ডেস্ক নিউজ:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে খসড়া রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার (২৩ মে) প্রধান নির্বাচন কমিশন কে এম নুরুল হুদা এ রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ইসির রোডম্যাপে সাতটি সুনির্দিষ্ট করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এই কাজগুলো কখন কিভাবে সম্পন্ন করা হবে, তার সময়সীমা বেঁধেও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়ের একটি সূত্র। জানা গেছে, এই সাতটি বিষয়ের বাইরেও আরও কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে কমিশন।
ইসি বলছে, নির্বাচনকে অর্থ ও পেশী শক্তির অবৈধ ব্যবহারমুক্ত রেখে সব রাজনৈতিক দলের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরির লক্ষ্যে এই রোডম্যাপ তৈরি করে সেই অনুযায়ী পথ চলবে।
আগামী ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনি সময়সীমা নির্ধারণ করে গৃহীত ইসির খসড়া রোডম্যাপ পর্যলোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুলাই থেকে তারা রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়ন শুরু করবে।
কমিশনের প্রথম কাজ হবে আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার। জুলাইয়ে তারা এ কার্যক্রমে হাত দেবে। কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ওই মাসেই বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো চিহ্নিত করবে।
ডিসেম্বর মাসে তারা খসড়া আইনগুলো প্রণয়ন করবে। এর আগে এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্টদের থেকে মতামত বা সুপারিশ গ্রহণ করবে। এরপর আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে সব আইন চূড়ান্ত করবে।
রোডম্যাপ অনুযায়ী, ইসির দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে নির্বাচনি প্রক্রিয়া সহজ ও যুগোপযোগী করাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। এর অংশ হিসেবে জুলাইয়ের শেষ দিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা আলোচনা শুরু করবে। নিবন্ধিত রাজনতিক দলের বাইরেও অন্য দলগুলোকে সংলাপে ডাকার পরিকল্পনা ইসির রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া, গণমাধ্যমের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি সংস্থা, দাতাগোষ্ঠী ও সাবেক নির্বাচন কমিশনারদেরও সংলাপের জন্য ডাকা হতে বলে জানা গেছে। এ বছরের জুলাই থেকে শুরু করে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।
ইসির কর্মপরিকল্পনার তিন নম্বরে রয়েছে সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ। এ লক্ষ্যে ইসি এ বছর আগস্ট থেকে কার্যক্রম শুরু করবে। ওই মাসেই বিদ্যমান নীতিমালা পর্যালোচনা করে সীমানা পুনঃনির্ধারণের নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সেপ্টেম্বর মাসে তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে অক্টোবরে বিশেষজ্ঞদের কারিগরি সহযোগিতায় সীমানা নির্ধারণ করে খসড়া প্রকাশ করবে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে এ বিষয়ে দাবি/আপত্তি ও সুপারিশ গ্রহণ করে ফেব্রুয়ারিতে তা নিষ্পত্তি করা হবে। পরে এপ্রিলে ৩শ আসনের চূড়ান্ত সীমানার গেজেট প্রকাশ করা হবে।
কমিশনের চতুর্থ কার্যক্রম হলো ভোটার তালিকার হালনাগাদ। এ জন্য এ বছরের সেপ্টেম্বরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালানাগাদের তথ্য সংগ্রহ, ডিসেম্বরে এসব তথ্য ডাটবেজে অন্তর্ভুক্ত করা এবং আগামী বছর ১ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ ও এরপর আপত্তি/দাবি নিষ্পত্তি করে ওই মাসেই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে ভোটার তালিকার মুদ্রণ ও সিডি আকারে বিতরণের কাজও শেষ হবে।
রোডম্যাপ অনুযায়ী ইসির পঞ্চম কাজটি হচ্ছে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ। জুন ২০১৮ থেকে শুরু করে আগস্টের মধ্যে কেন্দ্র চিহ্নিত করে এ বিষয়ে দাবি/আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তির কাজ শেষ করা হবে। তফসিল ঘোষণার পরপরই কেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করা হবে। পরে এসব কেন্দ্রের তালিকা রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হবে।
ইসির ষষ্ঠ কাজটি হলো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও নতুন দলকে নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টির জন্য নিবন্ধন দেওয়া। এ কাজের অংশ হিসেবে কমিশন এ বছর অক্টোবরে প্রথমে বিদ্যমান নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর শর্ত পালনের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে। তথ্য পর্যালোচনা করে নভেম্বর মাসে এসব দলের নিবন্ধন বহাল রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এছাড়া অক্টোবর মাসে নতুন দলের নিবন্ধনে আবেদন আহ্বান করা হবে। আবেদন যাচাই-বাছাই করে যোগ্য দলগুলোকে জানুয়ারি মাসে নিবন্ধন দেওয়া হবে। পরে এপ্রিল মাসে নতুন-পুরনো নিবন্ধত দল মিলিয়ে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে ইসি।
রোডম্যাপের সপ্তম কাজটি হলো সক্ষমতা বাড়ানো। এর অংশ হিসেবে ইসি নির্বাচনি কর্মকর্তা, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ ও ব্রিফিংয়ের আয়োজন করবে। আগামী বছর জুলাই মাসে শুরু হয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এই কার্যক্রম অব্যহত থাকবে।
এছাড়া, রোডম্যাপে নির্বাচনি ব্যবস্থা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় সময় নষ্ট করার প্রবণতা কমাতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অভিযোগ গ্রহণ, মনোনয়ন দাখিল, ভোটার নম্বর ও ফলাফল দেওয়া, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমান সুযোগ তৈরি, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণের সুযোগ, ভোটারদের ভীতিহীন পরিবেশে ভোট কেন্দ্রে যাওয়া ও ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।