ডেস্ক নিউজ:
সক্রিয় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তালিকায় ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় শহর হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরপরই ভুয়া আইডি বন্ধ হওয়ার দিক দিয়েও এগিয়ে গেল এই শহর। গত দু’দিন ধরে দেশে অসংখ্য ফেসবুক ব্যবহারকারীর আইডি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিষয়টি এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভুয়া আইডি বন্ধ ও ভুয়া লাইক কমানোর উদ্যোগেরই অংশ এটি।
জানা গেছে, ভুয়া আইডি বন্ধ করতে গিয়ে অনেকের আসল আইডিও বন্ধ হয়ে গেছে! রবিবার (১৬ এপ্রিল) সারাদিনে অন্তত তিনজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের আইডি ব্লকড হয়েছে। অথচ তাদের কেউই ছদ্মনাম ব্যবহার করেননি। অবশ্য তারা আইডি উদ্ধারের জন্য ফেসবুকের দেওয়া গাইডলাইন অনুসরণ করেছেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম রবিবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি ফেসবুকের একেবারে নিজস্ব সিদ্ধান্ত। সারাবিশ্বে তারা ভুয়া আইডি বা পেজ বন্ধ করতে অভিযান চালাচ্ছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অনুরোধে সাড়া দিয়েই ফেসবুক ভুয়া আইডি বা পেজগুলোর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিচ্ছে, মোটেও বিষয়টি এমন নয়। এটি তাদের শুদ্ধিকরণ অভিযানের অংশ। তবে আমরা যখন তাদের কাছে বিষয়গুলো নিয়ে অনুরোধ করেছিলাম, তখন তারা ক্লু দিয়েছিল যে তারা শুদ্ধিকরণ অভিযান চালাবে।’
তারানা হালিম আরও বলেন, ‘আমরা কেবল ভিভিআইপিদের ফেক আইডি বন্ধের জন্য ফেসবুকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। এই সংখ্যা মাত্র ৬০টি। এই আইডিগুলোর বিপরীতে আমরা ইউআরএল পাঠিয়েছি। ফেসবুক সেগুলো ভেরিফায়েড করে দেবে। তাহলে ওইসব আইডির বিপরীতে যেসব ভুয়া আইডি আছে সেগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে।’
টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, ফেসবুক একই সঙ্গে বিশ্বের চারটি দেশে শুদ্ধিকরণ অভিযান শুরু করেছে। বাংলাদেশ ছাড়া বাকি তিনটি দেশ হলো ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান। মূলত যেসব দেশের আইডিধারীদের মধ্যে অথেন্টিসিটির অভাব রয়েছে, সেসব দেশে ফেসবুক আগে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ফেসবুক এ অভিযান চালাবে বলে আমরা জেনেছি।’
সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারানা হালিম জানিয়েছিলেন, গত মাসে তিনি সিঙ্গাপুরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এমনকি তাদের আলোচনা ফলপ্রসূও হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। তারা বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন বলে আমাদের প্রতিশ্রতি দিয়েছেন।’ তিনি আরও জানিয়েছিলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ফেসবুক বাংলাদেশের ডাকে দ্রুত সাড়া দেবে এবং ভুয়া আইডি ও পেজ বন্ধে তারা পদক্ষেপ নেবে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের সংসদ সদস্যদের ফেসবুক পেজ ভেরিফায়েড করে দেবে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, ‘শিগগিরই সংসদ সদস্যদের ইউআরএল ফেসবুকে পাঠানো হবে। পেজগুলো ভেরিফায়েড হলে ভুয়া আইডিগুলো বন্ধ করা সহজ হবে। আমাদের হাতে যেসব ভুয়া আইডি বা পেজের তালিকা আছে, সেগুলোও পাঠানো হবে ফেসবুকে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাজ শুরু হয়ে গেছে। আলামত দেখে তাই মনে হচ্ছে। যদিও এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক অপারেটর্স গ্রুপের (বিডিনগ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফেসবুক এটা নিজ উদ্যোগে করছে নাকি বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে করছে তা পরিষ্কার নয়।’
কারণ হিসেবে বিডিনগ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, ‘ভুয়া লাইক কেনাবেচার জন্য ঢাকা এমনিতেই বিখ্যাত। এই ঢাকাকেই দ্বিতীয় অবস্থানে দেখিয়ে পরে আবার ভুয়া লাইকের জন্য পরে শীর্ষে দেখাবে কিনা, তা নিয়ে আমি সন্দিহান।’ তার মতে, “মানুষের ফেসবুক আইডি বন্ধের যে খবর আসছে, তাতে মনে হচ্ছে ভুয়া লাইকের বিষয়টিও সামনে চলে আসবে এবার। বিভিন্ন পেজে লাইক কমে যাওয়াকে ফেসবুকের কৌশল হিসেবেও দেখছেন তিনি। এভাবে লাইক কমে গেলে চূড়ান্ত পর্যায়ে যা দাঁড়াবে, তা তো আরও ভয়ঙ্কর। তিনি বলেন, ‘‘এতে করে না আবার আমরাই ‘চিহ্নিত’ হয়ে যাই!”
ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহারকারী শহরের তালিকায় ঢাকার দ্বিতীয় অবস্থানে যাওয়ার বিষয়টিকেও ভালো চোখে দেখছেন না সুমন আহমেদ সাবির। তিনি মনে করেন, ‘ব্যাংকক যে শীর্ষ শহর (৩ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী) নির্বাচিত হয়েছে, সেখানেও গলদ আছে। কোনও অবস্থাতেই ব্যাংককে ৩ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী থাকতে পারে না। যেমন নেই ঢাকাতেও (২ কোটি ২০ লাখের বেশি)।’
এদিকে সমস্যায় পড়তে পারেন এমন ভেবে দুই-একজন তাদের ছদ্মনাম (ছদ্মনামকে ভুয়া আইডি ভাবতে পারে ফেসবুক এ আশঙ্কায়) পরিবর্তন করে মূল নামে ফেসবুকে ফিরে এসে স্ট্যাটাসও দিচ্ছেন। একজন স্ট্যাটাস দিয়েছেন— ‘মোবাইল ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে ফেসবুকে লগইন করে দেখুন, যেসব পেজে লাইক দিয়ে রেখেছিলেন তা আন-লাইক হয়ে আছে।’
রবিবার দিনভর খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অসংখ্য ফেসবুক পেজের লাইকও কমে গেছে। ওইসব ফেসবুক পেজ ব্যবস্থাপনা করেন এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, গত দু’দিনে অন্তত প্রতিটি পেজের ৩ শতাংশ লাইক কমেছে। এমন কয়েকটি পেজ হলো বোম্বে সুইটস, আড়ং ডেইরি, সাইফুরস অ্যাডুকেশন। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট খাতের অনেকেই বলছেন, এবার ফেসবুকের নজরদারিতে পড়েছে ঢাকা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।