সোয়েব সাঈদ, রামু

একটি ব্যাটারি চালিত রিক্সা কিনে দিয়ে স্বামীকে স্বাবলম্বী করতে চেয়েছিলেন রামুর হতদরিদ্র গৃহবধূ রোকসানা আকতার। এজন্য নিজে সম্প্রতি দুটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৫০ হাজার টাকার ঋন নেন। কিন্তু রিক্সা না কিনে উল্টো গোপনে সেই টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন স্বামী মো. আরিফ। এখন এতবেশী ঋন কিভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন স্ত্রী রোকসানা আকতার। রোকসানা আকতার ৬বছর বয়সী এক ছেলের জননী। বর্তমানে তিনি চারমাসের অন্তঃস্বত্ত্বা।

এ ঘটনায় হতবিহবল রোকসানা আকতার জানালেন, টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার কয়েকদিনেও স্বামীর সন্ধান না পেয়ে একপর্যায়ে আত্মহত্যা করার জন্য বিষের বোতল হাতে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তা করে তা আর পারেননি।

হতভাগ্য রোকসানা আকতার রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের ক্যান্টনমেন্ট এলাকা সংলগ্ন আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা। তিনি জানালেন, তার পৈত্রিক বাড়ি একই ইউনিয়নের দেয়াংপাড়া এলাকায়। তারা বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। নিজেদের বাড়িটুকু নদী ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ায় স্বামী ও সন্তান নিয়ে সরকারী আশ্রয়ন প্রকল্পে ঠাঁই পেয়েছেন।

তিনি আরো জানান, প্রায় ১০ বছর পূর্বে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা, তোয়াজনগর এলাকার মো. হোছনের ছেলে মো. আরিফের সাথে তিনি কাবিননামামূলে বিয়েতে আবদ্ধ হন। বিয়ের এতদিনে তাদের মধ্যে কোন ভুল বুঝাবুঝিও হয়নি। তার স্বামী আরিফ কখনো রিক্সা চালিয়ে, কখনো দিনমজুর হিসেবে কাজ করে সংসার চালাতেন। ইতিপূর্বে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋন নিয়ে স্বামীকে দিয়েছিলেন। সেই টাকা স্বামী পরিশোধও করেন। কিন্তু সম্প্রতি একটি ব্যাটারি চালিত রিক্সা কেনার বায়না ধরেন স্বামী। সেটা বাস্তবে রূপ দিতে দুটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ৩০ ও ২০ হাজার করে মোট ৫০ হাজার টাকা ঋন নেন তিনি। সম্প্রতি তিনি বাপের বাড়িতে গেলে সেই সুযোগে বাড়িতে রাখা ৫০ হাজার টাকা নিয়ে সটকে পড়েন স্বামী আরিফ।

এরমধ্যে চট্টগ্রামস্থ শ্বাশুড় বাড়িসহ বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুজি করেও স্বামীর সন্ধান পাননি তিনি। স্বামীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনেও (নং ০১৮৪৬-৪৭৫০৪১) কল করেও বন্ধ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তিনি রামু থানায় অবহিত করেছেন। এখন ঋনের টাকা শোধ কিংবা পরিবারের খরচ মেটানো কোনটাই তার পক্ষে সম্ভব হবে না। ইতিমধ্যে ছেলের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। স্বামীকে খোঁজাখুজি এবং সংসারের খরচ মেটানোর জন্য বাড়ির পুরনো খাটটি বিক্রি করতে হয়েছে।

রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য লায়লা বেগম বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে জানান, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এমন প্রতারক স্বামীর সন্ধান দেয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। সন্ধান পেলে মোবাইল ফোন (নং ০১৮৭২০২৫৭০১) এ যোগাযোগ করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।