আব্দুল আলীম নোবেল
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে নাকের ডগায় সরকারী জমি দখল হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগীয় নামীয় খতিয়াভুক্ত এইসব জমি বছরের বছর অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে ভোগ দখল আসছে একটি চিহ্নিত চক্র। দখলবাজ চক্রের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকের পাশাপাশি বিশেষ করে জেলা প্রশাসনের কর্মচারিবাই জড়িত এমন অভিযোগ ওঠেছে। নির্বিঘেœ তাদের সমিতির নামে কার্যালয়,রেষ্ট হাউজ(ক্লাব),দোকান ঘর তৈরি করে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসলেও দেখেও দেখছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
খোদ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন প্রায় ১ একর সরকারী জমি দখল থাকার বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে এলাকার সচেতন নাগরীকের মাঝে। গণপূর্ত বিভাগের তরফ থেকে এইসব জমি উচ্ছেদের জন্য একাধিক চিঠি দেয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সর্বশেষ গেল ৩ মার্চ কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.নুরুল আমিন মিয়া স্বাক্ষরিত একটি আবেদন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের মামলা রুজু পূর্বক ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ চেয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখেও এই পর্যন্ত কোন কাজের কাজ হয়নি। এই বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক(ভারপ্রাপ্ত) কাজী আব্দর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি কিছু জানে না বলে জানান,তবে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। জেলা উন্নয়ন সস্ময়ক সভায় আলোচনা হবে।
এই জমি গুলো দখলদারের কাছ থেকে উদ্ধার করে উপযুক্ত ব্যবহারের জন্য মত দিয়েছেন সুশিল সমাজের নেতৃবৃন্দরা। এইসব জমির সুষ্টু ব্যবহার না হওয়ায় যেমন সরকারের ক্ষতি হচ্ছে তেমনি জেলার প্রাণকেন্দ্র সংলগ্ন এমন অবৈধ স্থাপনা থাকায় চরম সৌন্দয্যহানি হচ্ছে। এছাড়াও রাতের আধাঁরে বিভিন্ন খারাফ লোকের আনাগোনা বেড়ে যায় এখানে। এ জমিতে গাড়ির রাখার মাঠ,ফুলের বাগান ও সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ি স্থাপনা তৈরি করা যেতে পারে বলে এমন মত দিয়েছেন অনেকে। ওই জমি মন্ত্রী পরিষদ কর্তৃক গঠিত ট্রাক্সফোর্সের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করার এমন নিয়ম থাকলেও এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না এই নিয়ম, মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।
জানা যায়,কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন বেশ কিছু জমির মালিক গণপূর্ত বিভাগীয় নামীয় খতিয়ানভুক্ত জমি। এই বিভাগ জমির মালিক হলেও জবর দখল করে রেখেছেন অন্যরা। অনেকটা অসহায় হয়ে পড়ছে এই কর্তৃপক্ষ।
দখলে রয়েছে যারা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পশ্চিম ও উত্তর পাশের জেলা তৃতীয় শ্রেনী কালেক্টরিক ও কর্মচারি কার্যালয়,রেষ্ট হাউজ(ক্লাব) ছাড়াও রয়েছে সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারি সমন্ময় কল্যাণ পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়,সরকারী গাড়ি চালক কল্যাণ সমিতির জেলা কার্যালয় ও জেলা জজ আদালত ভবন, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ভবন (বর্তমানে পরিত্যক্ত)। যে ভবনটি ১৯৮১ সালে তৎকালিন চট্টগ্রাম উন্নয়ন সম্ময়কারী(বর্তমানে যুদ্ধঅপরাধে অভিযুক্ত) মোহাম্মদ রশিদ এমপি’র উদ্ধোধন করা ভনটিও রয়েছে।
