সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়নে সরকারের সহযোগিতায় দেশি-বিদেশি কোম্পানির নতুন ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণের জীবন-জীবিকা, সামাজিক ও মানবিক মর্যাদা, অধিকার, স্বাধীনতা, ঐতিহ্যবাহী জনপদ, বাস্তুভিটা, ফসলি জমি, জীববৈচিত্র্য, নদী, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা রক্ষায় “ধলঘাটা রক্ষা আন্দোলন”-এর উদ্যোগে গত ১৮ এপ্রিল ২০২৫ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ধলঘাটা রক্ষা আন্দোলন প্ল্যাটফর্মের সদস্য সচিব এস্তাখাব উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আন্দোলনের প্রধান সংগঠক আব্দুল মান্নান রানা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গার্ডিয়ান কাউন্সিলের সদস্য হুজাইফুল ইয়াসরাব।
প্রধান আলোচক হিসেবে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে অনুমোদিত সকল উন্নয়ন প্রকল্প পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। জনগণের মতামত উপেক্ষা করে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা চলবে না। ধলঘাটা মৌজার ভূমিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বন্দরের নাম হতে হবে ‘ধলঘাটা বন্দর’।”
সামাজিক ব্যক্তিত্ব শাহিনুল ইসলাম শাহিন বলেন, “সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা থেকে অবিলম্বে সরে আসতে হবে। অন্যথায় স্থানীয় জনগণ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।”
সমাজসেবক ও সাবেক ছাত্রনেতা সাইদুল ইসলাম বলেন, “জীবন-জীবিকা ও পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নে আমরা কোনোভাবেই জমি অধিগ্রহণ মেনে নেব না। স্থানীয় জনগণের মতামত উপেক্ষা করে কোনো উন্নয়ন জনগণের সমর্থন পেতে পারে না।”
সমাজসেবক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমাদের শরীরে শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত আমরা আমাদের মাতৃভূমি ও জীবিকার উৎস হস্তান্তর করব না। এটি আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন।”
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি আবদুস সালাম বলেন, “এই অঞ্চলে বন্দর নির্মাণের নামে ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা মানবিক ও সামাজিক অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলেছে।”
অধ্যাপক শওকত আলী অভিযোগ করে বলেন, “জেনারেল ইলেকট্রনিক্স, মিতসুবিশি ও সামিট গ্রুপ গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এসব কোম্পানিকে জনসম্মুখে বয়কট করতে হবে।”
সিইএইচআরডিএফ প্রতিনিধি খুবাইব বিন ইহসান বলেন, “টেকসই বেড়িবাঁধ এখন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দাবি। দশ বছর ধরে উন্নয়ন প্রকল্প চালু থাকলেও স্থানীয়দের জন্য কোনো বাস্তব উন্নয়ন হয়নি।”
আবদুল মান্নান রানা স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “ধলঘাটাবাসী বহু জমি ইতিমধ্যে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের জন্য ত্যাগ করেছে। এখন আবার নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ শুধুই কোম্পানির স্বার্থ পূরণের জন্য।”
সভাপতির বক্তব্যে হুজাইফুল ইয়াসরাব বলেন, “এই মানববন্ধন একটি প্রতিবাদ নয়, বরং অধিকার আদায়ের গর্জন। ধলঘাটার এক ইঞ্চি জমিও আর অধিগ্রহণে দেওয়া হবে না। ধলঘাটার জমিতে বন্দর হলে সেটার নাম হবে ‘ধলঘাটা সমুদ্রবন্দর’, মাতারবাড়ি নয়।”
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন—সোহেল রানা, আবু বক্কর ছিদ্দিক, সুজন মোহাম্মদ শাকিল, মোহাইমিনুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম সানিক, রায়হান উদ্দিন, কাজেম উদ্দিন, বোরহান উদ্দিন, দিদারুল আবসার, মোহাম্মদ সোলাইমান প্রমুখ।
সমাবেশে স্থানীয় নারী-পুরুষ, কিশোর-তরুণ নেতৃত্ব, পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।