জামায়াত এ উলামায়ে হিন্দ ভারতের নেতা মুফতি ইলিয়াস বলেছেন, দেবতা শিব আমাদের প্রথম পয়গম্বর। আমরা শিব ও
পার্বতীর সন্তান। মুসলমানদের ইহা স্বীকার করতে কোন অসুবিধা নেই।
দেওবন্দপন্থিরা বলছে, দেশে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি এ কথা বলেছে। আমাদের হিন্দু রাস্ট্র হওয়াতে কোন আপত্তি নেই।
এ ব্যপারে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি সকল ধর্মানুসারিদের একত্রে বৈঠক এর ডাক দিয়েছে ভারতের বলরামপুরে কউমি সম্মেলনে। হিন্দু পন্ডিতদের অতিথিও করা হয়েছে।ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণায় রাজি উলামায়ে হিন্দ ভারতের নেতা মুফতি ইলিয়াস ও তার কওমি সম্প্রদায়।
এ ধরনের ফতুয়া নিয়ে ভারতের সুন্নী আলেমরা কোন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে ভারতের গোলাম মুস্তারসিদ নামক এক ব্যাক্তি জানান, প্রতিক্রিয়া জানানো হচ্ছে, তবে তার এ বক্তব্যে হিন্দুরা খুশি হয়েছে।
অপরদিকে সুন্নি আলেমগণ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং এটা তাদের সিলসিলার কথা হিসেবে বলা হয়েছে, ইসলামের কথা নয় বলছে সুন্নি ওলামারা।
এমন সংবাদ প্রকাশের পর দেশের একজন মুসলিম পণ্ডিতের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি নিম্নের লেখা টুকু কপি করে পাঠিয়ে দেন এবং বলেন, আপনার সংবাদের সাথে তা যোগ করে দেন তাহলে কেহ কেহ গবেষণা করতে পারবে।
”হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বেদের একটি শ্লোক, “আজ্ঞা যজন্তি বিশ্বেশং পাষানাদিষু সর্বদা সর্ব-ভূতে” অর্থ: ভগবান মূর্তিতে নন ভগবান সর্বভূতে। সুতরাং সর্বভুতের ভজনাই ঈশ্বরের উপসনা।“সর্বভুতস্তিং যোমাং ভজত্যেক ত্বমাস্তি”। তাই প্রচলিত মূর্তি পূজা বেদ কখনও সমর্থন করে না। বেদ পড়লে বোঝা যায় তাতে কেবল এক ঈশ্বরবাদের কথা’ই বলা আছে, মুর্তি পূজার কথা নিষিদ্ধ আছে, গরুর গশত খাওয়া, কবর দেওয়ার প্রথার কথা পাওয়া যায়।
এমনকি তাদের ধর্মগ্রন্থগুলোতে আল্লাহ, মুহাম্মদ শব্দদুটিও রয়েছে। যেমন তাদের একটি উপনিষদের নাম হল আল্লো উপনিষদ। বেদের কিছু স্লোক আছে যা হিন্দুরা প্রতিদিন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হিসেবে পাঠ করেন, যার সাথে আমাদের নিত্যদিনের নামাজে অপরিহার্য পঠিত সূরা ফাতেহার অর্থের সাথে হুবহু মিল রয়েছে।
এমন কি তাদের ধর্মগ্রন্থ নামাজ ও ওযুর বর্ণনাও রয়েছে। বেদের ৪ টা ভাগ। ঋকবেদ অথর্ববেদ সাম বেদ ও যযুর্জবেদ। বেদের অনেক শ্লোক আর আল-কোরআনের অনেক আয়াতের অর্থ প্রায় একই। পুরা বেদের কোথাও মূর্তি পূজার কথা উল্লেখ নাই।
তারা তাদের ধর্মকে সহস্রাধিক বছরের পুরোনো সনাতন ধর্ম বলে দাবী করে। ইসলাম ধর্ম মতে আমরা কোরআন থেকে জানি যে, আল্লাহ পাক মানব জাতির পূর্বে জ্বিন জাতি প্রেরণ করেছিলেন এবং জ্বিন জাতির মাঝেও নবী প্রেরণ করেছিলেন।
কোরআনের সূরা আনআম এর ১৩০ নং আয়াত হল– “হে জ্বীন ও মানব সম্প্রদায়, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে নবীগণ আগমন করেন নি? যারা তোমাদেরকে আমার বিধানাবলী বর্ণনা করতেন এবং তোমাদেরকে আজকের এ দিনের সাক্ষাতের ভীতি প্রদর্শণ করতেন? তারা বলবে: আমরা স্বীয় গুনাহ স্বীকার করে নিলাম। পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে। তারা নিজেদের বিরুদ্বে স্বীকার করে নিয়েছে যে, তারা কাফির ছিল।”
