বিদ্রোহের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য (বর্তমানে বিজিবি) ও তাদের স্বজনরা নানা কষ্টে আছেন। সাজা খাটা ছাড়াও চাকরি জীবনের কোনও সুবিধাই তারা পাননি। সাবেক এই বিডিআর সদস্যদের সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। অনেকেই নিঃস্ব হয়ে রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাচ্ছেন।বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও তাদের চাকরি পেতে সমস্যা হচ্ছে। মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে সরকার তাদের পুনর্বাসনসহ সার্বিক সহযোগিতার পদক্ষেপ নিয়েছে। এরইমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে দেশের সকল জেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিজিবি সূত্র জানায়, বিদ্রোহের অভিযোগে যেসব বিডিআর সদস্য সাজাপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তারা ছাড়াও তাদের স্বজনদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করা হয়। সাজা খেটে বের হয়ে যাওয়া বিডিআর সদস্যরা সন্ত্রাসী, জঙ্গি গোষ্ঠী এবং রাষ্ট্র ও মানবতাবিরোধী সংগঠনগুলোর সঙ্গে নাশকতামূলক কার্যক্রমে জড়িত হয়ে যেতে পারেন, এমন আশঙ্কা থেকেই তাদের নজরদারি করা হচ্ছিল। বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতরসহ সরকারের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও জানানো হয় বিজিবির পক্ষ থেকে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, যে কোনও সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গোষ্ঠী সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের সহজেই লুফে নিতে পারে। কাজে লাগাতে পারে তাদের অভাব, অনটন ও ক্ষোভকে। এসব মাথায় রেখেই বিজিবি কর্তৃপক্ষ বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের নজরদারিতে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদ্রোহের অভিযোগ ছাড়াও গোয়েন্দা নজরদারির কারণে হয়রানি হওয়ার আশঙ্কায় সাজাপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের কোনও বেসরকারি কোম্পানিও চাকরি দিতে চায় না। ফলে তাদের বেশিরভাগই নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে অমানবিক জীবন-যাপন করছেন। সরকার মানবিক বিবেচনায় ও তাদের বিপথগামী হওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য পুনর্বাসনের এ উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠির সূত্র উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকদের বরাবরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘বিজিবি (সাবেক বিডিআর) বিদ্রোহ মামলার যে সকল বিজিবি সদস্য বিচারে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং সাজার মেয়াদ শেষ করে বর্তমানে মুক্ত হয়েছেন ও চাকরিচ্যুত অবস্থায় আছেন, যাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই বা কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন, তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে সহায়তার জন্য যথা নির্দেশ অনুরোধ জানানো হলো।’
চিঠির সঙ্গে মুক্তিপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্যদের একটি তালিকা পাঠানো হয় জেলা প্রশাসকদের কাছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহফুজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবহিত। তবে সরকার তাদের কিভাবে ও কী ধরনের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছেন, সেটা তাদের জানা নেই। বিষয়টি জেলা প্রশাসকরাই ভালো বলতে পারবেন।’
এ বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো বলেন, ‘পুনর্বাসন বলতে তাদের কোনও কর্মসংস্থানের বিষয়ে কাউকে বলে দেওয়া। যেমন কোথাও কোনও কোম্পানিতে তারা চাকরির চেষ্টা করছেন, সেখানে তাদেরকে সুপারিশ করা, যাতে কাজটা পান। কারণ, বিদ্রোহের অভিযোগ থাকায় অনেকেই তাদের কাজ দিতে ভয় পায়। সেজন্য তারা ও তাদের পরিবারগুলো ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তারা গরীব মানুষ। আয় রোজগার নাই। তাদের ডাকলে আবার ভয় পান। তাই আমরা তাদের ডেকে আশ্বস্ত করে বলে দিচ্ছি, আপনারা কাজ খোঁজেন। প্রয়োজন হলে আমরা মালিক পক্ষকে বলে দেবো। এভাবে তাদের সহযোগিতা করার জন্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশনা পেয়েছেন তারা।’
বাংলা ট্রিবিউন
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।