বরিশালের রূপাতলীতে বাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও শ্রমিকদের ওপর হামলার ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট শুরু করেছে বাস শ্রমিক সংগঠন। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ১৬টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

শুধু বাস চলাচলই নয়, দূরপাল্লার যাত্রী নিতে চাওয়া থ্রি-হুইলারগুলোও শ্রমিকরা আটকে দিচ্ছেন। ফলে বরিশাল-খুলনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালি, কুয়াকাটা, ভোলা ও আরও কয়েকটি রুটের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

ঢাকা থেকে এসে ঝালকাঠি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন যাত্রী নাজমুন্নাহার। তিনি বলেন, “রূপাতলীতে নেমে দেখি কোনো বাস চলছে না। বসে আছি অনেকক্ষণ, অথচ জরুরি কাজে বাড়ি যেতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে বাসে আগুন দেওয়া ঠিক করেনি, আবার শ্রমিকদেরও কথায় কথায় ধর্মঘটে যাওয়া উচিত না। সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা সবার ভাবা উচিত।”

সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান অভিযোগ করেন, “শ্রমিকরা আমাদের ওপর হামলা চালানোর পর এখন নিজেরাই ধর্মঘট ডেকেছে। তারা বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়ে আছে, ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে চলাচল করতে পারছে না।”

রূপাতলী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী জানান, শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবিতে বরিশাল বিভাগের ১১টি বাস মালিক সমিতি ও ১১টি শ্রমিক ইউনিয়ন একজোট হয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

তিনি বলেন, “শ্রমিকরা সবসময় মার খেয়ে যাচ্ছে, আর সবাই তাদের বিরুদ্ধে থাকছে। গতকাল শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা হাফ ভাড়ার বিরুদ্ধে নই, কিন্তু ছাত্ররা তাদের আইডি কার্ড দেখিয়ে পরিবারের লোকজন, বন্ধুবান্ধবদেরও হাফ ভাড়া করাচ্ছে। এতে শ্রমিকদের জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।”

রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, “ঝালকাঠি রুটের এক বাসে এক ছাত্রীর সঙ্গে হাফ ভাড়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সরাসরি ঝালকাঠি মালিক সমিতির কাছে বিচার চাইতে পারত। তারা তা না করে রূপাতলীতে এসে বাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছে। এতে শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “শ্রমিকরা বলছে, যতক্ষণ না বাসে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে, তারা কাজে ফিরবে না।”

মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে ঝালকাঠি রুটের একটি বাসে এক ছাত্রীর সঙ্গে শ্রমিকদের অসৌজন্য আচরণের অভিযোগে রূপাতলী বাস টার্মিনালে বিক্ষোভ ও অবরোধ করে সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা।

এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাস ভাঙচুর ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। তারা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।

প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সাড়ে তিন ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নিলেও রাতে পরিবহন শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়।

বরিশাল বিভাগের ১৬টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।