সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে কোন প্রকার সংস্কার ও নিয়ন্ত্রণ ব্যাতিরেকে এবং বিনাশর্তে মাস্টার্স মান দেওয়ার প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত সমন্বয় কমিটি।
বুধবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে সংগঠনের জেলা শাখার সমন্বয়ক মাওলানা মনজুর আহমদ ও সদস্যসচিব মাওলানা সালাহ উদ্দিন মুহাম্মদ তারেকের নেতৃত্বে বিভিন্ন যৌক্তি দাবী তুলে এ স্মারকলিপি দেয়া হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, এ দেশের সূফি ঘরানার সুন্নি জনতার প্রতিনিধিত্বকারী অরাজনৈতিক-আধ্যাত্মিক সংগঠন ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত সমন্বয় কমিটি’ সবসময় চলমান সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিরোধি পদক্ষেপের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
কিন্তু হঠাৎ করে গত ১১ এপ্রিল রাতে জঙ্গীবাদের প্রকাশ্য সংগঠন ও এর প্রধান সংগঠক হেফাজত নেতা মৌ: আহমদ শফী সাহেবের দলবলকে ডেকে নিয়ে, তাদের দাবিকে শর্তহীনভাবে মেনে নিয়ে কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স (আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজ)’র সমমান ঘোষণা এবং অতীব দ্রুততার সাথে প্রজ্ঞাপনও জারী দেশের সুন্নি জনতাকে শুধু নয় বরং সকল বিবেকবান সচেতন শিক্ষিত মানুষকে, এমনকি সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে।
স্মারকলিপিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট উপস্থাপন করা হয়েছে:
দেশে অপরাপর মাস্টার্স সনদ দেয় এফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয় বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি কুস্টিয়া, আরবী বিশ্ববিদ্যালয় নামক সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান। অথচ, এখানে একই সনদ দেবেন হেফাজত নেতাদের একটি কমিটি-যাদের নিজেদেরও কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ নাই। এটা উগ্রগোষ্ঠিকে অভাবনীয় পুরষ্কৃত করতে গিয়ে দেশের অপরাপর সকল মাস্টার্স সনদধারীদের অপমান করা নয় কি?
সাধারণ ও আলীয়া মাদ্রাসা শিক্ষায় একজন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক/স্নাতক সম্মান বা সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পর মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে হয়। যার জন্য ব্যয় হয় ১৭-২০ বছর। অথচ তারা এতগুলো পরীক্ষা না দিয়ে মাত্র কয়েক বছরে মাস্টার্স সনদ লাভ করবে। যা সমপূর্ণ বৈষম্যমূলক। এতগুলো সরকার নির্ধারিত পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সনদ অর্জনের পরও আনুগত্যশীল মাস্টার্সধারীরা চাইলেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতে পারেননা। তাদেরকে এ জন্য আরো বড় প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে উত্তীর্ণ হওয়া লাগে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তো আছেই। এমনকি বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় শিক্ষকতার জন্যও তাদেরকে নতুন করে নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রয়োজন হয়। এরপরও দিতে হয় নিয়োগ পরীক্ষা-যেখানে থাকে সরকারি প্রতিনিধি। অথচ এমন কোন ঘাট পাড়ি দিতে হবেনা কওমীদের। তাহলে শিক্ষকদের মান যাচাইও হবেনা এখানে? এতোবড় বৈষম্যমূলক আচরণ কেন সরকারিদের উপর?
হেফাজত নেতা মৌ: শফী সাহেবের বয়স নাকি ৯০ এর বেশি। তাহলে চাকুরি বা শিক্ষকতা করার জাতীয়-আন্তর্জাতিক কোন নিয়ম কি তারা মানতে বাধ্য নয়?
