সারা বছর থাকে দখল আর পরিত্যক্ত
শাহেদ মিজান, সিবিএন:
দুর্যোগকালে আশ্রয়ের জন্য কক্সবাজারের আট উপজেলার উপকূলীয় আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। দুর্যোগকালীন অন্তিম সময়ে এই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোই উপকূলের মানুষের শেষ ভরসা। কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই! সারা বছর এই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই প্রভাবশালীদের দখলে থাকে। বাদ বাকি গুলোও থাকে পরিত্যক্ত । ফলে হঠাৎ দুর্যোগ সামনে এসে পড়লে দখলে থাকা আশ্রয় কেন্দ্রগুলো দখলমুক্ত করতে রীতি মতো হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে।
একই ভাবে পরিত্যক্ত থাকা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোও ব্যবহার উপযোগী করতে একই রকম হিমশিম খেতে হয়। তারপরও পুরো ব্যবহার উপযোগী করা যায় না আশ্রয় কেন্দ্রগুলো। এই দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ চলে আসলে প্রশাসন কখনো ব্যবস্থা নেই।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর নজিরবিহীন প্রাণহানির পর দেশের উপকূলবর্তী এলাকাগুলো ঘূর্ণিঝড় সহনশীল আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। সৌদি আর্থিক অনুদানে নির্মিত এই প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারের আট উপজেলাও আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে কক্সবাজার সদরে ৬১টি, মহেশখালীতে ৮৫টি, পেকুয়ায় ৭২টি, টেকনাফে ৫৯টি, উখিয়ায় ৪১টি, চকরিয়ায় ৮৫টি। কুতুবদিয়ায় প্রায় ৬০টি ও রামুর তিন ইউনিয়নে প্রায় ২০টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্মাণের পর থেকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো দেখভালে সরকারের কোনো লোকবল নিয়োগ করেনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও বাধ্যমূলক দেখভালের দায়িত্ব নেই। ফলে এসব আশ্রয় কেন্দ্রগুলো অভিভাবকহীন থেকে যায়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অধিকাংশ আশ্রয় কেন্দ্র করে বসে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এই তালিকায় রয়েছে স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং এলাকা মোড়ল শ্রেণির লোক। তারা আশ্রয় কেন্দ্রগুলো দখল সেখানে নানা ধরণের কাজ পরিচালিত করেন। এর মধ্যে অধিকাংশ আশ্রয় কেন্দ্রকে বানানো হয়েছে গরু-মহিষ পালনের ভাগাড়। এছাড়াও বোটের সরঞ্জাম, জালসহ নানা পরিত্যক্ত জিনিসপত্র রাখার গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এমনকি মৌসুমে লবণ ও ধান গুদামজাতও করা হয়।
অন্যদিকে প্রভাবশালীদের দখলমুক্ত থাকা প্রায় ৪০ শতাংশ আশ্রয় কেন্দ্র থাকে পরিত্যক্ত। স্থানীয় জুয়াড়ি, মাদকসেবী, সন্ত্রাসীসহ নানা রকম অপরাধীরা সেখানে আস্তানা গড়ে তোলেছে। সেখানে এসব অপরাধীরা তাদের ‘স্বর্গরাজ্য’ তৈরি করেছে।
জানা গেছে, আশ্রয় কেন্দ্রগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বেহাল অবস্থায় পতিত হয়েছে। এর ফলে দখলে থাকা এবং পরিত্যক্ত- সব আশ্রয় কেন্দ্র জীর্ণ হয়ে হয়ে পড়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় অধিকাংশই আশ্রয় কেন্দ্রের দরজা-জানালা, ফটক অনেক বছর আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক আশ্রয় কেন্দ্র মানুষ আর গবাদি পশুর টয়লেটে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, হঠাৎ করে দুর্যোগ এসে পড়লে আশ্রয় কেন্দ্র ব্যবহার উপযোগী করা এক কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এর মধ্যে দখলে থাকা আশ্রয় কেন্দ্রগুলো দখলমুক্ত করা বেশি কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। কেননা সেখানে দখলকারীদের তৈরি গবাদি পশুর ভাগাড়সহ স্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদে বড়ই বেকায়দায় পড়তে হয়। অনেক সময় দখলকারীরা প্রভাব দেখিয়ে স্থাপনা উচ্ছেদে বাধাও সৃষ্টি করে থাকে। আবার স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করাও ব্যয়, সময় সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। একই ভাবে পরিত্যক্ত থাকা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোও ব্যবহার উপযোগী করতে অনেক কাজ করতে হয়। সবকিছু করেও পুরোপুরি স্বস্তিদায়ক হিসেবে প্রস্তুত করা যায় না। দুর্গন্ধযুক্ত ও ঝঞ্জালযুক্ত থাকায় আশ্রয়প্রার্থীরা খুব অস্বস্তি বোধ করে।
পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ‘পেকুয়ার মগনামা, উজানটিয়া ও রাজাখালী ইউনিয়ন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মতো লোকজন আশ্রয় দেয়ার জন্য আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করে গিয়ে দেখি বড়ই সমস্যা। কেননা একটা আশ্রয় কেন্দ্রও ব্যবহার উপযোগী পাইনি। কিছু দখলমুক্ত করতে গিয়ে অনেক বাড়াবাড়িও হয়েছে। পরিত্যক্ত গুলোও ব্যবহার উপযোগী করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তারপরও পুরোপুরি ব্যবহার উপযোগী করা যায়নি।’
মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, ‘আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ভালো পরিবেশ না থাকায় অনেক মানুষ অন্যান্য ইউনিয়ন গুলোতে থাকা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে চলে গেছে। যারা রয়েছে তারাও কিন্তু বাধ্য হয়ে আশ্রয় কেন্দে রয়েছে।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।