আহমদ বিলাল খান

পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় সম্প্রতি যে বৈষম্যমূলক বাজেট বরাদ্দ ঘোষণা করেছে, তা বাতিল করে পাহাড়ি-বাঙালি সকল জাতিগোষ্ঠীকে জনসংখ্যা অনুপাতে সমান বরাদ্দের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটি।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকালে পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক জমির উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বৈষম্যমূলক বরাদ্দের চিত্র

পিসিসিপি’র অভিযোগ অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত সাম্প্রতিক বাজেট বরাদ্দ বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয় যে এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, পক্ষপাতদুষ্ট এবং এক বিশেষ জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য কেন্দ্রীভূত। রাষ্ট্রের সম্পদ কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য নয়, বরং সকল নাগরিকের সমান অধিকার থাকা উচিত। অথচ সরকার পাহাড়ি অঞ্চলের জনসংখ্যার প্রকৃত চিত্র ও প্রয়োজন উপেক্ষা করে একপাক্ষিক বরাদ্দ প্রদান করেছে, যা সংবিধানের সাম্যের নীতির লঙ্ঘন।

পিসিসিপি’র বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, তিন পার্বত্য জেলায় বরাদ্দের বিভাজন নিম্নরূপ:

  • খাগড়াছড়ি: ১৯৫ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ ৩ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা (৭১.০২%)
  • রাঙামাটি: ৪৪ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার টাকা (২৭.৭৭%)
  • বান্দরবান: মাত্র ৩ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা (১.২০%)

এই পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে বান্দরবানকে পরিকল্পিতভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। এটি সরাসরি বৈষম্যের পরিচায়ক।

জাতিগত বৈষম্যের প্রকট উদাহরণ

রাঙামাটির বরাদ্দ বিশ্লেষণে দেখা যায়:

  • চাকমা সম্প্রদায় পেয়েছে ৮৬.৫০% বরাদ্দ
  • বাঙালিরা পেয়েছে মাত্র ৬.৯৫%
  • মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের বরাদ্দ আরও নগণ্য

খাগড়াছড়ির বরাদ্দেও দেখা গেছে, চাকমারা পেয়েছে ৭৩.০৯%, যেখানে বাঙালি, মারমা, ত্রিপুরা, সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বরাদ্দ তুলনামূলকভাবে নগণ্য।

এছাড়াও, একই ব্যক্তি একাধিকবার বরাদ্দ পেয়েছে, যা স্পষ্ট অনিয়মের বহিঃপ্রকাশ। যেমন:

  • রাঙামাটির রনজ্যোতি চাকমা দু’বার বরাদ্দ পেয়েছে (৩+৩) মোট ৬ লাখ টাকা
  • বিনৌটি চাকমা ১২টি গ্রুপের নামে ২৫ লাখ টাকা পেয়েছে।
  • খাগড়াছড়ির ত্রিনা চাকমা ১২টি গ্রুপের নামে ২৫ লাখ টাকা পেয়েছেন।

অন্যদিকে, বাঙালি, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর অনেকেই কোনো বরাদ্দ পাননি। এ ধরনের পক্ষপাতমূলক বরাদ্দ সংবিধানের ১৯(১) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন, যেখানে বলা হয়েছে— “রাষ্ট্র সমাজের সব নাগরিকের মধ্যে সমতা বিধান করবে।”

পিসিসিপি’র দাবি

বিবৃতিতে পিসিসিপি নিম্নলিখিত দাবিগুলো উত্থাপন করেছে:

১. এই বৈষম্যমূলক সাম্প্রদায়িক বরাদ্দ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ২. বান্দরবানসহ সকল জেলার জন্য ন্যায্য বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। ৩. বাঙালি, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, সাঁওতালসহ সকল জনগোষ্ঠীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ৪. একই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে একাধিকবার বরাদ্দ দেওয়ার অনৈতিক প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। ৫. জনসংখ্যার অনুপাতে ও প্রকৃত প্রয়োজনের ভিত্তিতে বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।

সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি

বিবৃতিতে পিসিসিপি সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর সম্পত্তি নয়, এটি সকল জাতিগোষ্ঠীর আবাসভূমি। বরাদ্দের নামে কোনো পক্ষপাতমূলক আচরণ ছাত্র সমাজ মেনে নেবে না। যদি এই বৈষম্যমূলক বাজেট অবিলম্বে সংশোধন করা না হয়, তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। ইতিহাস সাক্ষী, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ কখনও নীরব ছিল না, এখনো থাকবে না।

বিবৃতিতে পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটি সরকারের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে: ন্যায়বিচার ও সাম্যের দাবিতে পাহাড়ের জনগণ রাস্তায় নামতে প্রস্তুত! এই বরাদ্দের মাধ্যমে পার্বত্য মন্ত্রণালয় প্রমাণ করেছে যে, পাহাড়ে চাকমা আধিপত্যবাদ বিদ্যমান, যার ফলে চাকমা ব্যতীত পাহাড়ের অন্যান্য ১২টি নৃগোষ্ঠী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই চাকমা-প্রধান বরাদ্দ বাতিল করে পাহাড়ি-বাঙালি সকল জাতিগোষ্ঠীকে সমানভাবে বরাদ্দ দিতে হবে, অন্যথায় পার্বত্য উপদেষ্টা সু-প্রদীপ চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে।