আবুল কাশেম, রামু:

পিয়েস বড়ুয়া পেশায় রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তার চালক। একজন সামান্য ড্রাইভার হলেও তার রয়েছে অদৃশ্য ক্ষমতা। যে ক্ষমতার বলে গড়ে তুলেন অঢেল সম্পদ। হয়েছেন বিপুল পরিমান অর্থের মালিকও।

ভূমি কর্মকর্তার ড্রাইভার হওয়ার সুবাদে পিয়েস বড়ুয়া নামে বেনামে অঢেল সম্পদ অর্জন করায় সর্ব মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এছাড়াও পিয়েস বসবাস করেন ৪তলা বিলাসবহুল বাড়িতে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৬ই অক্টোবর রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মেরংলোয়া এলাকায় ৩৭১৭দলিল মূলে ০.১০০০ একর জমি ক্রয় করেন পিয়েস বড়ুয়া। যে জমির বাজার পরিমাণ মূল্য কয়েক কোটি টাকা। পিয়েস সামান্য বেতনের শ্রমিক হলেও কোটি টাকা হার মানে প্রতিনিয়ত তার কাছে।

তথ্য অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, পিয়েস সরকারী জমি আত্মসাৎ করার জন্য ড্রাইভার থেকে রুপ ধারন করে ব্যবসায়ী হিসেবে। এমন এক সময় সে নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে হিমছড়ি বাজারে লিজ নিয়ে নেন সরকারী বরাদ্দকৃত দুইটি দোকান। যেখানে একটি দোকান তার নামে হলেও অপর দোকানটির লিজ নাম অন্তর্ভুক্ত করেন তার ছোট বোন রুমা বড়ুয়ার নামে। শুধু তাই নয, রামুর রশিদ নগর এলাকার স্বপ্নতরী পার্কেও পিয়েস এর নামে বরাদ্ধ রয়েছে একটি দোকান।

এদিকে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মধ্যম মেরংলোয়া এলাকার জিল্লুর রহমান বলেন, ২০১১সালে রামুর ইউএনও ছাইদুল হক এর চাকরীকালীন সময়ে উত্থান হয় পিয়েস বড়ুয়ার। সে সময়ে তৎকালীন এসিল্যান্ডের বদলি জনিত কারনে ভারপ্রাপ্ত এসিল্যান্ডের দ্বায়িত্বে ছিলেন ছাইদুল হক। সেই সময়ে কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক চালু হওয়ার সুবাদে হিমছড়ি, পেচারদ্বীপ মৌজার জমির মূল্য বৃদ্ধি পায়। ঐএলাকার খাস জমি খতিয়ান ভুক্ত করার দালালিতে লিপ্ত হয় পিয়েস। এসময় ইউএনও ছাইদুল হক যে সব খাস জমি খতিয়ান ভুক্ত করে অবৈধ অর্থ হাতিয়েছেন ঐটাকার কন্টাকের বিশ্বস্ত সোর্স হিসেবে কাজ করেছেন পিয়েস। এছাড়াও রামু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের খাস জমি খতিয়ান ভুক্ত করে দেওয়ার কন্ট্রাক্ট এর দালালি করেও হাতিয়ে নেয় শত কোটি টাকা। তৎকালীন সময়ে ছাইদুল হক এর এসব অবৈধ উপার্জনের ক্যাশিয়ার ছিলেন এই পিয়েস বড়ুয়া।

এদিকে ইউএনও ছাইদুল অনত্রে বদলি হলে পিয়েস বড়ুয়ার নানা অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হয়। একপর্যায়ে চাকরীচ্যুত হয় পিয়েস। ২০১৮ সালে পুণঃরায় এসিল্যান্ডদের জন্য গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হলে কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতায় আবারও এসিল্যান্ডের ড্রাইভার হয়ে ফিরে আসেন পিয়েস। এরপর সে রামু উপজেলা ভূমি অফিস সম্পর্কিত একচ্ছত্র অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন।

এলাকার পাহাড়সহ অবৈধ ব্যবসায়ীদের কাছে এসিল্যান্ডের সরকারী অভিযান এ যাওয়ার তথ্য পাচারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরোদ্ধে। অভিযানে বের হওয়ার পুর্বে পিকআপ মালিকদের খবর দিয়ে সরে যেতে বলেন পিয়েস বড়ুয়া। যা এলাকায় এখন ওপেন সিক্রেট।

এসব অভিযোগের সত্যতা জানতে পিয়েস বড়ুয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে অসুস্থ দাবি করে বলেন, আমি স্থানীয় হওয়ায় চোরাকারবারিরা আমাকে বিভিন্ন সময় অন্যায় আবদার করেন। আমি তাদের সহযোগিতা না করাই তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

এ বিষয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক
তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে রামুর সচেতন মহল একজন ক্ষুদ্র উপজেলা ভূমি কর্তার ড্রাইভারের এতো অবৈধ সম্পদ অর্জনের গোপন সুত্র গুলি তদন্ত পুর্বক খুঁজে বের করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানান।