তানভিরুল মিরাজ রিপন :
“আমার মূলত আমি হওয়ার যথেষ্ট,দক্ষতা,জ্ঞান,শক্তি আছে।অন্য যারা দৃষ্টান্ত হয়েছে তারা মাত্রই উদাহরন,আমি তাদের মতো পুরানো কেউ হওয়ার মেধাক্রম নিয়ে আসিনি। আমি মূলত আমিই হবো,আইনস্টাইন, নিউটন,দালাই লামা আমি নিজ থেকে সজ্ঞানে হতেও চাইনা।”প্রতিটি মানুষের একান্ত একেবারে নিজস্ব কিছু শক্তি আছে,প্রতিটি মানুষের বোধ,শক্তিমত্তা খুব বেশি আছে যেটি স্বয়ং স্রষ্টা মানুষকে প্রদান করে থাকেন।প্রতিটি মানুষের কিছুনা কিছু হওয়ার শক্তি আছে,নেই বলা যাবেনা।প্রতিজন মানুষবাদী কেনো প্রতিজন মানুষকে খুব নরম থেকে ভালবাসেন?তারা বিশ্বাস করেন প্রতিজন মানুষের আলাদাভাবে একজন হওয়ার শক্তি থাকে যা দিয়ে পৃথিবী জয় করা যাবে।কোন মানুষই অযোগ্য নয়,সব মানুষ কোন না কোন দিকে খুব বেশি যোগ্য, দক্ষ,শিক্ষিত।
আব্দুল্লাহ আবু সায়্যেদ এর সাথে আড্ডাবস্থায় স্যার আমাকে খুব বেশি স্পষ্ট ও জোর গলায় একটা গল্প শুনালেন।জোর গলায় বলতে এটা শুনার জন্য মনোযোগ টাকে শরতের সকালের সূর্য উঠার মতো মনোযোগী হতে বললেন,শুরু করলেন গল্প-“যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে গেলাম তখন আমি হল’এ থাকতাম।আমরা খুব দুষ্টুমি করতাম,বন্ধুরা আড্ডা দিলেই হরেক রকম কথা বলতাম,এই আমাদের মাঝে এক বন্ধু খুব পরিপাটি হয়ে থাকতো,নিখুত,তার বিছানায় কোন ময়লা পাওয়া যাবেনা,এতোটা পরিপাটি,আমি তাকে একদিন বললাম,তোর তো বউ থাকেবেনা-সে হা করে চেয়ে আছে আমার দিকে-সে প্রশ্ন করলো কেনো?তখন আমি বললাম যদি আল্লাহ বাচিয়ে রাখে তাহলে চল্লিশ বা বিশ বছর পর দেখা হলে তুই নিজেই বুঝবি।অনেকটা বছর পর ঐ বন্ধুর সত্যাসত্য স্ত্রী চলে গেলেন তাকে ডিভোর্স দিয়ে।সে আমাকে এসে বললো,যে তোর কথা তো ফলে গেলো?কেনো বললি ঐকথা,তখন আমি তাকে বলি-মানুষ নিজেকে উপস্থাপন করতে চাই,নিজের শক্তিমত্তা দেখাতে চাই,একজন নারীরও কিছু আলাদা কাজ থাকে করবার সেকাজগুলো যদি তুই করেদিস তাহলে তোর স্ত্রীর কি করার থাকে সারাদিন?”মানুষ নিজেকে উপস্থাপন করতে চাই।
আমাদের অভিভাবকদের ভুলগুলোঃ
“শাসনের সমান আদর নয়,বরং শাসনের তিনগুনেরো অধিক আদর” দিতে হবে সন্তানদের আমরা তা করিনা।”মানুষ ভালবাসা পেলেই,দুর্ভিক্ষকেও নান্দনিকভাবে উপভোগ করতে পারে।”অভিভাবকগন এভাবে সার্টিফিকেট,ভাল স্কুল,ভাল কলেজ,ভাল রেজাল্টের পেছনে সন্তানদের তাড়ায়,চাপিয়ে দেয় ডাক্তার হতে হবে,ইঞ্জিনিয়ার হও, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন পেতে হবে,মেডিকেলে আসন পেতে হবে।কখনো অধিকাংশ অভিভাবকগন বলেননা-বা জানতে চান না যে,সন্তানের চোখটা কোন সুন্দরের প্রতি আটকে যায়।কোথায় তার হাত ভালো কাজ করছে,মস্তিষ্ক ফুরফুরে হয়ে কাজ করে।সেটি কখনো অধিকাংশ অভিভাবক জানতে চাননা।জানতে না চাওয়ার পক্ষে হয়তো কারন আছে,যুক্তি আছে,সুন্দর ব্যাখ্যা আছে।কিন্তু এটি কেনো ভাবেননা,সবাই উচ্চ ডিগ্রীধারী হবেনা, হয়না,হওয়া সম্ভবও না।কেনো আপনি আপনার সম্মানের জন্য, একটা প্রানের “হতে চাওয়া”কে ভেঙ্গে ফেলেন?অভিভাবকগন বোঝা চাপিয়ে দিলো,হয়তো আশানুরূপ ফলাফল করতো পারলো না,আনবে কি করে?তার যদি মনোভাবনা গীটারে,ছবি তুলাতে,বাশি বাজাতে আটকে থাকে? তখন সে তার দেহোটাকে আপনাদের সম্মানের গোলাম বানাতেই পারে, কিন্তু তার মস্তিস্ক,চোখ,অস্থিরতা তো অন্যখানে।”আমাদের পিতামাতাদের সবচেয়ে বড়ভুল হলো শুধু সার্টিফিকেট অর্জন করাতে চাই,যখন একজন সন্তান তার না পারা থেকে ঝরে যায়,তখন সন্তান কিছুই করতে পারেনা, কিছু করার থাকেনা,মানুষের একটা বয়সে এসে আত্মহত্যার তৃপ্তি জমেনা,আত্মহত্যা একটা অযুক্তিক ব্যাপার বা সিদ্ধান্তও বটে।সে সন্তান সারা জীবন অভিভাবকদের চাপানো অভিশাপ থেকে বের হতে পারেনা।”এই ক্ষেত্রে একজন সন্তানকে সম্পূর্নভাবে খুন করে তার অভিভাবক।যদি পড়াশুনার পাশাপাশি কর্মমুখী কোন একটা বিষয়ে দক্ষ করে তুললে প্রতিজন অভিভাবক তার সম্পূর্ন দ্বায়িত্বটা পূরন করেন।কথা আসতে পারে,এখন তো সন্তানদের তারা চিত্র আঁকা,খেলাধুলা সহ অন্যান্য কিছু শেখাতে এগিয়ে আসছে,আমি দ্বিমত পোষন করছি সেক্ষেত্রে,কারন অভিভাবকরা এক্সট্রা অর্ডিনারিকে ভাল চোখে দেখেননা,সরকার বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোন না কোনভাবে চিত্র আকা শেখতে বলেছেন বলেই সেদিকে ঝুকছেন।শুধু নম্বর পাওয়ানোর জন্য।
কাউকে ধ্বংস করার অধিকার,কারো প্রতিভাকে ধীরে ধীরে জং ধরিয়ে দেওয়ার দ্বায়িত্ব বা অধিকার কাউকে দেইনি স্রষ্টা,সেটি জন্মদাতাগন হলেও পারবেননা।প্রতিটা প্রানের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য আছে,তাকে সেভাবেও আচরন করতে দিন।তবে নির্দিষ্ট ও পরিপক্ব সময়ে তাকে তার মতো আচরন করতে দিন।প্রতিজনের আলাদা জগৎ,আলাদারকম সৃষ্টির শক্তি আছে তাকে সেটি খুজে দিতে সাহায্য করুন।একদিন আপনার সন্তান সম্ভাবনাময় স্থানে পৌছে যাবে।স্কুল, কলেজের শিক্ষাব্যবস্থা অনেকজনের জন্য ঐচ্ছিক।একটা ক্যামেরা,একটা গীটার,একটা বই,একটা পেন্সিল,একটা মঞ্চ,একটা মাইক্রোফোন,একটা ভাবনাজগত যতোটানা আবশ্যিক।কারো কাছে অন্যচোখ আছে,কারো ভাবনা আপনার চেয়ে বেশি বিবর্তিত ও নতুন।নিজের মতো হতে দিন সন্তানকে।প্রতিটা পছন্দ,প্রতিটি ভালোবাসা কর্মমুখী।ভালবেসে জানুন,তাকে পৃথিবী দেখার সুযোগদিন,পৃথিবীর চলাকলার নিয়ম বুঝতে দিন-সন্তান বিবেচনা করবে কি হওয়া উচিত।তবে সন্তানকে অন্তত একটা কর্মমুখী কাজ শেখান যেটি তার পছন্দের,চাপিয়ে দেওয়াটা কমিয়ে নিন,আপনার সন্তান হুবহু আপনার মতো চিন্তা পোষন করবেনা।
যদি পরিপক্ব বয়সে আপনার সন্তান বলে আমি হতে চাই,নতুন একজন, আমি বদলাতে চাই।হতে দিননা,ভাবতে দিননা,আপনারাও পাশে থেকে তাকে এগিয়ে দিন,আইনস্টাইন পৃথিবী না থাকা কালেও মেধাবীরা ছিলেন,মেধাবীরা আছেনও,পৃথিবী এগুচ্ছে,আপনার সন্তানকেও এগুতে দিন।
তানভিরুল মিরাজ রিপন।
-সিনিয়র আরজে রেডিওলাইভ।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।