ক্রীড়া ডেস্ক:

সকল জল্পনা কল্পনার অবসান শেষ হচ্ছে আর কয়েক ঘণ্টা পরেই। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনাল খেলতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। এই একটি ম্যাচ জিতলেই টাইগাররা পৌঁছে যাবে বৈশ্বিক কোনও টুর্নামেন্টের প্রথম ফাইনালে। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচের পর বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচ নিয়ে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা বিরাজ করে। দুই দলের শরীরি ভাষায় ‘খুনে’ মনোভাব স্পষ্টই ফুটে উঠে! খেলোয়াড়দের বাইরেও দুই দেশের ক্রিকেট ভক্তরা সামাজিক মিডিয়ায় যুদ্ধে লিপ্ত হন, যেটা কিনা মাঝে মাঝে বাড়াবাড়ি পর্যায়েও চলে যায়।

বৃহস্পতিবার এমন ঝাঁজ নিয়েই বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেটের মহারণ মাঠে গড়াচ্ছে। বার্মিংহামের এজবাস্টন স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায় ম্যাচটি শুরু হবে। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি, মাছরাঙা টিভি ও বিটিভি।

প্রথমবার সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশ এমন এক অর্জনে রোমাঞ্চিত। রোমাঞ্চ সঙ্গী করে ভারতের বিপক্ষে ভা্লো ক্রিকেট খেলার প্রত্যাশা মাশরাফির। তবে প্রতিপক্ষ ভারত বলেই বাংলাদেশের জন্য খানিকটা চিন্তার। ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে হারের পর গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ১ রানে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এই দুটি ম্যাচের মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনালের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা টাইগার সমর্থকরা হয়তো কখনও ভুলতে পারবেন না। ওই ম্যাচের পর যতবার ভারত-বাংলাদেশ লড়াই হয়েছে, সেটা পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। ময়দানে থেকেছে বাড়তি ঝাঁজ।.

 ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনাল বলেই কিনা অহেতুক বাড়তি একটা চাপ টাইগারদের ওপর এসে যায়। এই ধরনের ম্যাচে নিজেদের আবেগ আর স্নায়ু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে কিনা টাইগাররা, সেটাই বড় প্রশ্ন। তবে ম্যাচটাকে অন্য দশটা ম্যাচের মতো দেখে যতটা সম্ভব নির্ভার থাকারই চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তার শিষ্যদের কানে জপে দিয়েছেন সেই মন্ত্রই, ‘নির্ভার থাক, নিজেদের সেরাটা দাও।’

নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে মাশরাফিরা যেকোনও দলকেই হারাতে পারে। এই সত্যটা এখন ক্রিকেট বিশ্বের সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। মাশরাফিও বিষয়টি বুধবার আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন, ‘নিজেদের দিনে আমরা যে কোনও কিছুই করতে পারি। নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে আমাদের হারানো কঠিন। তবে আমাদের অবশ্যই সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। আর ছেলেরা ভালো খেলতে মুখিয়েও আছে।’

সেমিফাইনালে ভালো করতে টাইগারদের বাড়তি কিছু করতেই হবে। বিশেষ করে  ব্যাটসম্যানদের। দুই অধিনায়কের প্রত্যাশা এজবাস্টনের উইকেট হবে ব্যাটিং স্বর্গ। সেখানে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা রুবেল-মুস্তাফিজদের কঠিন পরীক্ষা নেবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়! অন্যদিকে কোহলির দল বড় লক্ষ্য ছুঁড়ে দিলে ব্যাটসম্যানদেরই ফাইনালের স্বপ্নপূরণের দায়িত্বটা নিতে হবে। শেষ ম্যাচে জমিয়ে রাখা পারফরম্যান্সটা দেখিয়ে দিতে পারেন তামিম। সৌম্য যদি শুরুতে ভয় ঢুকিয়ে দিতে পারেন ভারতীয় বোলারদের মনের মধ্যে! সেক্ষেত্রে টাইগারদের স্বপ্নের ফাইনালের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে কে?.

 এমনিতেই ক্রিকেটের বৈশ্বিক আসরে ভারত সব সময়ই ফেভারিটের তকমা গায়ে মাঠে নামে। তারপরও মাশরাফি বলেছেন, ‘এই ম্যাচে ভারত অবশ্যই এগিয়ে। তবে আমাদের দিনে আমরা যে কোনও দলকেই হারাতে পারি। ছেলেরা সাধারণ একটি ম্যাচ মনে করে চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারলেই ভালো খেলা সম্ভব হবে।’

পরিসংখ্যান বিচারে ভারতের চেয়ে খানিকটা পিছিয়ে থাকলেও সর্বশেষ চার ওয়ানডেতে দুই দলই সমানে সমান। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে জেতার পর ভারত এসেছিল বাংলাদেশে। সেখানে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে তারা। ওই সাফল্যের পরও থেমে নেই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ এখন শক্ত প্রতিপক্ষ।

এই বাংলাদেশকে হালকাভাবে নেওয়ার দুঃসাহস কী করে দেখায় ভারত! যদিও প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশকে ৮৪ রানে অলআউট করেছিল তারা। তারপরও ম্যাচটি স্রেফ একটি প্রস্তুতি ম্যাচ! এরপর মূল লড়াইয়ে টাইগাররা খুব ভালোভাবেই নিজেদের প্রভাব জানান দিয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে হারলেও তারা গড়েছে ৩০০’র উপর রান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর নিউজিল্যান্ডের ২৬৫ রান তাড়া করে জিতেছে বাংলাদেশ।.

 তাইতো বিরাট কোহলির চোখে বাংলাদেশ শক্ত প্রতিপক্ষ, ‘তারা ভীষণ বিপজ্জনক দল। আর সেটা প্রত্যেক দলই এখন বুঝতে পেরেছে। নিজেদের দিনে বাংলাদেশ ভয়ঙ্কর। গত কয়েক বছরে পারফরম্যান্স দিয়ে তারা নিজেরাই নিজেদের প্রমাণ করেছে। এমনকি গত বিশ্বকাপেও তারা ভীষণ ভালো করেছে। তাই তাদের হালকা করে নেওয়া কিছু নেই।’