এরফান হোছাইন, কক্সবাজার:
মহেশখালীতে দায়েরকৃত একটি মামলা ঘিরে তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, গত ১৬ জুলাই ২০২৪ মহেশখালী বাবু দিঘীর পাড়ে ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় উপস্থিত না থেকেও ইয়াসীন আরফাত নামের এক ব্যক্তি নিজেকে ‘সমন্বয়ক’ দাবি করে আন্দোলনকারী ছাত্র, বিএনপি নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও নিরীহ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
গত ৩ মার্চ মহেশখালী থানায় দায়ের করা মামলাটিতে ১৫৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী ইয়াসীনের বিরুদ্ধে শতাধিক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মামলার বাদী ইয়াসীন আরফাতের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। তার আপন বড় মামা লেদু কালারমারছড়া ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ছোট মামা শামসুল আলম ও তারেক চেয়ারম্যানের আত্মীয়।
জানা গেছে, ইয়াসীন কক্সবাজার এলও অফিসের দালালি করতেন এবং জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজ মোরশেদের সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দৈনিক আলোকিত সকাল পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মিজবাহ ইরান অভিযোগ করেন, ইয়াসীনের কাছে তিনি কয়েক লাখ টাকা পান। টাকা চাইতে গেলে ইয়াসীন নিজেকে ‘সমন্বয়ক’ দাবি করে এবং জামায়াতের কর্মী পরিচয় দিয়ে দেনা পরিশোধে অস্বীকৃতি জানান।
মামলায় বিএনপি-জামায়াতের কর্মী, সাংবাদিক, ছাত্র আন্দোলনের নেতা, শ্রমিক দলের নেতা ও নিরীহ ব্যবসায়ীদের নাম থাকায় ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। প্রকৃত ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাফেজ মো. শাহজাহানও এই মামলায় আসামি হয়েছেন। এছাড়াও মহেশখালী শ্রমিক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল আজাদ, সাবেক ছাত্রদল নেতা ওসমান গণি, ব্যবসায়ী সুমন, যিনি ইয়াসীন থেকে টাকা পাওনাদার, দৈনিক পূর্বকোণ ও দৈনিক ভোরের দর্পণের জেলা প্রতিনিধি এবং মহেশখালী উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক এরফান হোছাইনসহ অনেকে আসামি হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ছাত্র আন্দোলনে প্রকৃত হামলাকারীদের নাম মামলায় আসেনি। হামলাকারীদের মধ্যে কালারমারছড়ার রশিদ মেম্বারের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা আরিফ, জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজ মোরশেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম চৌধুরী অন্যতম।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা এডভোকেট গোলাম নুসরাত বলেন, ‘‘মামলায় ৬০ নম্বর আসামি করা হয়েছে সুমন নামের এক ব্যবসায়ীকে, যিনি মামলার বাদীর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা পাওনা। অথচ পাওনাদারই এখন আসামি!’’ তিনি আরও জানান, ‘‘১৬ জুলাই বাবু দিঘীর পাড়ের ঘটনায় যারা উপস্থিতই ছিলেন না, তাদেরও আসামি করা হয়েছে।’’
মামলার ১১৪ নম্বর আসামি মোস্তফা কামাল আজাদ বলেন, ‘‘ইয়াসীন একজন এলও অফিসের দালাল, যিনি আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে বিভিন্ন প্রভাবশালীদের সহায়তায় ব্যবসা করে আসছেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিএনপির নেতাকর্মীদের এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।’’
এ বিষয়ে মহেশখালী থানার ওসি কাইসার হামিদ বলেন, ‘‘বিভিন্ন চাপের কারণে মামলাটি নিতে হয়েছে। তবে দ্রুত চার্জশিট দিয়ে নিরীহ ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়া হবে।’’ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা যাচাই-বাছাই না করেই মামলা গ্রহণ করেছে।
মহেশখালীর সাধারণ ছাত্র-জনতা ও ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন, মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বাদী ইয়াসীনকে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। তারা আরও জানতে চান, কার নির্দেশে এবং কাদের স্বার্থ রক্ষায় এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।