-রহিম আব্দুর রহিম

একটি গল্প দিয়েই শুরু করছি, ‘এক ব্যক্তি, তার গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, শান্তির সংসার, তার একটাই দোষ, তিনি তার স্ত্রীর কোন কথাই শোনেন না। স্ত্রী যদি তাকে ডানে যেতে বলেন, সে বামে যায়। অর্থাৎ স্ত্রীর সকল কথা এবং কাজের বিপরীতে তার অবস্থান। কারণ তিনি পুরুষ, তার স্ত্রী নারী। সংসার পুরুষের কথাই চলবে, এটা তার আদর্শ। মাঝে মাঝেই স্ত্রীকে বেধম প্রহার করে। অবলা নারী স্বামীকে তো আর মারতে পারে না, অবলা নারীর মার খেয়ে কান্নাকাটি করা ছাড়া আর উপায় নেই ; একদিন সকালে তার স্ত্রীর সাথে ভীষণ ঝগড়া-বিবাদ। এক পর্যায়ে স্ত্রীকে মারধর করে প্রতিদিনের ন্যায় একপাল গরু নদী সাতরিয়ে নদীর এপার থেকে ওপারে নিয়ে যাচ্ছে। এই ব্যক্তি সাঁতার না জানায় গরুর লেজ ধরে প্রতিদিনের মত এই দিনও পার হচ্ছিলেন। এই বার তার অবলা স্ত্রী সবলা হয়েছে মার খেয়ে প্রতিদিনের মত কান্না কাটি না করে, নদীর পাড়ে গিয়ে তার স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলছে, এই মিনসে লেজ শক্ত করে ধরো, যেই না বলা, সেই দিয়েছে লেজ ছেড়ে। প্রবল ¯্রােতধারার নদীতে পরে এই লোক ডুবে গেছে, তাকে খুঁজে না পেয়ে, তার স্ত্রী, স্বামীর মৃত্যু হয়েছে ভেবে, নদীর উজানের পাড় ধরে, স্বামীর লাশ খুঁজছে, আর স্বামী মরা কান্না করছে। একলোক তাকে জিজ্ঞেস করলো, ভাবি? তুমি নদীর ভাটিতে লাশ না খুঁজে, উজানে খুঁজছো? ভাবি উত্তর দিলেন, বেঁচে থাকতে আমার মিনসে কখনো ভাটিতে যায় নি, মরে তো ভাটিতে যাওয়ার কথা না। তাই উজানে খুঁজছি। গল্প শেষ, ঘটনায় যাচ্ছি।

ঘুর্নিঝড় মোরার গতিবেগ ১৩৫ কিলোমিটার। ঘটনা, ‘ভাষ্কর্য , শ্যামল কান্তি ভক্তের কারাবরণ’ এর বিবেকের ঝড়ের গতি দুইশত সত্তর কিলোমিটার। এ ঝড় অনিবার্য, ‘চেতনার প্রতীক’ অপসারণ মেনে নেওয়ার মত না। কেউ মেনে নিচ্ছে না, নেবেও না, নেয় নি। যে জাতি শোষক-শাসকদের রক্তচক্তু পায়ে মাড়িয়ে শিল্প এবং চেতনার মুক্তি ঘটিয়েছেন ; সেই জাতির শিল্পের স্বাধীনতা ধ্বংস হতে পারে না। দুঃখ হয়, ভাষ্কর্য কোনটি আর মূর্তি কী? তা আমরা এখনো নির্ণয় করতে পারছি না। এর উপর হেফাজত ইসলাম নামে রাজনৈতিক উপসর্গটির দাবি, ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বরে সুপ্রীম কোর্টের ফোয়ারার মাঝে স্থাপিত ভাষ্কর্যটি একটি মূর্তি যা অপসারণ প্রয়োজন এবং সারা দেশের সকল ভাষ্কর্য হেফাজতি ভাষা ‘মূর্তি’ অপসারণ না করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে। অন্যদিকে স্থাপিত ভাষ্কর্যটি অপসারন করে তা আবার একই এলাকার এনেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। এতে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, বুদ্ধিজীবি মহল এবং সরকারে থাকা একজন মন্ত্রী যেভাবে মন্তব্য করেছেন, তা বিশ্লেষণযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য, না অগ্রহণযোগ্য? তা বিচার্য এখন সময়ের দাবি। কেউ বলেছেন, হেফাজতের সাথে সরকার আপোষ করেছেন। কেউ বলেছেন হেফাজতের আন্দোলনের ভয়ে ভাষ্কর্য অপসারণ করা হয়েছে, কেউ বলেছেন এই ভাষ্কর্য অপসারণ ২৫শে মার্চের সার্চলাইটের নামান্তর, অন্যদিকে এর প্রতিবাদ করায় মামলা হয়েছে; অভিযুক্তরা জামিনও পেয়েছেন। মুক্তিকামী মানুষের রক্ত-ঘামে, মেধা-মননে, জীবন-প্রাণে অর্জিত স্বাধীন দেশের চেতনা ও অনুপ্রেরণার প্রতীক শিল্পের স্বাধীনতা ধ্বংস হবে হেফাজতের কাছে তা কি বিশ্বাসযোগ্য! বাঙলী কি আঙ্গুল চোষা জাতি ? ইসলাম গেল, ইসলাম গেল, জিকির তুলে চেতনা বিরোধী আন্দোলন স্বাধীন বাংলার মাটিতে কোনদিনই প্রতিষ্ঠা পাবে না, সেই দিন অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে।

