চৌধুরী আকবর হোসেন

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাকে স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করার জন্য হুমকি বলে মনে করছেন সাংবাদিকরা। সংবাদ প্রকাশের কারণে জামিন অযোগ্য ৫৭ ধারায় সাংবাদিকদের গ্রেফতারের ঘটনা উদ্বেগজনক বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট অভিযোগগুলো প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে নিষ্পত্তির পরামর্শ দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে অনলাইনের বিপ্লব ঘটেছে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অপব্যবহার হতে দেখছি। জামিন অযোগ্য এ আইনের মাধ্যমে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হোক, এটি আমরা চাই না।’

সোহেল হায়দার চৌধুরী আরও বলেন, ‘কেউ যদি কোনও সংবাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তারও প্রতিকারের বিধান রয়েছে। প্রতিবাদ, উকিল নোটিশ ছাড়াও প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচার পাওয়া সম্ভব। আগের চেয়ে প্রেস কাউন্সিল অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি পত্রিকার বিরুদ্ধে অভিযোগের রায়ও হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, ‘অনেক দেরিতে হলেও সাংবাদিকরা বুঝতে পারছেন, ৫৭ ধারা মত প্রকাশের জন্য বাধা। ৫৭ ধারা নিয়ে ব্লগাররা শুরু থেকেই প্রতিবাদ করেছিলেন। ৫৭ ধারায় একের পর এক ব্লগার আটক হলেন। তখন সাংবাদিকদেরই এই ধারার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। এখন তারাই আক্রন্ত হচ্ছেন। দেরিতে হলেও সাংবাদিকরা বুঝতে পারছেন, ৫৭ ধারা তাদের জন্যও থ্রেট।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হওয়া উচিত।’

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় গ্রেফতার হয়েছিলেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার। তখন এ আইনটি বাতিলে দাবি তোলেন অনেকেই। সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করতে ৫৭ ধারাকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করেন প্রবীণ সাংবাদিক প্রবীর শিকদার।

তিনি বলেন, ‘মুক্তচিন্তার মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ৫৭ ধারায়। এ ধারাটি গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের জন্য হুমকি। জামিন অযোগ্য এ ধারাটি বাতিল না করলে স্বাধীন সংবাদ চর্চা সম্ভব হবে না। দ্রুত এ ধারাটি বাতিলের জন্য সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।’

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনও ব্যক্তি যদি ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনও ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ। (দুই) কোনও ব্যক্তি উপ-ধারা (১)-এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বছর এবং অন্যূন সাত বছর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা করা হয়েছিল ডিজিটাল মিডিয়ার জন্য। কিন্তু এটাকে ব্যবহার করা হচ্ছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। শুধু অনলাইন সংবাদপত্র নয়; পত্রিকা, টেলিভিশনগুলোরও এখন অনলাইন সংস্করণ আছে। ফলে এ আইনের বাইরে কেউ নয়। সাংবাদিকসহ মুক্তচিন্তার মানুষদের আরও বেশি সোচ্চার হতে হবে। প্রয়োজনে এর বিরুদ্ধে মাঠেও নামতে হবে।’