আরফাতুল মজিদ:
বিশাল সাগর আর এক দিকে বাঁকখালী নদীর মোহনা। এর মাঝে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে বাইন ও কেওড়াসহ নানা প্রজাতির শ্বাসমূলী উদ্ভিদের ম্যানগ্রোভ বন। গাছের মাথা ছুঁয়ে উড়ে যাওয়া বকের সারি, পরিযায়ী পাখি কিংবা বন্য শূকর। দেখে মনে হবে এ বুঝি আরেক সুন্দরবন। কক্সবাজার কস্তুুরাঘাট থেকে মহেশখালী-কুতুবদিয়া ও সোনাদিয়া উপকূলে যাওয়ার পথে বাঁকখালী নদীর মোহনায় দেখা মেলে এ বনের। স্থানীয় ও পর্যটকের কাছে এটি ‘মিনি সুন্দরবন’ হিসেবে পরিচিত।
এমন সবুজ আর প্রাণ প্রজাতির সম্মিলন দেখতে যাওয়া যায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নুনিয়াছড়া পয়েন্টে। সবুজ আর প্রাণীর এই অপূর্ব সম্মিলনকে কাজে লাগাতে চায় বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উদ্যোগে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের এ বনকে পর্যটকদের কাছে আকৃষ্ট করতে বনের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও বিনোদন কেন্দ্র। ২০১৫ সালের আগষ্ট মাসে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.কামাল উদ্দিন আহমদ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন এই পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এরপর থেকে রূপ ও সৌন্দর্য বেড়েই চলছে ‘মিনি সুন্দরবনের’। যা কক্সবাজার পর্যটনে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশে’র চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, অনেকটা সুন্দর বনের আদলে গড়ে উঠা কক্সবাজারের এ সুন্দরবনকে রক্ষার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত হবে, অপরদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগের জন্য পর্যটনের একটি নতুন স্পট যোগ হয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ভ্রমণ প্রেমীরা এই মিনি সুন্দরবনে আসতে পারে।
নুনিয়াছড়া ইসিএ ব্যবস্থাপনা বহুমূখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আলম জানান, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের মাধ্যমে পর্যটকরা স্থানীয় ও পরিযায়ী পাখি এবং নানাবিধ প্রাকৃতির সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারছে। পাখি ও বন্যপ্রাণী সনাক্তকরণ ও জ্ঞান অর্জন করতেও অনেকেই আসছেন এখানে। এছাড়া স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি হবে এই বন থেকে। প্রতিদিন বিকালে স্থানীয় ও অনেক পর্যটক টাওয়ারে উঠে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঢল নামে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ ধংসের কারণে গত কয়েক বছরে বহু প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। এ কারণে এমন বন সৃজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত দেড় বছরে গাছের উচ্চতা অনেক বেড়েছে। এতে সুন্দরবনের রূপ ও সৌন্দর্যও বাড়ছে। পর্যায়ক্রমে এ বনে নির্মাণ করা হবে কয়েকটি ছোট চোট বিনোদন কেন্দ্র।
তিনি বলেন, সুন্দরবন বা এ প্যারাবনে ২০৬ প্রজাতির পাখির বিচরণ রয়েছে। এর মধ্যে দেশী ১৪৯ ও ৫৭ প্রজাতির অতিথি পাখি রয়েছে। বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় অনেক পাখিও এই বনে দেখা যায় এখন। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের মাধ্যমে এই মিনি সুন্দরবন দেখতে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে নামমাত্র টিকিটের মূল্য নেয়া হবে। এছাড়া বনে বানর, শামুক-ঝিনুক, কাঁকড়া, কাছিম ও চিংড়িসহ বহু প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণীর দেখা মেলে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।