মনে করুন, আমি-আমরা পৃথিবীর সকল ধর্মের বর্ণের মানুষদের ভালোবাসি, ভালোবাসবো, জাতির ইতি-ঐতিহ্য, চেতনার প্রতীক ভাষ্কর্য স্থাপন করবো, স্থাপিত হবে, তবে কোন গোষ্ঠী বা ধর্মের সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের আঘাত হানে এমন কিছু করা কি আদৌ যুক্তিযুক্ত ? সুপ্রিম কোর্টের ফোয়ারা নিকটস্থ স্থানে বছরে মুসলিম ধর্মের মুসল্লিরা ঈদের দুটি জামাতে অংশগ্রহণ করে। শুধু হেফাজত নয়, সাধারণ ধর্মভীরু মুসলিমরা বিশ্বাস করে, নামায চলাকালে নামাজি ব্যক্তির সামনে কোন পশু প্রাণির ছবি থাকলে নামাজ হয় না। ধরুন তাদের এই বিশ্বাস অমূলক। কারণ এরা ধর্মভীরু, ধর্মপ্রাণ নয়। কারণ নামযরত মুসল্লিরা যখন নামাযে দাঁড়িয়ে, পৃথিবীর সকল চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারনা থেকে সরে গিয়ে আল্লাহ্্র ধ্যানে মশগুল হবেন, তখন পৃথিবীর কোন ভাষ্কর্য, মুর্তি, কুকুর, বিড়াল, সাপ, বিচ্ছু তার চর্মচক্ষু দৃষ্টিতে পড়বে না, পড়ার কথা নয়। অর্থাৎ ধর্মভীরুদের চর্মচক্ষু খোলা থাকে, ধর্মপ্রাণদের অন্তঃদৃষ্টি উন্মুক্ত থাকে। হেফাজতিদের ধর্মীয় দৃষ্টিশক্তি অত গভীর নয়। তবে নামাযের যে কোন জামাতে ধর্মপ্রাণ , ধর্মভীরু, ধর্মান্ধ এবং একই ধর্মের বিভিন্ন মতাদর্শের নামাযি থাকতে পারে, সমন্বিত জামাতের অমূলক বিশ্বাসধারীদের বিশ্বাসে যাতে আঘাত না লাগে, তা নিশ্চিত করাও প্রগতিশীল চিন্তাধারার অসাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতা চেতনায় বিশ্বাসী, জনমানুষদেরই উপর বর্তায়। বর্তমানে যেখানে ভাষ্কর্যটি স্থাপিত হয়েছে এটাই সর্বজন স্বীকৃত বলে মনে হচ্ছে। ভাস্কর মৃণাল হক বলেছেন, ‘আগে যেখানে ভাষ্কর্যটি ছিল সেখানে অনেকেই দেখতো, এখন যেখানে স্থাপিত হলো সেখানে তেমন লোকজন দেখবেন না।’ ভালো কথা, শ্রদ্বেয় ভাস্কর মৃণাল হক, আপনাকে বলছি, ঈদের দুই নামাযের সময় আপনার স্থাপিত ভাষ্কর্যটি কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হতো। এবার বলুন, ভাষ্কর্যটি কি যথাযথ স্থানে স্থাপন করতে পেরেছিলেন? এখন যেখানে স্থাপিত হলো এটা কোনদিনই কালো কাপড় দিয়ে ঢাকতে হবে না। চেতনার প্রতীক সময় সাপেক্ষে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার চেয়ে, তা সকল সময় উন্মুক্ত থাকুক কেউ দেখুক আর না দেখুক, এতে শিল্পের কোন আসে যায় না। আপনার নির্মিত ভাষ্কর্যটি যার দেখার তিনি যেখানে স্থাপিত হোক না কেন, সেখানে গিয়েই দেখবেন। শিল্পের স্বাধীনতা যেমন রয়েছে ; তেমনি শিল্প দর্শনের স্বাধীনতা থাকাও উচিত।

