নিউজ ডেস্ক: বনানীতে চাঞ্চল্যকর দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ধনীর দুলালরা উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যেতে পারেন! বনানী থানায় দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের অংশ হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে দুই তরুণীর যাবতীয় পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে আলামত পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

তবে পরীক্ষায় প্রকৃত ‘ধর্ষক’ চিহ্নিত ও অপরাধী শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন একাধিক ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।

এক মাসেরও বেশি সময় আগে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও এতদিন পর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত কতটুকু পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান খোদ বিশেষজ্ঞরা। তবে তারা একেবারে আশা ছেড়ে দেননি।

ঢামেকের বর্তমান ও সাবেক একাধিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

ইতোমধ্যে ভিকটিম দুই তরুণীর জবানবন্দি গ্রহণ, নারী চিকিৎসকের মাধ্যমে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ভ্যাজাইনাল সোয়াব সংগ্রহ ও প্রকৃত বয়স নির্ধারণের জন্য রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষার পাশাপাশি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

ঢামেকের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান (সহকারী অধ্যাপক) ডা. সোহেল মাহমুদকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডে রয়েছেন ডা. কবীর সোহেল, ডা. মমতাজ আরা, ডা. নিলুফার ইয়াসমিন ও ডা. শামীমা আফরোজ।

তবে চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণ মামলার পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পর্কে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা। জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক সোমবার ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে সরেজমিন পরিদর্শনকালে লক্ষ্য করেছেন, এ বিষয়ে বিভাগের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন।

মেডিকেল বোর্ডের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টাকালে তারা কেউ প্রকাশ্যে ওই ধর্ষণ ঘটনার পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে আগাম কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

জানা যায়, মেডিকেল বোর্ড ও ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ সোমবার ঢাকার বাইরে রয়েছেন।

কেউ কেউ জানিয়েছেন, অন্যান্য রেপ (ধর্ষণ) ভিকটিমদের রুটিনমাফিক যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় এখানে তাই করা হয়েছে। মুখে রুটিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বললেও বিভাগের অনেককে এ ঘটনা নিয়ে গোপনে আলাপ-আলোচনা করতে দেখা গেছে।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেডিকেল বোর্ডের এক চিকিৎসক জানান, ঘটনাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় সঠিক প্রতিবেদন তৈরির লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ভিকটিম দুই তরুণীর যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তাদের প্রকৃত বয়স নির্ধারণে রেডিওলজিক্যাল টেস্ট করা হয়েছে।

মামলার দিনক্ষণ অনুযায়ী, দুই তরুণীকে গত ২৮ মার্চ রাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত কয়েকবার জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও নাইম আশরাফ নামে দুই যুবকসহ পাঁচ যুবক তাদের শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, ধর্ষণের ভিডিওচিত্র ধারণ করে তা সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়।

এতদিন পর অভিযোগ আদৌ প্রমাণ করার সুযোগ আছে কিনা- জানতে চাইলে মেডিকেল বোর্ডের ওই সদস্য জানান, মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে সম্মিলিতভাবে ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন দেবেন।

রেডিওলজি বিভাগের প্রতিবেদন পেতে ১৫ দিন থেকে দেড় মাসও সময় লেগে যায়। তবে স্পর্শকাতর এ মামলার প্রতিবেদন দ্রুত পাওয়া যাবে বলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা আশা প্রকাশ করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের (অবসরপাপ্ত) সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুজ্জামান চৌধুরীর কাছে এক মাসের অধিক পুরনো ধর্ষণ ঘটনায় ধর্ষক চিহ্নিত করা সম্ভব কিনা- জানতে চাইলে তিনি সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানান। ঘটনার পরপর পরীক্ষা করা হলে জোরপূর্বক ধর্ষণের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। তবে সোয়াব টেস্টে অনেক সময় ধর্ষণকারীর বীর্যের নমুনা পাওয়া যেতে পারে।

তিনি আরও জানান, বিলম্বের কারণে ফরেনসিক পরীক্ষায় ধর্ষকের অপরাধ নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত না হলেও পুলিশের তদন্ত, পারিপার্শ্বিক প্রমাণাদি, সর্বোপরি ভিকটিমদের জবানবন্দির ওপর নির্ভর করে আদালত অপরাধীকে শাস্তি দিতে পারেন।