ডেস্ক নিউজ:

নিত্যপণ্যের অবৈধ মজুদের সন্ধানে বাজারে নামছে গোয়েন্দা টিম। এই টিমে দেশের চারটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ছাড়াও থাকছেন র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্য। অবৈধ মজুদের সন্ধান পেলে মজুদকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

রমজানে কারসাজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে—প্রতি বছর সরকারের এমন সতর্কবার্তার কারণে এবার ব্যবসায়ীরা নতুন ফন্দিতে আগেই ধাপে ধাপে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছেন। এর ওপর অকালবন্যা ও টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফসলের ক্ষতি এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিত্যপণ্যের দাম পাগলাঘোড়ার মতো বেড়েই চলেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে বাড়ছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। নানা অজুহাতে এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে ছোলা, চিনি, চাল, আটা, ডাল, ডিম, ভোজ্যতেলসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় এসব পণ্যের দাম বেড়েছে।’ অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, চাহিদার তুলনায় দেশে সব ধরনের পণ্যের মজুদ সন্তোষজনক। দেশে কোনও পণ্যের ঘাটতি নেই। সব ধরনেরর পণ্যের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি রয়েছে।’

ক্রেতাদের অভিয়োগ, ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার আশায় সব ধরনের পণ্যের মজুদ গড়ে তুলেছেন। বাজারে এক ধরনের কৃত্রিম সংকটের গুজব সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছেন। রমজানে প্রতিবছরের মতো এবারও একটি সিন্ডিকেট করা হয়েছে। এর ফলে রমজানের আগেই বাজার অস্থির হয়ে উঠছে।

যদিও এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘ব্যবসায়ীদের মধ্যে এ ধরনের কোনও সিন্ডিকেট দেখা যাচ্ছে না, অতীতেও দেখা যায়নি।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের মজুদ পরিস্থিতি দেখতে বর্তমানে বাজার পর্যবেক্ষণে থাকা দেশের চার গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে একাধিক টিম পণ্যের মজুদ, চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি দেখভাল করছে। বাজার যাচাইয়ে এ টিম পণ্যের দাম ও মান যাচাই করবে। ভাউচারের সঙ্গে কোনও ধরনের অসঙ্গতি দেখলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থাও নেবে ওই টিম। এজন্য ব্যবসায়ীদের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হবে।

বাজারি স্থিতিশীল রাখতে সব ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ছোলা ও চিনির মূল্য নিয়ে পাইকারি বাজারে সম্প্রতি কারসাজি হওয়ায় রমজান উপলক্ষে বিশেষ সতর্কবার্তা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। রমজানে বিশেষ বাজার মনিটরিং কার্যক্রম চালাবে মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে দু’তিনটি প্রস্তুতিমূলক বৈঠকও করা হয়েছে। চূড়ান্ত করণীয় নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সারাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বৈঠক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিসিরা বাজার মনিটরিং ছাড়াও ব্যবসায়ীদের সচেতন করার পরামর্শ দেবেন। কেউ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নেবেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘২০০৭ সাল থেকে ঢাকা শহরের বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি মনিটরিং টিম রয়েছে। একজন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন করে কর্মকর্তা এবং পুলিশ ও র‌্যাবের সমন্বয়ে এ টিম গঠন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এ টিম নিয়মিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও অনিয়মের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে।’

সূত্র জানায়, বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখা, পণ্যের অস্বাভাবিক মজুদ ঠেকানোসহ সরবরাহ ঠিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত ১৪টি মনিটরিং টিমকে পুরোপুরি ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সারাবছর বাজার মনিটরিংয়ের জন্য গঠিত কমিটিতে উপসচিব পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রতিটি কমিটি ছয় মাস করে বাজারে মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করে। প্রতিটি কমিটিতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশিন ও ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের প্রতিনিধি থাকেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত এই ১৪টি মনিটরিং টিম সারাবছর কাজ করলেও রমজানে তাদের কাজের গতিকে আরও জোরদার করা হয়। অন্য সময় বাজার স্থিতিশীল থাকলেও রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই একটি মহল অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে। তাই আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণে প্রশাসনিক দুর্বলতা, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারা, নিত্যপণ্যের দর তদারকিতে গাফিলতি এবং বিশেষ মহলের অপকৌশলে বছরের পর বছর ধরে টিসিবি (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) নিস্ক্রিয় হয়ে থাকায় রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার বরাবরই ব্যর্থ।