জালাল আহমদ
আজ পেকুয়া উপজেলার ১৫ ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। ২০০২ সালের ২৭ এপ্রিল কক্সবাজারের বৃহত্তর উপজেলা চকরিয়াকে বিভক্ত করে পেকুয়া উপজেলা প্রতিষ্ঠা করেন তৎকালীন যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী, কক্সবাজার-১(চকরিয়া ও পেকুয়া) আসনের এমপি সালাহ উদ্দিন আহমদ যিনি বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।আমি তখন শিল খালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র।একদিন আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক এসে বললেন,” আগামী ২৭এপ্রিল পেকুয়া উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নব গঠিত পেকুয়া উপজেলার শুভ উদ্বোধন করতে পেকুয়ায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।তাই তোমাদের স্কুল ২৭ এপ্রিল বন্ধ থাকবে”। ২৭ এপ্রিল সকালে ঘুম হতে উঠেই দেখি আকাশ মেঘলা।মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু হতাশ হইনি। কিছুক্ষণ পর মেঘলা আকাশে উঁকি দিয়ে সূর্যের দেখা মিলে।
সূর্যের আলোয় আলোকিত পেকুয়া উপজেলার প্রাকৃতিক দৃশ্য।মেঘলা আকাশের ঘনঘনটা অন্ধকার ঘুচিয়ে হঠাৎ সূর্যের উদয় যেন আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল যে, আমরা এতদিন অবহেলিত ছিলাম আর এখন উন্নয়নের দিকে যাত্রা শুরু করেছি। এ রকম চিন্তা ভাবনা করতে করতেই সেদিন দুপুর ২টায় জনসভাস্থল পেকুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজ মাঠে পৌঁছে গেলাম। দেখি হাজার হাজার জনগণ হ্যামেলিয়নের বাঁশিওয়ালার মত চারদিক হতে আসতে শুরু করেছে।পূর্বনির্ধারিত সময় বিকাল চার টার আগেই পেকুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজ মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বিকাল চার টার পূর্বেই খালেদা জিয়াকে বহনকারী বিমানটি কলেজের পাশের মাঠে অবতরণ করেন।সাথে সাথে হাজারো জনতা তুমুল করতালি আর শ্লোগানের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগতম জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেগম খালেদা জিয়া বলেন,”পেকুয়াকে যেমন উপজেলা করেছি তেমনিভাবে পেকুয়ার উন্নয়নও করব।শুধু পেকুয়ায় নয়,সারা বাংলাদেশে একইভাবে আমরা উন্নয়ন করব”।উন্নয়নের জোয়ার বলতে যা বুঝায় বিএনপি সরকারের আমলে পেকুয়ায় তাই হয়েছিল। পেকুয়ার দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়াম, পেকুয়া থানা ভবন, উপজেলা প্রশাসনিক ভবন,ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ইত্যাদি ।পেকুয়া এক সময় একটি অবহেলিত গ্রাম ছিল।সেই অবহেলিত গ্রাম থেকে ইউনিয়ন, ইউনিয়ন হতে উপজেলায় উন্নীত হওয়া এক বিস্ময়কর ঘটনা । এই কৃতিত্বের মহানায়ক আমাদের পেকুয়ার গর্বিত সন্তান সালাহ উদ্দিন আহমদ, যিনি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়র আইন বিভাগে পড়ার সময় পেকুয়ার বঞ্চিত জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের স্বপ্ন দেখতেন।
সালাহ উদ্দিন আহমদ এমপি ও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে এলাকায় রাস্তাঘাট, মসজিদ,মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন।তারই প্রতিদান হিসেবে চকরিয়া পেকুয়ার জনগণ ২০০৮সালের ২৯ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর স্ত্রী এডভোকেট হাসিনা আহমদ কে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত করেন। শুধু তাই নয়,২০০৯ এবং ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত এবং সালাহ উদ্দিন আহমদ কর্তৃক মনোনীত প্রার্থী হিসেবে শাফায়ত আজিজ রাজু বিপুল ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
পেকুয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছে মগনামার মরহুম মাহমুদুল করিম চৌধুরী (সাবেক এমপি ও বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ),মেজর জেনারেল(অব:) রুহুল আলম চৌধুরী, কক্সবাজার মহকুমা বাকশালের সাবেক গভর্ণর আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য এডভোকেট জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
বিএনপি সরকারের আমলে যেসব উন্নয়ন হয়, সে গুলো আজ বিবর্ণ ও মলিন। রাস্তাঘাট সংস্কারের কেউ নেই।পেকুয়া আজ যেন এতিম সন্তানের মত। ২০০২ সালে পেকুয়ায় ইউনিয়ন ছিল ৫ টি। পেকুয়া সদর,বারবাকিয়া, রাজা খালী,মগনামা ও টৈটং । পরে ২০০৩ সালে বারবাকিয়া কে বিভক্ত করে শিল খালী ও মগনামা কে বিভক্ত করে উজানটিয়া ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ফলে পেকুয়া উপজেলার ইউনিয়ন সংখ্যা দাড়ায় ৭ টি।পেকুয়ার পশ্চিমে কুতুবদিয়া, দক্ষিণে চকরিয়া ও মহেশ খালী,পূর্বে চকরিয়া এবং উত্তরে চট্টগ্রামের বাঁশ খালী ও লোহা গাড়া উপজেলা। পেকুয়ার একদিকে পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও অপর দিকে সমুদ্রের মিতালী ঢেউ আল্লাহর অপূরন্ত দান। পেকুয়া উপজেলার ১৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে পেকুয়া উপজেলার সর্বস্তরের জনগণকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। লেখক :ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।