আগেই বলছি ধর্মপ্রাণ আর ধর্মভীরু এক বিষয় নয়। একইভাবে ‘হেফাজতের ইসলাম’, ‘সাধারণের ইসলাম’ আর ‘ধর্মপ্রাণ মানুষের ইসলাম’ এক নয়। ভাষ্কর্য অপসারণে হেফাজতের আন্দোলন দাবি কোন কাজেই লাগে নি। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে তারা শুধু বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী সাধারণ ধর্মভীরু মানুষের বিষয়টি বিবেচনায় এনে, তা প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেছেন। প্রধান বিচারপতি সিনিয়র আইনজীবী এবং অন্যান্য বিচারকদের নিয়ে বিষয়টি চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই তা অপসারণ করে পরক্ষনেই এনেক্স ভবনের সামনে স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন এবং তা স্থাপিত হয়েছে। এমনটি প্রকাশ পেয়েছে বিএনপির ব্যারিস্টার মওদুদ আহম্মেদের বক্তব্যে ও একটি চ্যানেলের টকশোতে অংশগ্রহণকারী এ্যাডভোকেট তানজীব উল আলমের বক্তৃতা থেকে। ভাষ্কর্য অপসারনের প্রতিবাদ করায় পুলিশ যে মামলা করেছে তা কোন ভাবেই যৌক্তিক এবং গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ কোন কিছু অপসারনে যদি একটি গোষ্ঠীর ‘বিশ্বাস বিশেষনে’র সেন্টিমেন্ট হয়ে থাকে ; তবে ওই গোষ্ঠীর ‘চেতনা বিশেষনে’র সেন্টিমেন্টের প্রতিবাদ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কেন ফৌজদারীর মত মামলা হবে? চেতনা সম্বলিত ভাষ্কর্য স্থাপিত এবং সংরক্ষিত হোক ঘরে-ঘরে, রাস্তা-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে অফিস আদালতে, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাতে, তবে চেতনা যেন ভিন্ন মত ও পথের কোন গোষ্ঠী বা দলের বিশ্বাসে আঘাত না লাগে সে দিকটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব আসলে কার? ধর্মভীরু ধর্মপ্রাণ, নাকি উচ্চ শিক্ষিত মুক্ত মনের চিন্তাশীলদের।

