ডেস্ক নিউজ:
বিশ্বের অন্তত ৯৯টি দেশে শুক্রবার একযোগে নজিরবিহীন সাইবার হামলা হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু প্রতিষ্ঠান। ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) আইটি নেটওয়ার্কে বড় ধরনের সাইবার হামলায় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
বিবিসি জানায়, ডিজিটাল মুদ্রা বিট কয়েনের মাধ্যমে ৩০০ ডলার করে চাঁদা দাবি করে সাইবার হামলা হয়েছে। এর নাম ‘র্যানসমওয়্যার’। এ ব্যবস্থায় কম্পিউটার অচল করে দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। এই সাইবার হামলায় অনেক দেশের স্বাস্থ্য, টেলিকম বা যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, স্পেন, ইতালি, ভিয়েতনাম, তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশে একই ধরনের সাইবার হামলা হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সবগুলো হামলা একই সূত্রে গাঁথা।
সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি প্রতিষ্ঠানের এক গবেষক বলেছেন, তিনি ৩৬ হাজার ‘র্যানসমওয়্যার’ দেখতে পেয়েছেন, যা বিশাল ব্যাপার।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক কেভিন বোমন্ট বলেছেন, এটা বড় ধরনের সাইবার হামলা। ইউরোপজুড়ে প্রতিষ্ঠানগুলো যে মাত্রায় আক্রান্ত হয়েছে তেমনটা আগে আমি কখনো দেখিনি।
নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান চেক পয়েন্ট বলেছে, ‘র্যানসমওয়্যার’-এর এ হামলা অভিনব ধরনের। বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, হ্যাকাররা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) হ্যাকিং টুল চুরি করে সেটা দিয়ে এই হামলা চালিয়েছে।
গার্ডিয়ান জানায়, ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) আইটি নেটওয়ার্কে বড় ধরনের সাইবার হামলায় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। লন্ডন, ব্ল্যাকবার্ন, নটিংহ্যাম, গ্যালওয়ে ও হার্টফোর্ডশায়ারসহ বিভিন্ন এলাকায় এনএইচএসের হাসপাতাল ও ট্রাস্টগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম থমকে গেছে এ জটিলতার কারণে।হামলায় ইমেইল ব্যবহার করা হয়
এসব হাসপাতালের কর্মীরা তাদের নেটওয়ার্কে রোগীদের তথ্য দেখতে পারছেন না। রোগীদের নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হচ্ছে অন্য হাসপাতালে। অনেক জায়গায় জরুরি চিকিৎসা ছাড়া অন্য সব সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের সাক্ষাতের সূচিও বাতিল করা হয়েছে। এনএইচএস ইংল্যান্ড জানিয়েছে, তারা এ জটিলতা সারাতে কাজ করছে এবং শিগগিরই এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।
যুক্তরাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোর চারটি ইউনিটের মধ্যে এনএইচএস ইংল্যান্ড সবচেয়ে বড় সংস্থা, যার আওতাধীন হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়।
গার্ডিয়ান লিখেছে, এনএইচএস নেটওয়ার্ক আক্রান্ত হওয়ার পর এই সিস্টেমে যুক্ত কম্পিউটারগুলোর স্ক্রিনে একটি পপ-আপ মেসেজ ভেসে ওঠে, যেখানে নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে ‘মুক্তিপণ’ দাবি করা হয়।
টুইটারে এনএইচএসের একজন কর্মীর পোস্ট করা একটি ছবিও গার্ডিয়ান প্রকাশ করেছে, যেখানে কম্পিউটার স্ক্রিনে ‘র্যানসমওয়্যার’ আক্রমণের বার্তা দেয়া হয়েছে।
এক এনএইচএস কর্মীর বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টায় প্রথমে তাদের ইমেইল সার্ভার ক্র্যাশ করে। এরপর নেটওয়ার্কের ক্লিনিক্যাল ও পেশেন্ট সিস্টেমও অচল হয়ে যায়। কম্পিউটার স্ক্রিনে আসা একটি বিটকয়েন ভাইরাস পপ-আপে বলা হয়, মেশিনের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে ব্যবহারকারীকে ৩০০ ডলার দিতে হবে। এরপর এনএইচএস ট্রাস্টের সব কর্মীকে তাদের কম্পিউটার বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
ইউরোপে স্পেনের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ কোম্পানি আইবার্ডরোলা এবং গ্যাস ন্যাচারাল কোম্পানি আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে।
স্পেনের টেলিকম ও জ্বালানি কোম্পানি, যুক্তরাষ্ট্রের ডেলিভারি কোম্পানি ফেডএক্স এই হামলার শিকার হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা অ্যাভাস্ট জানিয়েছে, ওয়ানাক্রাই এবং ভ্যারিয়্যান্ট নামের র্যানসমওয়্যারের শিকার ৭৫ হাজার কম্পিউটার আক্রান্ত হওয়ার তথ্য তারা পেয়েছেন।
এদিকে, এই র্যানসমওয়্যারে বিট কয়েনের যেসব ওয়ালেটে অর্থ জমা দিতে বলা হয়েছে, সেখানে নতুন করে মোটা অর্থ জমা পড়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।