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় সংক্ষিপ্ত তাফসীরে মারেফুল কুরআনের ৪১৩ পৃষ্ঠায় মুফতি শফি (র:) লিখেছেন, “হিন্দুদের অবতারগণও সাধারনত: জ্বিন, তাদের মধ্যে কোন রাসূল ও নবী হবার সম্ভাবনা: কালবী, মুজাহিদ (রা:) প্রমুখ তাফসীরবিদ এ উক্তি গ্রহণ করে বলেছেন: এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, আদম (আ:) এর পূর্বে জিনদের রাসূল জিনদের মধ্য থেকেই আবিভূত হতেন।
যখন একথা প্রমাণিত যে, পৃথিবীতে মানব আগমনের হাজার হাজার বছর পূর্বে জ্বিন জাতি বসবাস করত এবং তারাও মানবজাতির মত বিধি-বিধান পালন করতে আদিষ্ট ছিল, তখন শরীয়ত ও যুক্তির দিক দিয়ে তাদের মধ্যে আল্লাহর বিধান পৌছানোর জন্যে নবী হওয়াও অপরিহার্য।
কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথি (র:) আরও বলেন, ভারতবর্ষের হিন্দুরা তাদের ধর্মগ্রন্থের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের পুরোনো বলে উল্লেখ করেন এবং তাদের অনুসৃত অবতারদেরকে সে যুগেরই লোক বলে উল্লেখ করেন। এটা অসম্ভব নয় যে, তারা এ জ্বিন জাতিরই পয়গম্বর ছিলেন এবং তাদেরই আনিত নির্দেশাবলী কালে পুস্তকাকারে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের অবতারদের যেসব চিত্র ও মূর্তি মন্দিরসমূহে রাখা হয় সেগুলোর দেহাকৃতিও অনেকটা এমনি ধরনের। কারও অনেকগুলো মুখমন্ডল, কারও অনেক হাত-পা, কারও হাতির মত শুঁড়। এগুলো সাধারণ মানবাকৃতি থেকে ভিন্ন। জ্বিনদের পক্ষে এহেন আকৃতি ধারণ করা মোটেই অসম্ভব নয়।
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় যে দলীলটা পাওয়া যায় সেখানে উনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছিলেন বিভিন্ন বিচিত্র আকৃতির প্রাণীকে আপনার কাছে আসতে দেখলাম। আর দূর্গা, কালি, লক্ষী, শিব, গণেশ, মহাদেব, কার্তিক, কৃষ্ণ, বিষ্ণু- উনাদের আকৃতিগুলিও কিন্তু বিচিত্র আকৃতির। হতে পারে উনারা জ্বীনদের মাঝে নবী ছিলেন পরবর্তীতে ঋষিদের মাধ্যমে যখন বেদের বাণীগুলি মানুষের কাছে এসেছিল তখন মানুষ আল্লাহকে বাদ দিয়ে দূর্গা, কালি, লক্ষী, শিব- উনাদেরকেই উপাস্য বানিয়ে ফেলেছে। আরবের কাফেররা যে লাত উজ্জার পূজা করত হাদীস শরীফেও কিন্তু বলা আছে যে, তারা জ্বীন ছিল।
আবার অনেক জ্বীন পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ঈমান আনলেও তাদের মানুষ অনুসারীরা আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ঈমান আনে নি। এই জাতীয় বর্ণনাও বিভিন্ন রেওয়াতে পাওয়া যায়। তাই এটা সম্ভব যে, তাদের অবতার জ্বিন জাতির রাসূল কিংবা তাদের প্রতিনিধি ছিলেন এবং তাদের ধর্মগ্রন্থও তাদের নির্দেশাবলীর সমষ্টি ছিল। এরপর আস্তে আস্তে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের ন্যায় একেও পরিবর্তিত করে তাতে শির্ক ও মুর্তিপুজা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।”
কোরআনের সূরা ইউনুস ৪৮ নং আয়াতে বলা আছে “ওয়ালি কুল্লি উম্মাতির রাসুলুন। অর্থ: প্রত্যেক জাতীর জন্যই রয়েছে রাসুল। সূরা ফাতির ২৫ নং আয়াতে বলা আছে, “ওয়া ইম্মিল উম্মাতি ইল্লা খালাফিহা নাজির। অর্থ: এমন কোন জাতি নেই যার কাছে সতর্ককারী আগমন করে নাই। নাজির এবং বশির বলতে নবী রাসুলকে বুঝায়।
এই আয়াতের পূর্বাংশে মহানবী (সাঃ) কেও বাশিরাও ওয়া নাজিরা বলা হয়েছে। ওয়া লাকাদ বায়াছনা ফি কুল্লে উম্মাতির রাসুলান (সূরা নাহল ৩৭ আয়াত) অর্থঃ নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে কোন না কোন রাসুল পাঠিয়েছিলাম।” সূরা রাদ ৮ নং আয়াতঃ ওয়া লিকুল্লে কাওমিন হাদ- অর্থাৎ প্রত্যেক জাতির জন্য হাদী বা পথ প্রদর্শক রয়েছে।” পবিত্র কোরআনে নবীদেরকে হাদী খেতাবেও ভুষিত করা হয়েছে। এই সব বর্ণানা থেকে জানা যায় যে, বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন যুগে সতর্ককারী, পথ প্রদর্শক রুপে নবী রাসুল আগমন করেছে।
