হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :
মানুষের মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছে ‘ঘুর্ণিঝড় আক্রান্ত টেকনাফকে দেখার কি কেউ নেই’। টেকনাফে ঘুর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে ক্ষতি হয়নি এমন কেউ নেই। ক্ষতি হয়নি এমন কোন খাত বা সেক্টর নেই। কম-বেশী সকলেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। পাকা ভবন, চারদিকে পাকা বাউন্ডারী হলেও গাছপালা এবং বাগান নষ্ট হয়েছে। টিন শেড, কাঁচা বাড়ি ও কুঁড়ে ঘরের তো কথাই নেই। সকলেই ক্ষতিগ্রস্থ, সরকারী ত্রাণ বরাদ্দে অপ্রতুল।
১টি পৌরসভা এবং ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে টেকনাফ উপজেলা। পুরো উপজেলারই একই চিত্র। সেন্টমার্টিন, টেকনাফ সদর, সাবরাং এবং পৌরসভায় যে পরিমাণ ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার তুলনায় হোয়াইক্যং, হ্নীলা এবং বাহারছড়া ইউনিয়নে সিকি পরিমাণ বরাদ্দও দেয়া হয়নি। চরম বৈষম্যের শিকার হোয়াইক্যং, হ্নীলা এবং বাহারছড়া ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থরা।
ঘুর্ণিঝড়ের পর সাধারণতঃ মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে যান। দুর্গত মানুষদের শান্তনা দেন। নিজ হাতে ত্রাণ বিতরণ করেন। এ ক্ষেত্রেও চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন হোয়াইক্যং, হ্নীলা এবং বাহারছড়া ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থরা।
ঘুর্ণিঝড়ের পর বেশী প্রয়োজন হয় গৃহ নির্মাণ সামগ্রীর। ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানার পর যতদুর জানা যায় কোম্পানীগুলো টেকনাফের দুর্গত মানুষের জন্য মুল্য বাড়িয়ে দেননি। কিন্ত বাস্তবতা হচ্ছে ঘুর্ণিঝড়ের পর টেকনাফে প্রত্যেক আইটেম গৃহ নির্মাণ সামগ্রীর মুল্য চড়া।
ঘুর্ণিঝড় ও ঝড়ো হাওয়ার পর টেকনাফে বিদ্যুৎ নেই। গরীবের বাহন খ্যাত টমটমগুলো চার্জ দিতে না পারায় চলাচল বন্দ। রাস্তায় টমটম নেই বললেই চলে। জেনারেটরে চার্জ দিয়ে স্বল্প সংখ্যক টমটম ৩ গুণ বেশী ভাড়া নিয়ে চলছে। টমটম না চললেও মানুষ তো আর না চলে পারেননা। এ সুযোগে সিএনজি (অটোরিক্সা) ১০ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা নিচ্ছে।
ঘুর্ণিঝড়ের পর অনেকে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে টাকা কামায়ের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। ভেজালে বাজার সয়লাব। সর্বত্র নকলের ছড়াছড়ি। ইফতারি থেকে শুরু করে তরিতরকারী, মাছ-মাংস, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ভেজাল আর ভেজাল, সেই সাথে আবার ওজনে কারচুপি। এসব প্রতিরোধে বিশেষতঃ রমজান মাসে ঘন ঘন দেশের অন্যান্য উপজেলা এমনকি টেকনাফের নিকটস্থ উখিয়া উপজেলায়ও মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে। বাজার মণিটরিং হয়েছে। কিন্ত টেকনাফবাসীর দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য জানিনা, এপর্যন্ত টেকনাফের কোথাও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার খবর পাওয়া যায়নি।
ঘুর্ণিঝড়ে বিদ্যুতেরও ক্ষতি হয়। এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত এর পরবর্তী ঘটনা অস্বাভাবিক। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় বিদ্যুৎ কর্মীরা ঘন ঘন ঘুর্ণিঝড় হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে যেন বেশী খুশী। শুরু হয় অবৈধ উপার্জনের প্রতিযোগিতা। নানা বাহানা ও ছলচাতুরীতে সাধারণ গ্রাহক দিশেহারা। ওয়ারিং, মিটার থেকে খুটি পর্যন্ত লাইন ঠিক আছে। কোথাও ছিঁড়ে যায়নি। মিটাও অক্ষত আছে। কিন্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন। এমনকি ঘুর্ণিঝড়ে ভাগ্যক্রমে লাইনও ঠিক আছে। পরিস্কার দেখাই যাচ্ছে কোথাও সমস্যা নেই। তবুও তারা চেক করার অজুহাতে ভাল লাইন কেটে দেবে। দাবি মত টাকা দেয়ার সাথে সাথে সব ঠিক।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্থ ৪ হাজার ১০৮ পরিবারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ২ মেট্রিক টন চাল। বরাদ্দকৃত এসব চাল মাত্র ২০০ পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে বিতরণ করা হয়েছে। হ্নীলা ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্থ ৪ হাজার ৫০০ পরিবারের জন্য কেবল ২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব চাল ২০০ পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে বিতরণ করা হয়েছে। বাহারছড়া ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্থ ৪ হাজার ৫০০ পরিবারের জন্য ৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। যা ৩০০ পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাল এবং ৫০ পরিবারকে নগদ এক হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে সাবরাং ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্থ ৪ হাজার পরিবারের জন্য ২৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সদর ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্থ ৪ হাজার ৩০০ পরিবারের জন্য ১৮ মেট্রিক টন চাল এবং ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্থ ১ হাজার ৭০ পরিবারের জন্য ২৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। টেকনাফ পৌরসভায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য ৭ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সচেতন মহলের প্রশ্ন প্রশাসনের বৈষম্যমুলক বরাদ্দসহ এসব দেখার কি কেউ নেই ?