মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
চন্দ্র উদয় সাপেক্ষে আগামীকাল সোমবার (৩১ মার্চ) অথবা পরশু মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) ইসলাম ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব ঈদুল ফিতর পালিত হবে। কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে গত ২বছরের ন্যায় এবারও ঈদুল ফিতরের জামাত হবে পর পর ২টি। প্রথম জামাত হবে সকাল ৮ টায়। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ (বর্তমানে মডেল জামে মসজিদ) এর সুদীর্ঘ ৩৪ বছরের খতিব আল্লামা মাহমুদুল হক। দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল ৯ টায়। দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন কক্সবাজার মডেল জামে মসজিদের ইমাম ও কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি সোলাইমান কাসেমী।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন এর সভাপতিত্বে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নিজাম উদ্দিন আহমেদ এর সঞ্চালনায় গত ১৯ মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক প্রস্তুতি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জেলার প্রধান ঈদুল ফিতরের জামাতের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। মুসল্লীদের বরনে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান। সম্মানিত মুসল্লীরা সাবলীল ও সুন্দরভাবে যাতে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করতে পারেন, সেজন্য ২টি জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি জামাতে ৮ হাজারের বেশী মুসল্লী নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে প্যান্ডেলে ত্রিপল লাগানো সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ৫টি গেইট দিয়ে মুসল্লীরা প্রবেশ করতে পারবেন। ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষনিক নজরদারিতে থাকবে। কোন মুসল্লী অসুস্থ হলে যাতে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া যায়, সেজন্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে। স্টেডিয়াম, স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশের রোড, হাসপাতাল সড়ক ও জেলা পরিষদ মোড়ে আর্চওয়ে অর্থাৎ নিরাপত্তা গেইট বসানো হবে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের উদ্যোগে ২ স্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৩শত মুসল্লী যাতে একসাথে অজু করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কক্সবাজার পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ময়দানে মুসল্লীদের জন্য পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। অত্যাধিক তাপমাত্রার কথা চিন্তা করে প্যান্ডেলে ১১০ টির বেশি ফ্যান লাগানো হয়েছে। তাছাড়া ১৫টি স্ট্যান্ড ফ্যান ও ১৫টি এয়ারকুলারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৫টি গেইট থেকে মুসল্লীরা ময়দানে প্রবেশের সময় প্রত্যেককে আতর, ৫০০ মি:লি: মিনারেল পানি, খেজুর এবং টিস্যু উপহার দেওয়া হবে। ময়দানে মনিটরিং সেল সার্বক্ষনিক কাজ করবে। শহরে ১৫ টি ব্যানার সহ তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।
ঈদগাহে ময়দানে প্যান্ডেল নির্মাণ ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজের দায়িত্ব প্রাপ্ত ইভেন্ট প্লাস এর সত্বাধিকারী মোরশেদ আলম জানান, ২০ থেকে ২২ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন বিশাল প্যান্ডেলের আয়তন প্রায় ৬০ হাজার বর্গফুট। প্যান্ডেল নির্মাণ সহ আনুষঙ্গিক কাজ ইতিমধ্যে শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ৩০ মার্চ শাওয়াল মাসের চাঁদ উদিত হলে অবশিষ্ট কাজ কয়েকঘন্টার মধ্যে শেষ করা হবে। আর ৩১ মার্চ চাঁদ উদিত হওয়ার আগেই ময়দানের সকল কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে মোরশেদ আলম জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও মুসল্লীদের আরো বেশী সেবাদানের কথা মাথায় রেখে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছর সম্মানিত মুসল্লীরা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ে যাতে অধিকতর বেশী আনন্দ উপভোগ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সেজন্য ময়দানে বাড়তি কিছু নান্দনিক আয়োজন করা হচ্ছে। তার মধ্যে, ছবি উঠানোর জন্য ২ টি ফটোবুথ, অত্যাধুনিক একটি ডিজাইন প্যান্ডেল, আধুনিক ও মনোরম গেইট নির্মান করা হয়েছে। যা মুসল্লীদের উৎসবের আমেজ বৃদ্ধি ও বিনোদনে ভূমিকা রাখবে বলে জানান, ইভেন্ট প্লাস এর সত্বাধিকারী মোরশেদ আলম। তিনি আরো জানান, পুরো ঈদগাহ ময়দান, প্যান্ডেল ও আশেপাশের এলাকাকে মনোরম সাজে সজ্জিত করা হচ্ছে।
কক্সবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা গেছে, ঈদগাহ ময়দানে সার্ক্ষনিক নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজ, ঈদুল ফিতর ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক ও এডিএম ইমরান হোসাইন সজীব, কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জে.এম শাখার সহকারী কমিশনার, কক্সবাজার পৌরসভার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানের প্রস্তুতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তাঁরা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাত এর সার্বিক প্রস্ততি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এদিকে, ঈদুল ফিতর উদযাপন বিষয়ক প্রস্তুতি সভায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ইমরান হোসাইন সজীবকে আহবায়ক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট ঈদুল ফিতরের জামাত সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক অথবা তাঁর প্রতিনিধি, জেলা পুলিশের সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মানবেন্দ্র সরকার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জে.এম শাখার সহকারী কমিশনার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক ফাহমিদা বেগম, জেলা তথ্য অফিসার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবর রহমান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক। ব্যবস্থাপনা কমিটি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিতব্য ঈদুল ফিতরের জামাতের সার্বিক প্রস্তুতি মনিটরিং করছেন বলে জানিয়েছেন।