প্রেস রিলিজ :
এপ্রিল মাসে দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির ইতিবাচক কোন পরিবর্তন হয়নি বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। সংস্থার মাসিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে এ চিত্র সামনে আসে। পারিবারিক ও সামাজিক নৃসংশতার বিষয়টি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা উদ্বেগজনক। শিশু হত্যা, শিশু ধর্ষণ, গণ ধর্ষণ,পারিবারিক ও সামাজিক কোন্দলে আাহত ও নিহত, নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাগুলি ছিল উল্লেখযোগ্য এ মাসে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার এপ্রিল মাসের মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়:
আত্মহত্যা ঃ এপ্রিল মাসে সারা দেশে আত্মহত্যা করেছে ৫৮ জন । এদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ ও ৩৬ জন নারী ও ৫ জন শিশু। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানী, পরীক্ষায় খারাপ ফল, এমনকি পছন্দের পোষাক কিনতে না পারার কারনেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় । ঢাকা বিভাগে আত্মহত্যার ঘটনা সবচেয়ে বেশী।
ধর্ষণ ঃ এপ্রিল মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৫ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে শিশু ২২ জন। ২৩ জন নারী। ৭ জন নারী গণ ধর্ষণের শিকার হন ও ৩ জনকে ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়। এ মাসে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে শারমিন আক্তার নামে এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।
শিশু হত্যা ঃ এপ্রিল মাসে ১৮ শিশুকে হত্যা করা হয় । নির্যাতনের শিকার হয় ৩৮ জন। এদের মধ্যে পিতা মাতা কর্তৃক খুন হয় ৪ শিশু। এ মাসে ঢাকার আশুলিয়ায় মাদকাসক্ত এক ব্যাক্তির বিরুদ্ধে ৫ বছরের এক শিশুকে যন্ত্র চাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
যৌতুকঃ এপ্রিল মাসে যৌতুকের কারনে প্রাণ দিতে হয়েছে ৭ জন নারীকে । নির্যাতনের শিকার হয় ৫ জন । সাতক্ষীরায় যৌতুকের দাবিতে এক সন্তানের জননীকে হত্যা করে স্বামীর বাড়ির লোকেরা। জামালপুরে যৌতুকের জন্য এক গৃহবধূকে পিটিয়ে আহত কওে পাষন্ড স্বামী।
পারিবারিক কলহঃ পারিবারিক কলহে এপ্রিল মাসে নিহত হন ৪৪ জন, এদের মধ্যে পুরুষ ১৮ জন ,নারী ২৬ জন।। এদের মধ্যে স্বামীর হাতে নিহত হন ১৯ জন নারী। আর স্ত্রীর হাতে নিহত হন ৪ জন স্বামী । পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্ধ, রাগ, পরকীয়া সহ বিভিন্ন পারিবারিক কারনে এই সব মৃত্যু সংগঠিত হয় বলে জানা গেছে। পারিবারিক কলহের কারনে ফেনীতে ছেলের দা এর কোপে নিহত হন বাবা।
সামাজিক অসন্তোষ ঃ সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে এই মাসে নিহত হয়েছেন ৩৪ জন ! আহত হয়েছেন ৬৭২ জন। সামাজিক সহিংসতায় আহত ও নিহতের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে । তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক প্রতিবেশী নারীকে হত্যা করে আরেক প্রতিবেশী। আর এ ঘটনায় আহত হন ৫ জন।
খুন ঃ এপ্রিল মাসে দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত হন ৮১ জন । ঢাকার ধামরাইয়ে জুবেদা আক্তার নামের এক কলেজছাত্রীকে চোখ উপড়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর গুলশানে নিজ বাড়িতে এক ব্যাবসায়ীকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা- এপ্রিল মাসে ৮ জন এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়। মাদকের প্রভাবে বিভিন্ন ভাবে নিহতের সংখ্যা ৩জন, আহত হয় ৫ জন। সড়ক দূর্ঘটনায় এ মাসে নিহত ২১৬ ও আহত ৩৫২ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবশত, বিদ্যুৎপৃস্ট হয়ে, বজ্রপাতে মৃত্যুবরন করেছে ১১১ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয় ২ ,আহত হয় ৫ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৫ জনের। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমন অভিযানের নামে গনগ্রেফতার করা হয় ৫৯৫ জনকে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গিকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আইনের সঠিক প্রয়োগ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষন ও প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন, অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের জন্য পুরষ্কার, সামাজিক সংগঠন গুলোর বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম স্কুল কলেজগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, মিডিয়ায় এসব পরীক্ষামূলক সম্প্রচার ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।
(তথ্য সুত্রঃ এপ্রিল ২০১৭ মাসে দেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য। এর বাইরেও মানবাধিকার লংঘন জনিত কিছু ঘটনা থাকতে পারে যা আমাদের সীমাবদ্ধতার কারনে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি)
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।