ডেস্ক নিউজ:
সাইবার নিরাপত্তাসাইবার অপরাধের সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছেন নারীরা। আর এই সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে বাঁচার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে সচেতনতা। সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেনতাই একজন নারীকে সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। এছাড়া যতো দ্রুত সম্ভব বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাইবার অপরাধীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে ব্ল্যাকমেইল, হুমকি-ধামকি দেওয়া, আইডি হ্যাকসহ নানা ধরনের অপরাধ ঘটাচ্ছে। এই অপরাধের শিকার বেশিরভাগই হচ্ছেন নারী। তবে কী পরিমাণ নারী সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন তার কোনও সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ভুক্তভোগীদের ৭০ ভাগই নারী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হলে সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে নিজেদের বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করেন সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ২০১৬ সালের আগস্টে সিটিটিসিতে এ বিভাগটি চালু হয়। তখন সাইবার অপরাধ নিয়ে তাদের কাছে অভিযোগ আসে ১৬টি। কিন্তু এ বছর প্রথম চার মাসে অভিযোগ এসেছে ৯৬ টি। এসব অভিযোগের অধিকাংশ হলো ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে হয়রানি, আইডি হ্যাক করা এবং আইডি ক্লোন করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে ই-মেইলে হুমকি দেওয়া।
সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার কথাও জানান সাইবার অপরাধ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। তাদের মতে, কোন আইডি থেকে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে তা বের করার জন্য প্রথমেই আইপি অ্যাড্রেস বা ইন্টারনেট প্রটোকল অ্যাড্রেস শনাক্ত করতে হয়। কম্পিউটার বা মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেটে যুক্ত হতে হলে এই আইপি অ্যাড্রেসের প্রয়োজন হয়। আর এই আইপি অ্যাড্রেসের বিপরীতে কোন ব্যক্তি কোন সময় ইন্টারনেট সেবা নিচ্ছে তা রেকর্ড রাখার মাধ্যম হলো ‘আইপি লগ’। কিন্ত ইন্টারনেট সার্ভিস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেই আইপি লগের রেকর্ড রাখছেন না। ফলে আইপি শনাক্ত হলেও আইপি লগে রেকর্ড না থাকায় কে কোন আইপি কোন সময় ব্যবহার করে ফেসবুক বা অন্যান্য সেবার সুযোগ নিচ্ছে তা শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এক্ষেত্রে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) আইপি লগের রেকর্ড রাখার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
এ ব্যাপারে সিটিটিসি’র সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার মো. আলিমুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একদিকে আমরা যেমন ডিজিটাল হচ্ছি, অন্যদিকে এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। সাইবার ভুক্তভোগীদের মধ্যে নারী হচ্ছে ৭০ ভাগ। বাকিরা পুরুষ।
সংঘটিত সাইবার অপরাধের সব অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যাচ্ছে না বলেও মনে করেন সিটিটিসির উপ কমিশনার আলিমুজ্জামান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আগে এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগ দেওয়া বা বিচার পাওয়ার কোন প্ল্যাটফর্ম ছিল না। এখন ডিএমপি ছাড়াও সিআইডি, র্যাব ও থানাগুলো কাজ করছে সাইবার অপরাধ ঠেকাতে। কিন্তু অনেক নারী লোকলজ্জার ভয়ে অভিযোগ করেন না। ফলে তারা বারবার সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। যখন কোনও গত্যন্তর থাকছেনা তখনই কেবল তারা অভিযোগ নিয়ে আসছেন।
আলিমুজ্জামান আরও বলেন, সবার আগে ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। ছবি ও ভিডিও আপলোডের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। বন্ধু বানানোর ক্ষেত্রেও চেনা-পরিচিতের বাইরে না যাওয়াই ভালো।
সাইবার ট্রাইব্যুনালের সরকার পক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পর গত চার বছরে মামলা হয়েছে ৫৬১টি। আর এসব মামলার অধিকাংশ ভুক্তভোগী হচ্ছেন নারী।
এদিকে, সাইবার জগতে মেয়েদের ঝুঁকির বিষয়টি সামনে রেখে ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করে সরকার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের কন্ট্রোলার অব সার্টিফায়িং অথরিটিজ (সিসিএ) এ কর্মশালাগুলোর তদারক করছে। এই কর্মসূচির আওতায় দেশের আট বিভাগের ৪০টি স্কুলের নবম-দশম শ্রেণির প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
কর্মশালাগুলোতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিভাবে আইডি নিরাপদ রাখা যায় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাসওয়ার্ড ব্যবহার, আইডিতে ছবি ব্যবহারে সতর্কতা, কোনও ভাবেই কারও কাছে নিজের আইডির পাসওয়ার্ড শেয়ার না করাসহ সাইবার জগতে সুরক্ষিত থাকার বিভিন্ন কৌশল শেখানো হচ্ছে তাদের। কোথায় গেলে সাহায্য পাওয়া যাবে সে বিষয়েও শিক্ষার্থীদের অবগত করানো হচ্ছে।
আইসিটি বিভাগের যুগ্ম সচিব আবুল মনসুর মো. শারফুদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা মূলত নবম ও দশম শ্রেণির মেয়েদের টার্গেট করে কর্মশালা পরিচালনা করছি। কারণ, এই বয়সের মেয়েরাই বেশি সাইবার অপরাধের শিকার হয়। অনেক সময় না বুঝেই তারা ভুল করে সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে। তাদেরকে সচেতন করা গেলে এই সমস্যা অনেক কমে আসবে। সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে ৯৯৯ এ ফোন করলে প্রাথমিক রেসপন্স পাওয়া যাবে। এছাড়া পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।