বিদেশ ডেস্ক:
ব্রিটেনের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের পর এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটিতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইএমও) তথ্যের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়েছে, ইউরোপে প্রবেশকারী অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা এখন সর্বোচ্চ। একই সঙ্গে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, এক সময় লক্ষ্য মধ্যপ্রাচ্য হলেও এখন অঞ্চলটি থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা। তারা এখন ইউরোপমুখী হয়ে পড়েছেন।
শুক্রবার (১৯ মে) প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অভিবাসনের ইতিহাস দীর্ঘ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর দেশে বেকারত্ব ও উপসাগরীয় দেশগুলোতে তেলক্ষেত্রে শ্রমিকদের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে গেলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের গমন শুরু হয়। সৌদি আরব বা দুবাইতে কাজ করা অনেক যুবকের স্বপ্নে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ অস্থায়ী হলেও অনেকেরই অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। কারণ, অভিবাসীদের পরিবার বিত্তশালী হতে শুরু করে। বিদেশে কাজ করা মানেই সফলতায় পরিণত হয়।
সৌদি আরব ব্যাপক সংখ্যায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিচ্ছে না। যদিও ২০১৬ সালে সৌদি আরব বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। তবে এতে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের সংখ্যা বাড়েনি। এমনিতেই তেলের মূল্য কমে যাওয়ার কারণে সেখানে কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার ও খাদ্যাভাবে ভুগছেন। আবার মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে সংঘর্ষ কবলিত হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই দেশ থেকে ফেরত আসছেন। ২০১১ সালে লিবিয়ায় মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে উৎখাতের পর সংঘর্ষ শুরু হলে দেশটি থেকে ৩৬ হাজারেরও বেশি শ্রমিক ফিরে আসেন। অনেক মানবাধিকার সংগঠন শ্রমিকদের নিপীড়ন ও দুর্ভোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
গাদ্দাফির পতনের পর বিভিন্ন দেশের অভিবাসী ও শরণার্থীদের ইউরোপে প্রবেশের দরজা হয়ে উঠেছে লিবিয়া। চলতি বছর লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছেছেন প্রায় ২ হাজার ৮০০ বাংলাদেশি।
মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়োগে অনিয়মের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিবাসী শ্রমিকরা মূলত দরিদ্র ও অদক্ষ। তাদেরকে নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক অনিয়ম ও নির্যাতনমূলক আচরণ করা হয়। বড় ধরনের মানবপাচার চক্র তৈরি করে নিয়োগদাতারা মোটা অংকের ফি আদায় করে নেন। মধ্যপ্রাচ্য যেতে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের যে ব্যয় হয় তা ফিলিপাইন বা শ্রীলংকার চেয়ে অন্তত সাড়ে চারগুণ বেশি। এই অতিরিক্ত অর্থের ৬০ শতাংশ যায় দালালের পকেট। সহযোগিতাকারীরা নেয় ১৮ শতাংশ এবং নিয়োগদাতা এজেন্সি পায় ১০ শতাংশ।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের প্রবেশ নতুন নয়। ২০১৫ সালে লিবিয়া সরকার বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ বাংলাদেশি ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এছাড়া ইউরোপে যারা অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন তাদের অনেককেই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু লিবিয়া অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে মানবপাচারের নতুন রুট হিসেবে উন্মুক্ত হয়েছে। ফলে এই রুট দিয়ে আরও বেশি পরিমাণে বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছেন।
এসব অভিবাসী সংঘাত থেকে বাঁচতে নয়, দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি পেতে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপ পৌঁছার চেষ্টা করছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এর আগে গত ৬ মে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, উত্তর আফ্রিকা ও উপসাগরীয় দেশগুলোতে বাংলাদেশি অদক্ষ শ্রমিকরা ধনী দেশের শ্রমিকদের তুলনায় খুব কম মজুরি পায় এবং খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে।
উল্লেখ্য, কয়েক বছর ধরে ইউরোপে আশ্রয় নেওয়ার জন্য লিবিয়া থেকে নৌকায় চেপে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছে বেশিরভাগ শরণার্থী ও অভিবাসী। তবে এই বিপদসঙ্কুল পথে পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতি বছর মৃত্যু হচ্ছে কয়েক হাজার মানুষের। আইওএম জানিয়েছে, চলতি বছর ৪২ হাজার ৯৭৪ জন মানুষ সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ প্রবেশ করেছেন। আর নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৮৯ জন। গত বছর সাগর পাড়ি দিতে মৃত্যু হয়েছিল ৫ হাজার ৯৮ জনের। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।