এম.আর মাহমুদ
৭ই মে শনিবার ছিল কক্সবাজারবাসীর জন্য স্মরণীয় দিন। ওইদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে ঘোষণা দিয়েছেন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। ইয়াবা পাচারে জড়িতদের শাস্তি পেতেই হবে। ইয়াবার কারণে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যা কোনভাবে মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন ও রাষ্ট্র মেনে নিতে পারে না। সমাবেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারকে আধুনিক পর্যটন নগরী করা সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন। বাকী কাজ পর্যায়ক্রমে শেষ করার ঘোষণা দিয়েছেন। যা জেলাবাসীর জন্য ইতিবাচক।
গত অর্ধ-যুগ ধরে কক্সবাজার সহ দেশের মানুষ ইয়াবা নামক এক প্রকার নেশা জাতীয় বলির সাথে পরিচয় লাভ করেছে। যে দেশের গ্রামে অনেক মার্নুষ জ্বর ও ব্যথা নিবারণের নাপা/প্যারাসিটামলের নাম জানত না, তাদের মুখে মুখেও ইয়াবার নাম। ব্যাপারটি দুঃখজনক। বিশেষ করে প্রচার মাধ্যমের কারণে ইয়াবা জগৎ সম্পর্কে পাবলিক সচেতন হয়েছে। ইয়াবার উৎপত্তিস্থল মিয়ানমার (বার্মা)। নাফনদী পার হয়ে ইয়াবা প্রবেশ করছে বাংলাদেশের টেকনাফে। এখান থেকে সড়ক ও নৌপথে পাঁচার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, কোস্ট-গার্ড সহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন হরহামেশা ইয়াবার চালান জব্ধ করছে। জব্ধ করা লাখ লাখ ইয়াবা বডি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ধ্বংসও করছে। কিন্তু ইয়াবা পাঁচার কোনভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। কক্সবাজার জেলার ৮টি উপজেলায় সব স্থানেই ইয়াবার চালান পৌঁছে যাচ্ছে। কালে ভাদ্রে পুলিশ উদ্ধারও করছে। তবে জেলার সব মানুষ ইয়াবা পাঁচারের সাথে জড়িত নয়। কিন্তু সড়ক পথে এ জেলার লোকজন দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার পথে অপমাণজনকভাবে তল্লাশীল শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে ভদ্র ঘরের মহিলারাই এক্ষেত্রে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শরীর তল্লাশীর পর অনেক মহিলার কান্না কাটি করতেও দেখা গেছে। আবার পুলিশ তল্লাশী চালাতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে ইয়াবা বডি উদ্ধারও করছে। ইয়াবা পাঁচারের সাথে যারা জড়িত, তারা ধরা পড়লে কারও অনুশোচনা করার মত কিছু নেই। কিন্তু কিছু অপরাধীর কারণে সাধারণ মানুষ হয়রাণির শিকার হলে দুঃখ লাগে। যা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। একজন মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা দুঃখজনক। স্বাধীনতার ব্যাখ্যা হচ্ছে যার লাঠি সে ঘুরাবে। কিন্তু কারও গাঁয়ে যেন আঘাত না লাগে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সত্যকার অপরাধীকে আটক করলে কেউ প্রশ্ন করবে না। তবে নিরীহ মানুষ হয়রাণির শিকার হলে, প্রতিবাদ করার স্বাধীনতা সব মানুষের আছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার নামে কথিত সোর্সের মাধ্যমে কারো বাড়িতে, পকেটে বা ব্যাগে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে হয়রাণি করা কি যে অমানবিক। ভূক্তভোগী ছাড়া কারো পক্ষে মন্তব্য করা যাবে না। “কারণ কি যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে, কবুও আসে বিষে, ধ্বংশিনী যারে।” সম্প্রতি চকরিয়া উপজেলাধীন মহাসড়ক থেকে দু’টি ইয়াবার চালান জব্ধ করার ঘটনা অবতারণা না করলে যথার্থ হয় না। টেকনাফ থেকে মোটর সাইকেল যোগে ২ যুবক চকরিয়া এসে এস.এ পরিবহনের মাধ্যমে পুরো মোটর সাইকেলটি ঢাকার উদ্দেশ্যে বুকিং দিচ্ছিল। এ সময় বেরসিক পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই ২ যুবকসহ মোটর সাইকেলটি আটক করে তল্লাশী চালাতে গিয়ে মোটর সাইকেলের বিশেষ অংশ থেকে ৩ হাজারেরও অধিক ইয়াবা বডি জব্ধ করেছে। এর ক’দিন পর ফাঁসিয়াখালী ঢালা থেকে যাত্রীবাহী শাহ্ আমিন পরিবহনের ইঞ্জিন বক্স থেকে সমপরিমাণ ইয়াবার চালান জব্ধ করেছে। এখানে পুলিশ কৃত্রিমতার আশ্রয় নেয়নি। দুটো ঘটনায় স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ঘোষণার পর ইয়াবা পাঁচারকারীদের বুকে কোন ব্যথা অনুভব হচ্ছে কিনা আমরা জানি না। তবে আমরা সারাদিন একজন রাষ্ট্র প্রধানের ঘোষণার পর অবৈধ ইয়াবা পাঁচার অবশ্যই বন্ধ হবে। শীত মৌসুমে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ঢল নামে। তারা আসে বিনোদনের জন্য। শুধুমাত্র ইয়াবার কারণে অনেক সময় দেশী-বিদেশী পর্যটকরাও নানাভাবে অপমাণিত হচ্ছে। ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে জেলার টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও কক্সবাজার সদরে অনেকেরই ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। দুদক বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের আয়ের উৎস খুঁজতে গেলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসত। টেকনাফে এক সময় যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো, তাদের বসতবাড়ির পরিবর্তন দেখলে অন্ধও বলবে যে এ আয়ের উৎস কি? ঠোঁট কাটা স্বভাবের এক রসিক ব্যক্তি মন্তব্য করতে শোনা গেছে, “আল্লাহ তুমি মালিক, কাউরো দিছ টিয়ার বাচ্চা, কাউরো দিছ শালিক, দুর্ভাগ্য আমাদের ভাগ্যে কুত্তার বাচ্চাও জুটল না।!”
“সর্বাঙ্গে ব্যথা মলম লাগাব কোথায়?” ইদানিং সংবাদপত্রে দেখা যায়, ইয়াবাসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও আটক হচ্ছে। মনে হচ্ছে ইয়াবা পাঁচার অপ্রতিরোধ্য। “যেখানে মাতবরের পায়ে কাঁদা, সেখানে মাছ চোরের বিচার দিব কারে?”
কথায় আছে “কর্তার অপকর্মে দোষ নাই” প্রবাদে আছে “যত দোষ, নন্দ ঘোষ” ইদানিং ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাহীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও ইয়অবা পাঁচারে জড়িয়ে পড়ার খবর প্রতিনিয়তই বাজারে সাওর হচ্ছে। তাদের পরিবর্তনও অভাবনীয়। এক সময় গ্রামের লোকজন বলত, ‘চোরের বাড়িতে দালান উঠে না’ তবে ইদানিং ইয়াবা পাঁচারকারীদের বাড়িগুলো রাতারাতি রাজপ্রসাদে পরিণত হচ্ছে। তাদের গাড়ীর ব্যবহার দেখলে মনে হয় আমরা গরীব দেশের নাগরিক নই।
“আসিতেছে শুভ দিন, দিনে দিনে বাড়িতেছে বহু দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ।” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আমরা আশান্বিত। আশা করি, কক্সবাজারবাসী ইয়াবার মরণনেশা থেকে রক্ষা পাবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।