ভাঙনের কবলে পড়ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ! বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভেঙে যাচ্ছে দ্বীপ, কিছু মানুষের প্রভাবে ভেঙে পড়ছে সমাজ, আর পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিশে ভাঙতে হচ্ছে হোটেল! আতঙ্কে ভেঙে যাচ্ছে আমাদের হৃদয়।
পর্ব-১
বেশ কদিন ধরে পত্রিকা, অনলাইন নিউজ, ফেসবুক স্ট্যাটাস, মন্তব্য, ম্যাসেজ ও মোবাইল কথোপকথন প্রায় সবকিছুতেই সেন্টমার্টিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, আন্দোলন, প্রতিবাদ, পাল্টা প্রতিবাদ, দেশপ্রেমী, দেশদ্রোহী, বিদেশী ষড়যন্ত্র, দ্বীপ ধ্বংসকারী, দ্বীপ রক্ষাকারী, পরিবেশের দালাল, ঢাকাইয়ার দালাল ইত্যাদি নানান জনের নানান কথা! কারটা শুনি কারটা বাদদি সেটাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাওয়া অবস্থা! আসল সমস্যা নিয়ে কেউ কথা বলছে না! শুধু নিজেরা নিজেদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে। সমস্যা সমাধানের কথাও কেউ বলছেনা। পত্রিকাও মূল সমস্যা ও সমাধান নিয়ে কোন প্রতিবেদন প্রকাশ করছেনা
শুধু নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ আর অস্থায়ী সমাধান নিয়ে কথা বলছে। পরিবেশ অধিদফতরও সমস্যার গুড়া ঠিক রেখে আগা ছাটায় করে সমস্যা সমাধান করার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু তা কখনো টেকসই বলা যাবে না। সমস্যার স্থানী সমাধান করতে হলে, আগে জানতে হবে কি কি কারণে দ্বীপের এই করুণ পরিণতি? আর তা জানলে সমাধান করাও সহজ হবে। এই বিষয়ে বিস্তারিত বলার আগে নিজেদের তর্কবিতর্ক নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক। এই কদিনে যা দেখলাম, তাতে মনে হল শুধু নিজেদের মধ্যে ভুলবুঝাবুঝি হয়েছে মাত্র। কারণ প্রত্যক নিজ নিজ অবস্থানে সঠিক ছিল। কারণ ব্যাখ্যা করছি
১) বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ হিসেবে দেশের সম্পদ, সারাদেশের মানুষেরও সম্পদ, তাই এটি নিয়ে কথা বলার অধিকার সবার আছে। কেউ চাইবে না এমন একটা সম্পদ বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাক।
২) এইদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ হিসেবে, এটির সাংবাদিক ও প্রতিবেদকদেরও একটা দায়িত্ব আছে। দেশের যেকোনো সমস্যার মত এই দ্বীপের নানান সমস্যা ও সমাধান নিয়ে তাঁরা অবশ্যই সংবাদ করবে। কোন অবৈধ বা অনৈতিক অথবা দ্বীপ ধ্বংসী কোন কর্মকাণ্ড হলে, তা প্রতিবেদনের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষকে জানিয়ে দেওয়া তাঁদের নৈতিক দায়িত্ব। শর্ত এই যে সংবাদ বস্তুনিষ্ঠ ও বাস্তবসম্মত হতে হবে।
৩) সবাই নিজ সম্পদ রক্ষার্থে সম্ভবপর সব চেষ্টা করবে সেটাই সাভাবিক। আর সেটা তার অধিকারও বটে।
৪) সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার বাসস্থান, রাষ্ট্র সেটা দিতে ব্যর্থ হলে ব্যক্তি উদ্যোগে বাস্থানের ব্যবস্থা করা ও রক্ষানাবেক্ষন করা কোন অপরাধ হতে পারে না। তবে সেটা অন্যের ক্ষতি করেও হতে পারে না।
৫) পাথর, বালি উত্তোলন ও ভারি স্থাপনা নির্মাণ আইনগত অবৈধ, অবশ্যই অবৈধ। আইন হাতে নেওয়ার অধিকার কারো নাই। সাংবিধানিকভাবে আইন সকলের জন্য সমান। তাহলে সরকারের জন্য?? সরকার তো নিজেয় আইন মানছে না। হাসপাতাল ও আবহাওয়া কেন্দ্রে প্রচুর বালি ভরাট করছে। আর মেরিন পার্ক, আবহাওয়া কেন্দ্র, ডাকবাংলো, ইউনিয়ন কমপ্লেক্স, কোষ্টগার্ড ষ্টেশন, নেভি ফরওয়ার্ড ব্যাচ, ওয়াবদা, লাইট হাউস কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন কমপ্লেক্স ও জেটি ঘাটের মত ভারি স্থাপনা নির্মাণ করে পরিবেশ আইন অমান্য করছে। তাহলে আমাদের বেলা কেন এত কড়াকড়ি?
৬) পাথরের বাধ দেওয়া যাবে না, সিসি ব্লক দেওয়া যাবে না, বালির বাধও দেওয়া যাবে না।আর সরকারও বেড়িবাঁধ দিচ্ছে না, তাহলে দ্বীপের ভবিষ্যৎ?
৭) কারো বিরুদ্ধে অবৈধ লেনদেনের অপবাদ দিলে বা ভিত্তিহীন অভিযোগ তোললে অথবা উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদ পরিবেশন করছে মনে হলে, আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতিবাদ করার অধিকার আছে। তার প্রতিবাদ করার অধিকার অস্বীকার করা বা অগ্রাহ্য করা অথবা অন্য প্রসঙ্গ টেনে অনুচিত বাড়াবাড়ি করে মূল বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার অধিকার কারো নাই।
৮) জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজ এলাকা রক্ষা করা ও জনসাধারণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাক্ষা করা অবশ্যই তাঁদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।সে যেই হউক তা করবেই। আর তা পালন করতে কারো বাধা দেওয়াও অনুচিত।
৯) এলাকার ক্ষতি হয় বা জনগণ চাইনা অথবা উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয় এমন কাজ নাকরাই উচিৎ। আর জনগণ মন্দ বলুক তা প্রতিনিধিদের প্রত্যাশা হতে পারে না।
১০) এই দ্বীপ যেহেতু সবার সেহেতু দ্বীপ রক্ষায় সকলকে ঐকমত হওয়া প্রয়োজন। জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতক ব্যক্তি, ছাত্র সমাজ, বিজ্ঞ জন ও সর্বস্তরের জনসাধারণকে সাথে নিয়ে এইসব কাজ (দ্বীপ রক্ষা) করা উচিৎ।
পরের পর্বঃ কি কি কারণে দ্বীপের এই বেহাল দশা!
-২য় পর্বে চোখ রাখুন কাল
লেখক :
তৈয়ব উল্লাহ, সভাপতি সেন্টমার্টিন স্টুডেন্ট ফোরাম।
তার পেইজবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।