্তবিক চ্যালেঞ্জসমূহ যেমন দীর্ঘকালীন আটক, অনলাইন জিডি নিবন্ধন না হওয়া, পারিবারিক আদালত ও সিভিল কোর্টে প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধতা কথা তুলে ধরেন।

ব্লাস্টের পরিচালক (আইন) মোঃ বরকত আলী নাগরিকত্ব ও জাতীয়তা নির্বশেষে সকল মানুষের জন্য সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারসমূহ যেমন আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, আটক ও গ্রেপ্তার থেকে সুরক্ষা, নির্যাতন থেকে মুক্তি এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ইত্যাদি নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোকপাত করেন।

প্রথম প্যানেল আলোচনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়, যার মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার এপিবিএন-এর ডিআইজি প্রলয় চিশিম এবং খন্দকার ফজলেহ রাব্বি, অ্যাক্টিং কমান্ডার, এসপি এপিবিএন ৮. কক্সবাজার। দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনা হয়েছে বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়ে, যার মধ্যে আলোচনা করেন প্রধান বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আক্তার হোসেন এবং সিনিয়র বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আক্তার জাভেদ, জেলা আইন সহায়তা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)।

সমাপনী সেশনটি অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসুদ দৌজা এবং UNHCR-এর সিনিয়র প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর জিং সঙ দ্বারা সম্বোধিত হয়।

সুপ্রীম কোর্ট এর সিনিয়র অ্যাডভোকেট এবং BLAST-এর অনারারী এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সারা হোসেন তাঁর সমাপনী বক্তব্যে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলির সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের জন্য আইনগত সহায়তা প্রদানে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ এবং যারা কমিউনিটিতে আইনগত তথ্য ও শিক্ষা প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন সে সকল রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা তুলে ধরেন। BLAST এর উপদেষ্টা (সামাজিক ন্যায় বিচার) আহমেদ ইব্রাহিম মতবিনিময় সভাটি পরিচালনা করেন এবং BLAST-এর ট্রাস্টি বোডের সদস্য নুরুল আলম ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করেন।