সিবিএন ডেস্ক ;

একসময় পর্যটনের নগরী হিসেবে পরিচিত কক্সবাজার এখন মাদকের করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় কক্সবাজার ও টেকনাফ দিয়ে দেদারসে প্রবেশ করছে ইয়াবাসহ নানা মাদক। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, তবে তার আগেই কক্সবাজার সৈকতে আসা পর্যটকদের টার্গেট করে বিক্রি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাদক। এসব মাদক বিক্রিতে জড়িত রয়েছে স্থানীয় দুষ্কৃতকারীদের পাশাপাশি রোহিঙ্গারা।

সম্প্রতি কক্সবাজার শহর ঘুরে দেখা গেছে, সৈকতের কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্টে সন্ধ্যার পর থেকেই মাদকের রমরমা ব্যবসা চলে। কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক ইব্রাহিম সরকার জানান, চলতি বছরে ১০ বারের বেশি কক্সবাজার ভ্রমণের সময় প্রতিবারই সৈকতে মাদক বিক্রির দৃশ্য দেখেছেন।

এই প্রতিবেদকও সরেজমিনে সৈকতে গিয়ে দেখেছেন, সন্ধ্যার পর উঠতি কিছু যুবক বার্মিজ মার্কেট ও সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের টার্গেট করে ইয়াবা বিক্রি করছে, যা “কালাই” নামে পরিচিত।

সৈকতের রাস্তায় সাত বছর ধরে রিকশা চালানো আলিম শেখ জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর সৈকতে মাদকের হাট বসে। ইয়াবার প্রতিটি পিস ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। পর্যটকরা এসব কিনে হোটেলে নিয়ে যান এবং রাতভর নেশায় মগ্ন থাকেন।

একটি পাঁচ তারকা হোটেলের নিরাপত্তাকর্মী আনসার আলী (ছদ্মনাম) জানান, পর্যটকদের ব্যাগ স্ক্যান করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে মাদক চিহ্নিত করেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। হোটেল মালিকদের অনুরোধে অনেক সময় ব্যাগে মাদক থাকলেও তা ফেরত দেওয়া হয়।

কয়েকজন হোটেল কর্মী জানান, সৈকতে কোনো আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পর মাদক বিক্রেতারা অবাধে ব্যবসা চালিয়ে যায়। যদিও মাঝে মাঝে পুলিশ অভিযান চালায়, কিন্তু আগেভাগেই খবর পেয়ে বিক্রেতারা গা ঢাকা দেয়। ফলে অভিযান কার্যকর হয় না।

বেশ কয়েকজন পর্যটক জানান, সৈকতে মাদক বিক্রির দৃশ্য দেখলেও ভয়ে কিছু বলেন না। কারণ পুলিশকে জানালে তাদের নাম-ঠিকানা লেখা হয়, যা ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি করতে পারে। ফলে তারা দেখেও না দেখার ভান করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদক ব্যবসার মূল যোগান আসছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে। রোহিঙ্গারা বিকেলে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে রাতভর সৈকতে মাদক বিক্রি করে। প্রশাসন বিষয়টি জানলেও কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, মাদক কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পের জন্য বড় হুমকি। মাদক নিয়ন্ত্রণে স্থানীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রশাসনের কঠোর অভিযান প্রয়োজন।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সিরাজুল মোস্তফা জানান, কক্সবাজারে ইয়াবার বিস্তার ব্যাপকভাবে বেড়েছে এবং ৩০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে মাদক ব্যবসায় জড়িত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত মাদক কারবারিদের ধরলেও তারা জামিনে বেরিয়ে পুনরায় ব্যবসা শুরু করে।

এই বিষয়ে কক্সবাজার জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ ও জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়দের মতে, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পকে রক্ষা করা সম্ভব। অন্যথায়, দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত পর্যটকদের আকর্ষণ হারাবে এবং মাদকের শহরে পরিণত হবে।