এবিষয়ে কক্সবাজার জেলা মুক্তিযুদ্ধা ডেপুটি কমন্ডার মোহাম্মদ শাহ জাহান জানান, জেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় একজন যুদ্ধঅপরাধীর উদ্ভোধনকৃত একটি স্থাপনা ও নেইমপ্লেইট থাকা সত্যি দূঃখজনক। একই সাথে জেলা প্রশাসনের সামনে এইসব অবৈধ স্থপনা উচ্ছেদ করা খুবই জরুরী। এই জমি উদ্ধার করে জনসাধারণ বা সরকারী কাজের সুষ্টু ব্যবহার করা হোক এমনটি দাবী রইল।
অন্যদিকে জবর দখলে রেখেছে জেলা আইনজীবী সমিতি,আরো কিছু দখলে রেখেছে জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতি, জেলা ব্যাণিজ্যিক মুদ্রাক্ষরিক সমিতি, পৌরসভার সাথে লাগুয়া রুহি ও সোনালী ফটোষ্ট্যাটের দোকান। কিছু দিন আগেও কালেক্টরেট সহকারী সমিতির নামে ক্লাব নামে টিনসেট ঘর তৈরি করেছে। অপর দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পশ্চিম পাশে জেলা বিএনপি কার্যালয় সংলগ্ন সিটি ভাতঘর ও পাশের আরো দুইটি দোকান রয়েছে। সূত্রে জানা যায়, সিটি ভাতঘর থেকে সেলামি হিসাবে নিয়েছে এই সমিতি ৭ লাখ টাকা ওই দোকান থেকে প্রতি মাসে ভাড়া হিসাবে নিচ্ছে ৭ হাজার টাকা। একইভাবে পাশের দোকান থেকেও বেশ কিছু টাকা পয়সা নিয়ে ফায়দা লুটছে এরা। সমিতির নামে নিলেও সুবিধা নিচ্ছে সমিতিরই কয়েকজন নেতা। এই বিষয়ে কক্সবাজার জেলা কালেক্টরেট সহকারী সমিতির সভাপতি স্বপন কান্তি পালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,১৯৮৪ সালের আগে থেকে সমিতির এই জমি গুলো ভোগ দখল করে আসছেন। সমিতির নামে এই জমি বন্দোবস্তির জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাগেছে তাদের এই প্রস্তাবে অপত্তি দিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
এছড়াও জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পশ্চিম পাশ থেকে শুরু করে উত্তর দিকে জেলা জজ আদালত গেইট পর্যন্ত ৯টি দোকান ঘর নির্মাণ করে অবৈধ সুবিধা নিচ্ছে কক্সবাজার জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারি সমিতির সদস্যরা। সেখানেও রয়েছে তাদের আরেকটি কার্যালয়। প্রতি দোকানে কয়েক লাখ টাকা করে সেলামি প্রতিমাসে ভাড়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বছরের পর বছর। এই গুলোর উচ্ছেদের জন্য একাধিক প্রক্রিয়া হলে রহন্যজনক কারণে ব্যর্থ হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। জেলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ন কেন্দ্র জেলা পুলিশ সুপার কার্যলয়ের সামনে এইসব অবৈধ স্থাপনা নিয়েও অসস্থিতে রয়েছে তারা। কক্সবাজার জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারি সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে একাধিক বার চেষ্টা করে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারি নামে বহু বির্তিকিত একান্ন একর থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় সরকারী জমি দখলের গুরুতর অভিযোগ কারো কাছে অজনা নয়। এই কর্মচারিরা সরকারী সুবিধা ব্যবহার করে বার বার জমি দখলের অভিযোগে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।
পরিকল্পিত কক্সবাজার আন্দোলন সমন্ময়ক(উপদেষ্টা)ব্যারিষ্টার ফারজানা রশিদ জানান, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে,এইসব জমিতে পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী রাখছি।
এই বিষয়ে কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.নুরুল আমিন মিয়া জানান, এইসব জমি উদ্ধারের জন্য একাধিক বার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের কাছে। পরিকল্পিনা ভিত্তিক সুষ্টু ব্যবহারের জন্য জেলা প্রশাসনসহ ও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করছি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।