বিশেষ প্রতিবেদক :
পরিবেশ ও প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন (ইসিএ) এলাকা হওয়া সত্বেও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত তীরবর্তী কলাতলী মোড় এলাকায় কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারী খাস খতিয়ানের বিপুল পরিমান জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে কিছু অসাধু ভুমিদস্যু সিন্ডিকেট।
অথচ, পর্যটন নগরীর এই প্রবেশমুখসহ বিশাল সমুদ্র সৈকত এলাকাটিকে ঘিরে বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা থাকা সত্বেও এখানকার প্রায় ১৫টি খতিয়ানের সরকারী জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে রাতারাতি।
স্থানীয় সচেতন বাসিন্দাদের অভিযোগ-কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) কিংবা জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ সরকারী জমি দখলের এসব অবৈধ কর্মকান্ড দেখেও না দেখার ভান করে আছেন। তারা বলছেন, সরকারী জমিতে প্রভাবশালীদের গড়ে তোলা বিতর্কিত বহুতল ভবন এবং অসামাজিক কর্মকান্ডের কারখানা খ্যাত হোটেলগুলো দ্রুত উচ্ছেদ না করা না হলে কক্সবাজারের মারাত্বক সৌন্দর্যহানী হবার আশঙ্কা রয়েছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের আধুনিক পর্যটন নগরীর উপর।
এদিকে সরকারী জমিগুলো দখল মুক্ত করার দাবী জানিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন এলাকাবাসী। আবুল হোছাইন নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা জনস্বার্থে এ আবেদন করেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা মৌজার (বর্ধিত পৌরসভা) বিএস খতিয়ান নং-১ এর বিএস ঃ ২০০৩৯, ২০০৪৪, ২০০৪৬, ২০০৪৭, ২০০৩৭, ২০০৫০, ২০০৬০, ২০০৪১, ২০০৪২, ২০১৬৩, ২০০৫৯, ২০০৫৮, ২০০৬৭, ২০০৬৮ ও ২০০৬২ দাগের খতিয়ানগুলোতে বিপুল পরিমান সরকারী খাস জমি রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য কোটি কোটি টাকা।
ইতোমধ্যে এসব খতিয়ানের বিপুল পরিমান জায়গা দখল হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, দখলীয় জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল ভবন। অথচ, সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন ইসিএ এলাকায় এমন বহুতল ভবন নির্মান সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ বলছেন পরিবেশবীদরা।
তারা বলছেন, এসব খাস জমি প্রভাবশালীদের কবল থেকে দখলমুক্ত করা না গেলে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হবার আশঙ্কা রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা যায়, স্থানীয় আবু মোকারম, মুকিম, আলী আকবর, আবু সওদাগর, জহির সওদাগর, আমিন ইন্টারন্যাশনাল, রেইন ভিউ কটেজ, সী-কক্স কটেজ, সী-উত্তরা, প্যাট্টানাইট ডেভেলাপার, আমিন ও জালিয়াত হাকিমের নেতৃতে নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান উল্লেখিত খতিয়ানের ভেতর থেকে বিপুল পরিমান সরকারী জমি দখল করে রেখেছে। যে জমিগুলোর বর্তমান মূল্য কোটি কোটি টাকা। বিশেষ করে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের দিকে ওই এলাকায় জমির মুল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে দখলবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠে এবং এসব জমি দখল করে নেয়।
অভিযোগ আছে-ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তথ্য গোপন করে এসব জমি দখলে নিতে দখলবাজদের সব ধরনের সহযোগিতা করেন।
এর প্রমান হিসেবে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট ভুমি অফিসার ও স্থানীয় প্রশাসন নিজেদের জমি বেদখল হয়ে যাওয়ার মর্মান্তিক দৃশ্য নিজ চোখে দেখেও রহস্যজনকভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালাননা। উল্টো দখলবাজ ভুমিদস্যুদের হুমকি-ধুমকিতে অনেকটা অসহায়ভাবে দিনাতপাত করছেন এলাকার অনেকেই।
স্থানীয়রা জানায়, সরকারী জমি দখলপূর্বক প্রতিনিয়ত হোটেল ও কটেজ নির্মাণ করে সেখানে তারা নানা ধরনের অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে নিজেদের মতো। তাই পুলিশ প্রশাসন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান চালালেই এসব অপরাধের প্রমান মিলবে বলে আশা করছেন সচেতন মহল।
এদিকে দখলদার হিসেবে অভিযুক্তদের দাবী-স্থাপনা নির্মান করা জমিগুলো বৈধ।
কক্সবাজার সদরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) পঙ্কজ বড়–য়া উক্ত জমি উদ্ধারে শিঘ্রই অভিযান পরিচালনা করবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
অন্যদিকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেঃ কর্ণেল (অবঃ) ফোরকান আহমদ বলেন, “একদিকে ইসিএ এলাকা অন্যদিকে সরকারী খাস খতিয়ানের জমির উপর স্থাপনা নির্মাণ খুবই দুঃখজনক। তিনি জানান, দখলবাজরা যতোই শক্তিশালী হোকনা কেন, এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে”।