রহিম আবদুর রহিম
‘মানুষের প্রতিরোধ, প্রকৃতির প্রতিশোধ’ ছোট বেলায় এ কথাটি শুনেছিলাম মায়ের মূখে। ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ দৃশ্য স্বচক্ষে দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছিল। ৭৪’র ষড়যন্ত্রের কঠিন অভাব টের পেয়েছি। ৭৫’র ১৫ আগস্টের মস্তিষ্ক বিকৃত লোভীদের বক্তব্য হাট-বাজারের ক্যানভাসারদের কাছে শুনেছি, আত্ম স্বীকৃত খুনিদের বিচার হয়েছে। সেনাসদরের রাষ্ট্র নায়ক জিয়াউর রহমানের খালকাটা প্রকল্প যে, তাঁর প্রশংসনীয় অবদান তা অস্বীকার করার জো নেই। ৮২’র এরশাদ আমলের আর্মি শাসনের ভূমিদস্যুদের কবর, বন-বাদর রক্ষায় কঠোর সিদ্ধান্তই বনজ সম্পদ যথেষ্ট রক্ষা হয়েছিল। সেনাবেষ্ঠিত ফকরুদ্দিন সরকারি আমলে ঘুষ-দুর্নীতি, বিদ্যুতের ভ্যালকিবাজির অবসান তুলনাহীন। এরশাদ সরকারের লাখো ক্রুটির মাঝে ৮৮’র ভয়াবহ বন্যা দূর্গত গোটা দেশের মানুষদের তিনবেলা উদর পুর্তি নির্ভেজাল আহারের ব্যবস্থা এখনও মানুষ স্মরণ করে। রেকর্ড সৃষ্টিকারী ভোট ডাকাতি, গণতন্ত্র হরণের স্রষ্টা, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির লালন-পালনের কর্তা খালেদা জিয়ার দুইটার্মের সরকার আমলে সবচেয়ে আলোচিত বাঙালির মনে চিরস্মরণীয় বরণীয় হয়ে হয়ে থাকবে, পরিবেশ রক্ষায় পলেথিন মুক্ত বাংলাদেশ, অন্যটি নকল মুক্ত শিক্ষাঙ্গন তবে একযোগে সারাদেশে বোমাবাজির ভয়াবহতা তাদের ধ্বংসের দাঁড়প্রান্তে দাড় করিয়াছে।
বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি বিশাল, মানবিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের উল্লেখযোগ্য অবস্থান তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষরাও হিসাব কষছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার হাতেই বর্তমান দেশ। তাঁর সরকার মেধা-মনন, চিন্তা-চেতনা, বিশ্বাস উজার করে ঢেলে দেবার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরপরও ঘরের ইঁদূর যে সিঁদ কাটছে না এটা ঠিক নয়। স্থানীয় তথা কথিত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে সরকারি সম্পত্তির দখলবাজি যেমন চলছে তেমনি তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষদের আধুনিকতার আশ্বাস দিয়ে চাঁদাবাজি চলছে। বেপরোয়াভাবে ছলছে পাহাড় কাটা, বৃক্ষ নিধন, বন উজার। এই সরকারের আমলে সবচেয়ে দু:খ জনক, কষ্টদায়ক কালো ইতিহাস প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধ্বসের মৃত্যুর মিছিল। গত একদশকে প্রায় ৩’শত মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। প্রশ্ন হতে পারে, এ জন্য সরকার কি সরকার দায়ী ? সরকারেরই বা কি করার আছে? প্রাকৃতিক দূর্যোগের বাংলাদেশে ঘূর্নিঝড়, জলোচ্ছাস, খড়া, প্রাকৃতিক দূর্যোগ। পাহাড় ধ্বসে মৃত্যুর মিছিল ও বন্যা মনুষ্য সৃষ্টি কৃত্রিম দূর্যোগ। আর এগুলো ঠেকাতে না পারলে শত আপদ-বিপদের এই দেশ একসময় মরুভুমিতে পরিণত হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলার রূপ, রস, সৌন্দর্যে উম্মাদ শোষক গোষ্ঠীকে বজ্রকণ্ঠের সুনির্দিষ্ট আঙ্গুল ঘুরিয়ে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যদিয়ে তাদের উৎখাত করে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার অমর ইতিহাস স্থাপন করতে পেরেছেন। তবে কেন? তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তা-চেতনা, স্বপ্নসাধ, রবীন্দ্রনাথের সোনারবাংলা, জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলা, নজরুলের জয়বাংলার মানুষের ক্ষুধা, দারিদ্র, ঘুচিয়ে সবুজ-শ্যামলে ঘেরা বাংলাদেশ বিনির্মানে পাহাড়, বন-বাদর ধ্বংসের যজ্ঞলীলা বন্ধে কঠোর হতে পারবেন না? আমরা সজাগ-সচেতন, যে দেশের মানুষ অর্ধাহারে, অনাহারে হাড়-হাড্ডি মাংসে এক সময় একাকার ছিল। এক টুকরো সৌদি জাকাতের দুম্বার মাংসের জন্য। এরাই এক সময় একমুঠো জাকাতের খেঁজুরের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের আঙ্গিনায় ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতো। সেই দেশের মানুষরাই আজ সময়ের ব্যবধানে অভাবকে পায়ে মাড়িয়ে সুখ-শান্তির নীড়ে বসবাস করছেন। বাঁশের সাঁকোই যাদের ছিল এপার-ওপারের একমাত্র পাথেয়। তাঁরাই এখন তাঁদের রক্তে ঘামে অর্জিত অর্থের ট্যাক্সে নির্মাণ করছে পদ্মা সেঁতু। যে দেশে এক সময় স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীরা রক্ত-ইজ্জত আর প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত জাতীয় পতাকা হাতে ধরে তামাসা করেছে, আজ তারা বিচারের কাঠ গড়ায় দাঁড়িয়ে বিশ্ব ইতিহাসের কলঙ্ক মোচনের মাইল ফলক হিসেবে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ঠিক সেই আমলের বিশ্বের সবচেয়ে সাহসী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার আমলে পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল মেনে নেয়া হবে না। বিনয়ের সাথে দৃঢ়চিত্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলছি, আপনিই পারবেন, দেশের পাহাড়, বন-বাদর যারা কেটে সাবার করছে এই সব ভূমি দস্যুদের উৎখাত করতে। যে ভূমিদস্যুরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করে নিজ স্বার্থ হাসিল করে স্বপ্নময় সোনার বাংলা ধবংস করেছে, যাদের কারণে প্রতি বছর পাহাড় ধ্বসে শত মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, তাদের বিচার করে মৃত্যুর মিছিল চিরতরে বন্ধ করা এখন সময়ের দাবী। লাখো শহীদের রক্ত, প্রাণ, ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজ খঁচিত পতাকার রক্ষক হয়ে আপনি যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন সেই দিন। যেদিন আপনি এবং আপনার দল পাহাড়কাটা, বনউজাড়, নদীভরাট বন্ধে, রেল যোগাযোগ প্রসারে, শিক্ষার আলো সহজলভ্য করণে সকল শিক্ষা জাতীয়করণ, কৃষি প্রধান বাংলা কৃষকের জন্য সর্বোচ্চ ভর্তূকি প্রদান করার দৃঢ় প্রত্যয় এবং অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্র“তি বদ্ধ হতে পারেন। সময় ও যুগের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের দ্রষ্টা বর্তমান সরকারের কাছে এমনটিই কামনা করছে খেঁটে খাওয়া গোটা জাতি।
শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মোবাইল : ০১৭১৪২৫৪০৬৬
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।