ডেস্ক নিউজ:
সিলেটে ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও গ্রামের বাসিন্দা লন্ডন প্রবাসী নবীনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রের ছবি দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নড়চড়ে বসেছেন। প্রায় দুই বছর আগে নবীনসহ তার পরিবারের ১২ সদস্য নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে এরইমধ্যে পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের জিজ্ঞাসা করেছে। এছাড়া পুলিশ তাদের পরিবারের সব সদস্যদের ছবিও সংগ্রহ করেছে।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) নবীনের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার চাচা আব্দুল লতিফ লুলু মিয়া ও চাচাতো ভাই সাব্বির হোসেনের সঙ্গে।
অস্ত্র হাতে নবীনের ছবিটি যে তার নিখোঁজ ভাতিজা, তা নিশ্চিত করেছেন চাচা আব্দুল লতিফ লুলু মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই-ভাতিজা ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে লন্ডন থেকে দেশে আসে। এক মাস দেশে থাকার পর তারা আবারও লন্ডনে ফিরে যাবে বলে আমাকে জানায়। তারা সেখানে গেছে কিনা তা জানার জন্য লন্ডনে আমার অন্য আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাকে জানিয়েছে, তুরস্কে যাওয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। এরপর আর কোনও খবর নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর আমরা ব্রিটিশ পুলিশসহ আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে খবর পেয়েছি, আইএস জঙ্গিদের সহায়তায় পরিবারের ১২জন সদস্যসহ নবীন সিরিয়ায় চলে গেছে। সেদেশে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে নবীনের ছোট বোন রাজিয়া বেগম। দেশে আসার কয়েক মাস আগে লন্ডন থেকে রাজিয়াসহ তার তিন বান্ধবী লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর হয়ে তুরস্কে যেতে চাইলে সেখানকার পুলিশ তাদের যেতে দেয়নি। তাদের কোনও খোঁজখবর আমরা কেউ জানি না। তারা জীবিত না মৃত তাও জানি না।’
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেয় নবীনদের পরিবারের ১২ সদস্য। তারা প্রায় দুই বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছে। নবীনসহ পরিবারের নিখোঁজ অন্য সদস্যরা হলো- নবীনের বাবা আব্দুল মন্নান, মা মিনারা বেগম, বড়ভাই সালেক হোসেন, মারিয়া বেগম, পালিয়ে যাওয়ার মূল পরিকল্পনাকারী রাজিয়া বেগম, তৌফিক হোসেন, আকিফ হোসেন। নিখোঁজের তালিকায় আরও আছে মান্নানের ছোট ভাই আবুল কাশেম। সে মারিয়া বেগমের স্বামী। এছাড়া তাদের মেয়ে ফাতিমা বেগম, আব্দুল মান্নানের ছেলে সালেকের স্ত্রী রওশন আরা বেগম ও তাদের এক কন্যা সন্তানও নিখোঁজ রয়েছে।
অস্ত্র হাতে নবীন হোসেনের ছবি লন্ডন প্রবাসী আত্মীয়দের মাধ্যমে দেশে আসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দেশে থাকা নবীনের চাচাও স্বীকার করেছেন তাদের পরিবারের ১২ সদস্য সিরিয়ায় যুদ্ধে চলে গেছে। এর মধ্যে তার (চাচা আব্দুল লতিফ) এক ছেলেও রয়েছে। যুক্তরাজ্যের বেড ফোর্ডশায়ারের লুটন শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করতো আব্দুল মন্নান। ষাটের দশকে সে লন্ডনে পাড়ি জমায়। লন্ডনে তার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর মান্নান মৌলভীবাজারে কুলাউড়ার মিনারা বেগমকে দ্বিতীয় বিয়ে করে। তাদের সব ছেলে-মেয়ের জন্ম লন্ডনে। তবে লন্ডনে এখনও মান্নানের প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা অবস্থান করছেন।
সিলেটে নবীনের বাড়িনিখোঁজ নবীনের চাচাতো ভাই সাব্বির হোসেন জানান, ‘প্রায় দুই বছর আগে নবীনদের পরিবারের ১২জন সদস্য নিখোঁজ হওয়ার পর বিষয়টি ব্রিটিশ হাইকমিশনকে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়। এরপর হাইকমিশনের লোকেরা লন্ডনসহ দেশের বাড়িতে এসেও তদন্ত করে যান। ’
তিনি আরও জানান, ‘সোমবার (১৭ এপ্রিল) সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে এসে নানা বিষয়ে তথ্য ও তাদের ছবি সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন।’
মাইজগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মামুন মিয়া জানান, ‘অনেক আগে শুনেছিলাম যে মান্নান ভাই পরিবারের ১২ সদস্য সঙ্গে নিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের বাড়িতে পুলিশও এসেছিল । শুনেছি তারা জঙ্গিদের সঙ্গে যুদ্ধে গেছে।’
মাইজগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বাছিত জানান, ‘মাইজগাঁও গ্রামের একই পরিবারের ১২ সদস্য লন্ডনে যাওয়ার পথে তুরস্ক বা সিরিয়ায় চলে গেছে বলে শুনেছি। এটা প্রায় দুবছর আগের ঘটনা। এ সম্পর্কে দেশে অবস্থানকারী তাদের পরিবারের সদস্যরা কখনও আমাদের কিছু বলেননি। আমরাও আর খোঁজখবর নেইনি।’
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস ছালেক বলেন, ‘পুলিশ নবীনদের বাড়িতে গিয়ে সব ধরনের তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করেছে। অস্ত্র হাতে যে যুবকটির ছবি পাওয়া গেছে, তার নামই নবীন। প্রায় দুবছর আগে নবীনরা তার বোন রাজিয়া বেগমের মাধ্যমে সিরিয়ায় গেছে বলে বাড়িতে থাকা নবীনের চাচা লতিফ মিয়া পুলিশকে জানিয়েছেন। ’
সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা (গণমাধ্যম) জানান, ‘পুলিশ নবীনদের বাড়িতে গিয়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য নিয়েছে। যারা ওই বাড়িতে আছেন তাদেরকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।