তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম
পার্ক নয় যেন প্রেম কেন্দ্র। শিশু পার্কের নামে প্রেমিক প্রেমিকাদের পদচারণায় পার্কটি এখন পরিণত হয়েছে ডেটিং স্পটে। তাদের উৎপাতে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। পার্কে ঢুকলেই চোখে পড়ে যুগলদের। জোড়ায় জোড়ায় কপোত কপোতিদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখে অনেকটা বিব্রতকর হন সাধারণ দর্শণার্থি এবং শিশুদের সাথে আসা অভিবাবকরা। শুধু তাই নয়, শিশুদের রাইডের মধ্যে জুটিরা অন্তরঙ্গ মুহুর্ত সময় কাটায়। এই দৃশ্যে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ শিশু পার্কের। চট্টগ্রাম শহরে আগ্রাবাদ শিশু পার্কের সুনাম ছিলো সর্বত্র। সেই সুনাম এখন আর নেই বললে চলে। কতৃপক্ষের উদাসিনতা ও অবহেলায় পার্কের এখন বেহাল অবস্থা। যে লেকটি দর্শনাথিদের মন কাড়তো সেটিও সময় মতো পরিস্কার না করার কারণে নোংরা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। লেকের মধ্যে স্থাপন করা পাথরের সাদা পদ্মফুল ও ব্যাঙগুলো ধূলা-বালিতে কালো হয়ে আছে। লেকের একপাশে দু’টি নষ্ট বোট ফেলে রাখা হয়েছে। বেশিরভাগ রাইডই পরিচর্যার অভাবে বিবর্ণ হয়ে গেছে। যে কটি সচল সেগুলোরও রং উঠে যাচ্ছে। ফলে ক্রমেই কমে যাচ্ছে আগ্রাবাদ শিশু পার্কের দর্শণার্থি।
শনিবার (২০ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকের আশপাশে দেয়ালে কারুকাজ করা রং গুলো উঠে গেছে। আগ্রাবাদ শিশু পার্ক লেখা নামটির রং মুছে গেছে। বিকল হয়ে আছে বেশ কয়েকটি রাইড। আর এ রাইডগুলোতে খোশ গল্পে মেতে উঠেছে জুটিরা। প্রায় সবগুলো রাইডের ভেতরেই একাধিক জুটিকে অন্তরঙ্গ মুহুর্ত সময় কাটাতে দেখা গেছে। এক মাত্র পার্কের কিডস জোনটি তালা মেরে রাখা হয়েছে। শিশুরা এ জোনের সামনে গিয়ে মা-বাবাকে ঢোকার অবদার করেও তালা বন্ধ রাখার কারণে মন খারাপ করে ফিরতে হয়। পার্কের পাশের বিশাল মাঠটি অঘোষিতভাবে জুটিদের অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর স্থানে পরিণত হয়েছে। বেশ কয়েকটি জুটিকে এ মাঠের বিভিন্ন গাছের কোণে বসে আলাপরত দেখা যায়। অথচ যারা মাঠের দায়িত্বে রয়েছে তাদের কোন নজর নেই। তারা নিজেদের মতো করে ঘুরছে আর গল্প করছে।
রাইডে দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি জানান, আগের চাইতে দর্শনার্থি অনেক কমে গেছে। ছুটির দিন কিছু দর্শনার্থি হয়। আর বেশির ভাগ কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা আসে। তবে এ পার্কে নিয়মের বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই বলে জানান।
ছেলেকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে আসা এডভোকেট রোকন আরা হ্যাপি বলেন, বাচ্ছাদের অধিকাংশ রাইডতো অচল পড়ে আছে। তাছাড়া যে কয়টি আছে তাতেও বড়দের দখলে। এটা শিশু পার্ক না করে বড়দের পার্ক করলে ভালো হতো। ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেক দর্শনার্থী পার্ক থেকে বের হয়ে যেতেও দেখা গেছে। একটু সামনে যেতে চোখে পড়লো, এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা নিষেধ। কিন্তু মাস্তব চিত্র ভিন্ন। ওই সাইনবোর্ডের পাশেই ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। তাছাড়া গলা কাটা দাম নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে পার্কের ভিতর অবস্তানরত রেস্টুরেন্টগুলোর বিরুদ্ধে। বাইরের দোকানের চেয়ে দ্বিগুণ দাম নিচ্ছে রেস্টুরেন্টগুলো। দশ টাকার চিপস ১৫ টাকা, পনেরো টাকার পানি ২০ টাকা, ২০ টাকার আইসক্রিম ৩০টাকা। প্রায় সব পণ্যর উপর ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা বারতি গুণতে হচ্ছে সাধারণ দর্শণার্থিদের। পার্ক সকাল ১০ টা তেকে রাত ৮ পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ মূল্যে প্রতিজন দাম ৪০ টাকা। যার মধ্যে যে কোন একটি রাইডে চড়া যাবে।
১৯৯১ সালে আগ্রাবাদের জাম্বুরি মাঠ সংলগ্ন ৮ দশমিক ৮৬ একর জমি সিটি করপোরেশনকে ইজারা দেয় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ২০০০ সালে সিসিসির সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তিতে সেখানে শিশু পার্ক বানায় আনন্দমেলা লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যার নাম করণ করা হয় আগ্রাবাদ শিশু পার্ক।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।