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা কৃষ্ণবর্ণের এক নবী পাঠিয়েছিলেন যার নাম কোরআনে উল্লেখ করা হয় নাই-( কাশ্শাফ, মাদারেক) এই বর্ণনা থেকে একজন কৃষ্ণ বর্ণের নবীর আবির্ভাবের সংবাদ পাওয়া যায়। মোজাদ্দেদ আলফে সানী (রঃ) সরহিন্দ এলাকায় কাশফে কতিপয় নবীর সামাধী দর্শন করেছিলেন (হাদীকা মাহমুদিয়া)।
খ্যাতনামা তাপস মির্যা মাজহার জান এক স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কৃষ্ণ এবং রামচন্দ্রকে নবীরুপে স্বীকার করেছেন (মাকামাতে মাজহারী) দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মৌলানা মোহাম্মদ কাসেম নানুতবী (রঃ) কৃষ্ণ এবং রামচন্দ্রকে সত্য নবী বলেছেন মোবাহাসা শাহজাহানপুর, সৎ ধরম প্রচার) মৌলানা ওয়াহিদুজ্জামান কোরআনের তাফসিরে লিখেছেন, “স্মরণ রাখা উচিত যে, কৃষ্ণ আল্লাহর এক প্রিয় ও সৎপথ প্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন এবং নিজ যুগ ও জাতীর জন্য খোদার পক্ষ থেকে সতর্ককারী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন (তফসীরে ওয়াহিদী)।
খাজা হাসান নিজামী বলেছেন, “কৃষ্ণ ভারতের পথ প্রদর্শক ছিলেন। কৃষ্ণ প্রকৃত পক্ষে দুষ্কৃতিকারীদের বিনাশ কল্পে প্রেরিত পয়েছিলেন” (কৃষণবিতি)। মৌলানা সোলায়মান নদভী ভারতের রামচন্দ্র, কৃষ্ণ এবং বুদ্ধকে নবীরুপে স্বীকার করেছে (সীরাত মুবারক, ১৯৮২)।
মুফতি মোহাম্মদ শফি তার তফসীর মা’রেফুল কোরআনে বেদের সকল ঋষিকেই পয়গম্বর রুপে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন (৩য় খন্ড দ্রষ্টব্য) জামাতে ইসলাসীর পত্রিকা পৃথিবী ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারী সংখ্যায় রিখেছে, “গীতার শ্রীকৃষ্ণও ছিলেন একেশ্বরবাদী এই পরম পুরষের উল্লেখ করে মহানবী বলেছেনঃ ‘কানা ফিল হিন্দে নবীয়ান আসওয়াদুল লাওনা এসমুহু কাহেন’ (হাদীস দোলমী, তারিখ হামদান, বাবুল কাফ)। অর্থাৎ ভারতে এক নবীর আবির্ভাব ঘটে যিনি কৃষ্ণবর্ণ এবং কানাই নামে পরিচিত।
সুতরাং মনে করার যথেষ্ট আবকাশ রয়েছে নবুয়তের ধারার সঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট, যদিও এখন ভিন্ন পরিচয়ে তাঁর পরিচয় (৩৬ পৃঃ) মৌলানা মহিউদ্দিন খান সম্পাদিত মাসিক মদীনা পত্রিকায় বলা হয়েছে, ‘সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, তৌরাত ওইঞ্জিলের মতই গীতা, বেদ ও পুরাণও আল্লাহপাকের নাজিলকৃত কিতাব বা সহীফা ছিল এবং ঐ গুলি ঐ যামানার নবী ও রাসুলগণের উপর আল্লাহ্ পাকের তরফ থেকেই নাজিল হয়েছিল ( ডিসেম্বও ১৯৮৯)। কেউ কেউ কৃষ্ণকে কৃষ্ণস্তভগবান স্বয়ং বা কৃষ্ণই ভগবানের পূর্ণ অবতার বলে উল্লেখ করেছেন।
আবার মহাভারতের মতে কৃষ্ণকে বিষ্ণুর অষ্টমাংশ অবতার এবং কোন কোন পুরাণে তাঁকে ষষ্টাংশ অবতার বলা হয়েছে দেখুন মহাভারত ১৮/৫/২৪, ১২/২৮০/৬২, বায়ু পুরাণ, ১/২৩/২১৭, ২-২১৯১, লিঙ্গ পুরাণ, ১/২৪/১২৫-১২৬)। বৈষ্ণবদেব প্রধান গ্রন্থ শ্রীমদ্ভাগবতেও কৃষ্ণকে অংশাবতার বলা হয়েছে (৪র্থ স্কন্দ, ১৪ অধ্যায়, ১০ম স্কন্দ, ২য় অধ্যায়)। তাই হিন্দুরা তাদেরকে অবতার বা ভগবান বানালেও মূলত তারা ভগবান ছিলেন না, তারা হয়ত আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবী-রাসূলই ছিলেন। তাই হিন্দু ধর্মও এককালে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সত্য ধর্মই ছিল পরবর্তীতে অপরাপর ধর্মের মতই একেও বিকৃত করা হয়।
খবর: এবিপি নিউজ
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।