এবার কথা বলছি, শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে মামলা এবং তার কারাবরণ নিয়ে। নারায়নগঞ্জ বন্দর থানাধীন পিয়ার সাত্তার আব্দুল লতিফ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। পৈত্রিক নিবাস সম্ভবত: বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার কোন এক স্থানে হবে বলে জেনেছি। তবে এটা নাও হতে পারে। ভদ্রলোকের দুটি গুনের কথা জেনেছি। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে কঠোর, কোন ফাঁকিবাজি তিনি করেন না, তাঁর স্টাফের কাউকে করতেও দেন না। অন্যটি, সৎ মানুষ হিসেবে সুবিধাবাদীদের সুযোগ-সুবিধা দিতেন না। বড় দোষ তিনি প্রধানমন্ত্রীর এলাকার প্রভাব খাটান এবং সরকার সমর্থিত হওয়ায় আতি পাতি নেতাদের পাত্তা দিতেন না। তাকে সোজা করতেই ষড়যন্ত্রের নোংরা জাল ফেলা হয় পরিকল্পিতভাবে। যে জালে ফেলে তাকে কান ধরে উঠবস করানো হয়েছে, মারা হয়েছে চর থাপ্পর। এই জঘন্য কাজের ভিলেন হিসাবে ছিলেন সরকার দলীয় একজন এমপি যার নাম উচ্চারণ করতেও লজ্জা হয়। ঘটনাটি ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে। ওই এমপির অমার্জনীয় অপরাধের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত এগিয়ে আসেন। ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়, দাপটে প্রভাবশালী এই ভিলেনের বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়। যে মামলার বাদী স্বয়ং সরকার। এই মামলায় ভিলেনকে আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। ক্ষুব্ধ এমপি শ্যামল কান্তি ভক্তকে এবার জেলে পুরে সোজা করার চুড়ান্ত খেলায় মেতে উঠেছে। তার ইঙ্গিতেই শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ওই প্রতিষ্ঠানের নন এমপিওভূক্ত শিক্ষক মোর্শেদা বেগম ঘুষ গ্রহণের মামলা ঠুকেছে। গত ২৪ মে মামলাটির শুনানি হয়েছে, আদালত বিবাদী শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন। ওই দিনই শ্যামল কান্তি ভক্ত কোর্টে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। তাঁকে জেলে ঢোকাতে ‘আইন-আদালত’ সংশ্লিষ্ট কাঠামো নাকি সরকার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। এ ধরনের সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ হয়েছে। এর একটি যৌক্তিক কারণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। পুলিশ তাকে আদালত প্রাঙ্গন থেকে বের হতে দেয় নি। আদালতে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য করেছেন। সব কিছু মিলেই ঘটনার বিশ্লেষণ জরুরী হয়ে পড়েছে। পুলিশ যখন তাকে (বিবাদী শিক্ষক) আদালত থেকে বের হতে দেয় নি, এতে প্রমাণ হয়, এমপি বাহিনীর চাপে পুলিশ বেকায়দায় পড়েছিল। কোল রাখি না, শ্যাম রাখি অবস্থায় পুলিশ তার কৌশল অবলম্বন করেছে। দ্বিতীয়ত, আদালত যেহেতু জামিন দেয়নি। পুলিশ এমপি বাহিনীর চাপে প্রকাশ্যে শিক্ষকের হাতে হেন্ডকাপ যাতে না পরাতে হয়, পুলিশ এমনটা করতে গিয়েই তাঁকে আদালতে আত্মসমর্পন করাতে বাধ্য করেছেন। তৃতীয়ত, প্রভাবশালী এমপি বাহিনী এতই ক্ষিপ্ত ছিলো যে, ওয়ারেন্ট হওয়া মাত্র পুলিশ দিয়ে তাকে ধরিয়ে জেল হাজতে পাঠাবে। পুলিশ সহজে কোন শিক্ষক বা সম্মানী ব্যক্তির হাতে হ্যান্ডকাপ পড়াতে চান না, যা আমার দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। প্রকাশিত সংবাদপত্র থেকে যা জেনেছি, শ্যামল কান্তি ভক্তের জামিন না মঞ্জুর হওয়ার পর আইনজীবিরা সাংবাদিকদের বলেছেন, এ ধরনের মামলায় জেল হাজতে যাওয়ার কথা নয়। বিষয়টি আইনজীবীদের বক্তব্যের সাথে নিজের বিবেক মিলিয়ে নেওয়ার জন্য ডেইলি নিউ এইজ পত্রিকার নারায়নগঞ্জ প্রতিনিধি এমআর কামাল ভাইয়ের সাথে কথা বলে বিবাদীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ধারাগুলো জেনেছি। ১৬১ / ৪২০ / ৪০৬ । আমার প্রশ্ন ৪০৬ ধারাটি জামিন যোগ্য নয়, বিচার যোগ্য, তবে বাদীকে সন্দেহতীতভাবে প্রমাণ করতে হবে। তবে কিভাবে আইনজীবীরা জাতিকে ক্ষেপিয়ে দেওয়ার মত তথ্য সাংবাদিকদের দিলেন? শ্যামল কান্তি ভক্তকে যে পরিকল্পিত ভাবে ফাঁদে ফেলেছে তা যেমন কাঁচের মত স্বচ্ছ, তেমনি এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে সরকার বিরোধী একটি মহল কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। শ্যামল কান্তি ভক্ত ন্যায় বিচার পাবেন এটাই সত্য। তিনি জেল-হাজতে যাওয়ার পর অনলাইন নিউজ পোর্টাল, দৈনিকশিক্ষাডটকম এবং প্রিন্ট মিডিয়া দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় সম্পদকীয় লেখা হয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে। তাঁদের ধন্যবাদ, আমরা সাহস পাচ্ছি। দুঃখ হয়, প্রতিবাদের ভাষা, আন্দোলনের ভাষা যখন আমরা শিক্ষকরা আবিষ্কার করতে না পেরে, কান ধরে রাস্তায় দাঁড়াই তাতে মনে হয়, আমরা লেখাটির ভিলেন চরিত্রের এমপির চেয়েও জঘন্য। যখন আমরা বৈশাখী ভাতা না পেয়ে, থালা বাসন নিয়ে জেলা প্রশাসনের অফিসের সামনে মানব বন্ধন করে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পাঠাই, প্রতিদিনই বিভিন্ন ভাতা আদায়ের জন্য একই ব্যক্তি বার বার ঘেনর-ঘেনর, পেনর-পেনর করেন তখন শিক্ষকরা যে, সংকীর্ণ মনের এবং মানের এটাই প্রমাণ হয়। চলুন আমরা সংকীর্ণ মন এবং মান থেকে বেরিয়ে এসে আন্দোলনের ভাষা পাল্টিয়ে, লেজে গোবরে কান্ড না ঘটিয়ে ভিলেন এমপির মসনদ গুড়িয়ে-মুড়িয়ে শিক্ষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করি।

লেখক

শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।