এম.এ আজিজ রাসেল:
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলার পর্যটন কেন্দ্র সাজেক ইউনিয়নে চরম অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। আয়-উপার্জন ও কর্মস্থানের অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় দু’য়েক মাস আগেই সেখানে খাদ্য অভাব দেখা দেয়। এখন চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, সেখানকার খাদ্য সংকট মোকাবেলায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাঘাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা অভাবগ্রস্তদের মাঝে চাল বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। বর্তমানে সাজেক ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি গ্রামের দুই হাজারের অধিক লোক খাদ্যাভাবে ভোগছেন। তাদের বেশিরভাগ মানুষ পাহাড়ি জঙ্গলের আলু ও কলাগাছ খেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। তাছাড়া বাঘাইছড়ি সদর ও খাগড়াছড়ি থেকে চাল নিয়ে সেখানে প্রতি কেজি চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৬০-৯০ টাকায়। স্থানীয়রা জানান, ওই ইউনিয়নের উদোলছড়ি, নতুন জৌপুই, পুরান জৌপুই, নিউথাংমাং, নিউলংকর, ব্যাটলিংপাড়া, ব্যাটলিং তারুংপাড়া, কমলাপুর, লংত্যাং, অরুণপাড়া, কাছ্যাপাড়া, শিয়ালদাই, গন্ডাছড়া, থলছড়া, এগাজ্যাছড়ি, মোন আদাম, ধাব আদাম, কলকপাড়া, বাদলছড়ি, নিমুইপাড়া, হাগড়াকেজিং, দুলুছড়ি, দুলবন্যাসহ বিভিন্ন গ্রামে চরম খাদ্য সংকট চলছে। স্থানীয়দের তথ্যমতে, সাজেকে বসবাসকারী পাহাড়ি লোকজন জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল। এ জুম চাষাবাদ হয় বছরের এক মৌসুমে। জুমচাষে যেসব ধান বা ফসল উৎপাদন হয় সেগুলো দিয়েই পার করতে হয় পুরো বছর। গত মৌসুমে জুম চাষের খাদ্যশস্য ভালো ছিল না । জুম চাষ কম উৎপাদন সংকটের মূল কারণ। গত তিন মাসে জুম্ম-কৃষক পরিবার গুলোতে খাদ্য সংকট চলছে।
দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা তাদের জীবিকা বজায় রাখে বনজ সম্পদ ও বাঁশ সংগ্রহের পাশাপাশি তৃণভূমি এবং পাহাড়ারে ঢালগুলিতে ধান উৎপাদন করে। সাজেকের বেশীরভাগ গ্রাম যোগাযোগের জন্য অনুপযোগী। যার জন্য সেখানে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বিক্রয় মূল্য স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ গুণ বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক মৌসুমে মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ায় ব্যাপকহারে কমেছে ফসলের উৎপাদন। ফলে এবার চাষাবাদের শুরুর দিকেই তাদের পড়তে হয়েছে চরম খাদ্য সংকটে।
সাজেকের ব্যাটলিং তারুংপাড়ার কাউলা ত্রিপুরা জানান, দুইদিন হেঁটে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে ত্রাণের চাল নিতে গত শনিবার গেছেন ইউনিয়ন অফিসে। তার পরিবারে খাদ্য সংকট নিবারণে এতদূর হেঁটে গিয়ে শেষে মিলেছে ১০ কেজি চাল। এতেও খুব খুশি তিনি। শুধু কাউলা ত্রিপুরা নন, এভাবে খাদ্য সংকটের দুর্ভোগের কথা বর্ণনা করেন, সাজেকের ব্যাটলিং উদোলছড়িপাড়ার নতুন কুমার ত্রিপুরাসহ ত্রাণের চাল নিতে যাওয়া অভাবগ্রস্থ মানুষজন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বড়ঋষি চাকমা বলেন, অভাবগ্রস্থ মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তার জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয়, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি দফতরে আবেদন দেয়া হয়। কিন্তু ইতিবাচক কোনো সাড়া মেলেনি। শেষে আমরা উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে যৌথভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অভাবগ্রস্ত পরিবারদের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ৫শ’ পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ করেছি নিজস্ব উদ্যোগে।
এদিকে অসহায় এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজারে বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া কিছু শিক্ষার্থী। তারা শিক্ষার্থী, নানা পেশার মানুষের কাছ থেকে সাজেকের মানুষের জন্য আর্থিক সহযোগিতা সংগ্রহ করছে। সংগ্রহকৃত টাকা নিয়ে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করে সাজেকের মানুষের জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছে। অনেক পরিবারকে দেয়া হচ্ছে আর্থিক সহযোগিতা। তাই আর্ত-মানবতার সেবায় দুর্গম এলাকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীরা। নি¤েœ সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা উল্লেখ করা হলো- ১- বিকাশ পার্সোনাল – ০১৮৭৯১৩৩৩৩৮ (রুদ্র)২- ডাচ-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং (রকেট)- ০১৬৮৩৪১৮৪১৬৪ (জুনায়েদ), ৩- ডাচ-বাংলা ব্যাংক একাউন্ট- ধ/প ১৪১.১০১.১৬১০৪২ ( ( Md. jonaet rubel) বিশেষ দ্রষ্টব্য- টাকা দেয়ার পর কল করে জেনে নেয়া যাকে। এছাড়া সাথে আপনার নাম, ঠিকানা ও কত টাকা দেয়া হয়েছে তা মেসেজ করে পাঠিয়ে দিলে ভাল হয়। পরবর্তীতে ত্রাণ এর আর্থিক সহযোগিতা লিস্টসহ এই সব তথ্য পোস্ট করে দেয়া হবে তাদের ইভেন্টে। যেকোনো প্রকার তথ্যের জন্য ফেইসবুকে বা ইমেইল এ যোগাযোগ যাবে। 1-https://web.facebook.com/thowai.wongrakhine ( Thowai Nin ) 2- thowainin@gmail.com|
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।