তুষার তুহিন, বাংলানিউজ:

কক্সবাজার সদর থানার এসআই মানস বড়ুয়ার বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ দায়ের করেছেন এক নারী। ওই নারীর ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে রিমান্ডের নামে এসআই মানস তার শরীরে বৈদ্যুতিক শক দিয়েছে বলেও দাবি করেছেন নির্যাতিতা নারী।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারসহ পুলিশ সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্যাতনের শিকার ওই নারী। এছাড়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকেও লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করেছেন তিনি।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২ মার্চ ওই নারী ও তার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় আটক করে পুলিশ। ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ ঢাকার পশ্চিম উত্তরার কামালপাড়ার সিরাজুল হকের স্ত্রী সীমা আক্তারের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাদের দুজনকে ইয়াবাসহ আটক দেখায় পুলিশ। এরপর তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। এর দশদিন পর ওই নারীকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে এসআই মানস তার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে এসআই মানস তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।

এ ব্যাপারে নির্যাতনের শিকার এই নারী বলেন, এসআই মানসের নির্যাতনের বর্ণনা দেওয়ার ভাষা জানা নেই। পুলিশ যে কতটা পাষণ্ড ও বর্বর হতে পারে তার উদাহারণ মানস। আমি এখনো মানসের নির্যাতনের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছি।

তিনি জানান, আটকের দিন পুলিশ তার বাসা থেকে ব্যাংক চেক, স্বর্ণালংকার ও একটি প্রাইভেট কার নিয়ে যায়। বর্তমানে সেসব জিনিসের হদিসও জানা নেই তার। কারাগার থেকে বের হয়ে নির্যাতনের বিরুদ্ধে সঠিক বিচার পেতে সহায়তার জন্য ঝাউতলা নারী কল্যাণ সমিতিতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে পুলিশ আবারও তার ওপর হামলা চালায়। ওইসময় নুনিয়ারছড়া এলাকায় ইট দিয়ে পিটিয়ে তার দেবরের পা ভেঙ্গে দেয় এসআই মানস।

এদিকে ঝাউতলা নারী কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ফাতেমা আনকিজ ডেজী জানান, নির্যাতিত নারীকে নিয়ে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন। এছাড়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ চৌধুরীর সহযোগিতায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ডেজী বলেন, ওই নারী শরীরের সর্বত্র ক্ষতের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন। তাই তার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে নারী কল্যাণ সমিতি প্রয়োজনে রাস্তায় নামবে।

কক্সবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, এক নারী এসআই মানসের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন বলে জেলা পরিষদে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। তার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরাজুল হক টুটুল বলেন, এসআই মানসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন। সমস্ত প্রমাণাদি নিয়ে ২১ এপ্রিল পুলিশ সুপার কার্যালয়ে দেখা করার জন্য নির্যাতিত ওই নারীকে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, যদি ওই নারীর দায়ের করা অভিযোগ সত্য হয়ে থাকে তবে বিষয়টি ন্যক্কারজনক। ওই নারী যদি নির্যাতনের কোন প্রমাণ দিতে পারেন তবে এসআই মানসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।