তারা বারবার ফলাও করে প্রচার করে যাচ্ছে যে, তারা সরকারের কোন টাকা নেয়না এবং নিবেনা। কিন্তু সরকারি মাদ্রাসার চেয়েও এদের অবকাঠামোগত অবস্থান অনেক বেশি বিশাল এবং তা দেখতে না দেখতেই হয়ে যায়। কিন্তু কীভাবে? এর নেপথ্যে অর্থের উৎস কী? শুধুই স্থানীয় জনগন। না, বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ উৎসের নিরপেক্ষ তদন্ত করা হলে, যথাযথ অডিট হলে, জঙ্গীদের টাকার উৎসও বেরিয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি। কিন্তু সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকলে- এ বিষয়টি ও অধরা থেকে যাবে।
উপরোক্ত বিষয়সমূহ নিশ্চিত না করে তাদের সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে আজ কেউ ভাল চোখে দেখছেনা, আমরাও না। অতএব, এমন বৈষম্যমূলক সনদ প্রদানের কার্যক্রম স্থগিত রেখে, নি¤েœ বরাবরের মত আমাদের একটি বিকল্প নিরপেক্ষ প্রস্তাব আপনার সদয় বিবেচনার জন্য পেশ করছি। আমরা আশা করছি যে, এ প্রস্তাব অনুসরণ করা হলে, এ নিয়ে আমাদের বা তাদের কারোর কোন আপত্তি থাকবেনা এবং তা এক দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার দুই নীতি সরকারিভাবে স্বীকৃতির অভিযোগ থেকেও সরকারকে বাঁচাবে। আমাদের প্রস্তাব হলো, বর্তমান ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত সরকারিভাবেই মুসলমানদের এবং ইসলামি শিক্ষাকে বিভক্ত করার শামিল। তাই দেশে এক নীতি ও কারিকুলামের মাদ্রাসা শিক্ষা প্রণয়ন করে আলিয়া-কওমীদের একই সরকারি সনদ প্রদান করা হোক। সুন্নি এবং কওমীদের দশজন দশজন প্রতিনিধিদের ঐক্যমতে যদি কিতাবপত্র ও সিলেবাস তৈরী করে সরকারিভাবে যদি উক্ত সিলেবাসের আলোকে একই প্রশ্নপত্রের উপর একটি সরকারি বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষা নেওয়া হয়। তবে সেক্ষেত্রে অর্জিত সনদ সকল বিতর্কের উর্ধ্বে গ্রহণযোগ্য হবে। যা দেশে বিদ্যমান দুইধারার মাদ্রাসা শিক্ষার অপমৃত্যু ঘটাবে বিধায় ওহাবী-সুন্নি বিতর্কের শত বছরের কলংকজনক অধ্যায়কেও অনেকটা মুছে ফেলতে পারবে। যা দেশ ও মুসলিম জাতির জন্য একটি নতুন সুসংবাদ হবে বলে আমরা মনে করি। আর এ ঐতিহাসিক অবদানের জন্য আপনিও হাজার বছর প্রশংসিত হবেন সবার কাছে। এমনকি সমগ্র বিশ্বের মুসলমানের কাছে।
মাননীয় দেশনেত্রী,
আমাদের এই বিষয়ে আরো অনেক বক্তব্য রয়েছে-যা প্রয়োজনে আপনার কাছে প্রত্যক্ষভাবে পেশ করতে চাই। যদি সে সুযোগ দেওয়া হয়। আপনার এ সিদ্ধান্তে আমরা আলিয়া মাদ্রাসার ভবিষ্যত অন্ধকার দেখতে পাচ্ছি। সরকারিভাবে পরিচালিত আলিয়া মাদ্রাসমূহকে সাধারণ শিক্ষার পর্যায়ে নিয়ে আসছে এমনভাবে- যাতে ভবিষ্যতে এ ঐতিহ্যবাহী আলিয়া কারিকুলামের মাদ্রাসা থেকে কোন যোগ্য আলেম, মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসির আর ওঠে না আসে। আর, পক্ষান্তরে এতোদিনের বেসরকারি কওমী মাদ্রাসাকে কোন ধরনের সংস্কার না করে সরকারি সনদ দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে মূলত মাদ্রাসামুখি ছাত্রদের আলিয়া ছেড়ে উগ্রপন্থী কওমী নেসাবে উৎসাহী করবে। সহজে ডিগ্রী পাবার আশায় এখন আলিয়ামুখি ছাত্র-ছাত্রীরা এখন কওমীর দিকে ঝুঁকে পড়া অস্বাভাবিক নয়। ফলে ক্রমে আলিয়া মাদ্রাসা ধ্বংস হবে এবং কওমীদের উগ্রশক্তি বৃদ্ধি পাবে। যা দেশে সূফিবাদী উদার ইসলামের পরিবর্তে উগ্রপন্থীদের উৎসাহিত করবে বিধায় আপনার ঘোষণা স্থগিত রেখে, বুঝেশুনে, ব্যাপক আলোচনা-একাডেমিক পর্যালোচনার পর, আমাদের প্রস্তাবসমূহকে সামনে রেখে কথিত সনদ প্রদান করলে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ছিদ্দিকী, মাওলানা মুহাম্মদ সুলতান, মাওলানা আবু সৈয়দ, মাওলানা মুহামম্দ মুসা, মাওলানা মুহামম্দ গিয়াস উদ্দিন, মাওলানা মহিউদ্দিন, মাওলানা বেলাল উদিদœ, মাওলানা ইমরানুল হক, অধ্যাপক আজিজুল ইসলাম প্রমুখ।
কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মান দেয়া যায়না
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।