বাংলাট্রিবিউন:
অফিস নেই, পুঁজিও নেই। সম্বল শুধু আইডিয়া আর একটি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার। এতে ভর করেই বাসা-বাড়িতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ কোনও উদ্যোগ। আর সেসব উদ্যোগ বা স্টার্টআপই এখন দেশের গর্ব। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও এর শক্ত অবস্থান।
বর্তমান সময়ের এসব উদ্যোগ নিয়ে দেশে শুরু হয়েছে স্টার্টআপ সংস্কৃতি। ডক্টরোলা লিমিটেড, টেন মিনিট স্কুল, প্রেনিউর ল্যাব, ইয়ুথ অপুরচুনিটিস, মায়া আপা, দপ্তর, টিএএন নামের স্টার্টআপগুলো একেবারে ছোট পরিসরে শুরু হলেও এখন অন্যদের সামনে উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
এসব উদ্যোগকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সরকারও পাশে দাঁড়াচ্ছে। আইসিটি বিভাগ বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে নতুন নতুন উদ্যোগের সন্ধান করছে। দেশে নির্মিতব্য ১২টি হাইটেক পার্কে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ী স্টার্টআপ এর জন্য জায়গা বরাদ্দসহ বিভিন্ন আয়োজন রেখেছে। এমনকি ভেঞ্চার ক্যাপিটালগুলোও দেশের সম্ভাবনাময় স্টার্টআপে বিনিয়োগ করছে এবং বড় ধরনের বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে।
এ প্রসঙ্গে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘নতুন উদ্যোগ তৈরিতে আমাদের তরুণরা অনেক ভালো করছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমাদের দেশ থেকেই গুগল, ফেসবুকের মতো স্টার্টআপের জন্ম হবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘স্টার্টআপ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা, ইনোভেশন ফান্ডের ব্যবস্থা, নির্বাচিত উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিতে সহায়তা দেওয়া, হাইটেক পার্কে স্টার্টআপগুলোর জন্য জায়গা বরাদ্দসহ বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’ উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে, যোগ করেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
সম্প্রতি আলোচিত স্টার্টআপ ইয়ুথ অপুরচুনিটিস (ওয়াইও) এর একটি অ্যাপ উদ্বোধনকালে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ওয়াইওর কাজ দেখে রাজধানীর কাওরান বাজারের জনতা টাওয়ারে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। ইয়ুথ অপুরচুনিটিস হলো একটি ওয়েবসাইট ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম, যে প্ল্যাটফর্ম বিশ্বের ২০০টি দেশের তরুণরা ব্যবহার করেন। ইয়ুথ অপুরচুনিটিসের উদ্যোক্তা ওসামা বিন নূর বলেন, ‘আমাদের এই উদ্যোগের জন্ম আমাদের বাসায়। বাসা থেকেই আমরা একে আলোর মুখ দেখাতে পেরেছি। এখন অফিসের জন্য জায়গা পেয়েছি, এটা আমাদের জন্য আনন্দের। ইয়ুথ অপুরচুনিটিস নিয়ে আগামী দিনগুলোতে আমাদের আরও অনেক পরিকল্পনা রয়েছে।’
এদিকে, প্রেনিউর ল্যাবের শুরু এবং বেড়ে ওঠার গল্পটাও প্রায় একই রকম। প্রেনিউর ল্যাবের প্রধান নির্বাহী আরিফ নিজামি বলেন, ‘প্রেনিউরল্যাবের আইডিয়াটার শুরুটা এলাকার এক মাঠে গল্প করতে করতে। আমি তখন গুগল বাস প্রজেক্টে চাকরি করি। বাসা থেকেই শুরু হল ল্যাবের কাজ। আরেক বন্ধু বিল্লালও তার বাসা থেকে কাজ করে দেয়। তারপর আমরা এমসিসি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নতুন অফিসের উপরের খালি ফ্লাটে উঠি। সেখানে আরেকটি কোম্পানি- ফ্লো ডিজিটালও আমাদের সঙ্গে ছিল। তারপর বেশ কয়েক মাস পরে আমরা নিজেদের অফিসে শিফট করি।’
আরিফ নিজামি দাবি করেন, স্টার্টআপ গড়ে তুলতে পুঁজি কোনও সমস্যা নয়, প্রয়োজন ইউনিক একটি আইডিয়া।
আরেকটি উদ্যোগ হলো- টেন মিনিট স্কুল। এটি একটি অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগ। এর উদ্যোক্তা হলেন আয়মান সাদিক। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসনে। আয়মান সাদিকরা অনলাইনে লাইভ ক্লাস নিয়ে থাকেন। তারা জানিয়েছেন, তাদের ভিউয়ার রেসপন্স ভালো।
টেন মিনিট স্কুলের ফেসবুক পেজে লাইভের মাধ্যেমে ক্লাস নিয়ে থাকেন আয়মানরা। পেজটির লাইক চার লাখের বেশি। ফলোয়ার চার লাখ ১৬ হাজারেরও বেশি। ফলে যখন লাইভের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হয় তখন হাজারও শিক্ষার্থী-ভিউয়ার সেই ক্লাসে অংশ নেন বলে জানান আয়মান।
সম্প্রতি কক্সবাজারের দ্বীপ মহেশখালীকে ডিজিটাল করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেই দ্বীপেও স্কুলের কার্যক্রম চালু করেছে টেন মিনিট স্কুল। এই স্কুলে বিভিন্ন বিষয়ে ক্লাস নেওয়া হয়।
সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি স্টার্টআপে বিনিয়োগ করছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাগুলো। এরকমই একটি প্রতিষ্ঠান বিডি ভেঞ্চার লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত হোসেন বলেন, ‘ভিসিরা অর্থ বিনিয়োগ করেন ওই প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ শেয়ারের মালিক হন। আমরা কোনও উদ্যোগে বিনিয়োগের আগে সেই উদ্যোগের মধ্যে সফল হওয়ার সম্ভাবনা, প্রতিশ্রুতি, বাস্তব সমস্যা সমাধানের পথ এসব রয়েছে কিনা তা যাচাই করে দেখি।’ ওয়েবসাইটে দেওয়া সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করেই বিডি ভেঞ্চারের বিনিয়োগ পাওয়া সম্ভব বলে জানান শওকত হোসেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।