সাংবাদিকতায় অনবদ্ধ ৪০ বছর পার করেছেন কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক আলহাজ¦ মুহাম্মদ শামসুল হক শারেক। সাংবাদিক মুহাম্মদ শামসুল হক শারেক নিরহংকারী, বিনয়ী, আধুনিক ও ইসলামী উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন একজন সমাজ কর্মী ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব। শুধুমাত্র সাংবাদিকতা পেশায় তিনি বিগত ৪০ বছর ধরে নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁর মেধা, যোগ্যতা, সততা ও সমাজকর্মে তিনি সর্বমহলে সমাদৃত।

সাংবাদিক শারেক কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার রতœাপালং ইউনিয়নের গয়ালমারা এলাকায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১ র্মাচ ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগী আলহাজ্ব আসায়াদ আলী। মাতা আলকিস খাতুন ১১ অক্টোবর ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। দাদা মুহাম্মদ হারুন তাঁর জন্মের আগে এবং দাদী আমির খাতুন তাঁর শৈশবে ইন্তেকাল করেন। নানা হায়দার আলী ও নানি আমেনা খাতুন ও তাঁর শৈশবে ইন্তেকাল করেন। তাঁর বংশানুক্রম যথাক্রমে মুহাম্মদ শামসুল হক শারেক পিতা আসায়াদ আলী পিতা মুহাম্মদ হারুন পিতা আলী হোসাইন পিতা সমদ আলী পিতা আলী। তাঁর দাদা মুহাম্মদ হারুন ছিলেন প্রখ্যাত একজন শৈল্য চিকিৎসক। বংশানুক্রমে সাংবাদিক শারেক এর পিতা আলহাজ্ব আসায়াদ আলী তাঁর পিতার একমাত্র পুত্র সন্তান, সাংবাদিক শারেকও তাঁর পিতার একমাত্র পুত্র সন্তান এবং মুহাম্মদ নাঈম শারেক তাঁর এক মাত্র পুত্র সন্তান।

তিনি গ্রামের মক্তবে এবং রাজাপালং চাকবৈঠা ও ডেইল পাড়া প্রাইমারীতে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। ডিগলিয়া পালং মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ১ম ছাত্র ছিলেন তিনি। ৮ম শ্রেণী থেকে তিনি এস.এস.সি পর্যন্ত টেকনাফ উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। পাশাপাশি আলিম-ফাজিল পাশ করেন রঙ্গিখালী ফাজিল মাদ্রাসা থেকে। ওই সময় থেকে তিনি টেকনাফে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন ।

কুরআন ও হাদিসের তাফসীর শিক্ষা গ্রহণ পটিয়া বড় মাদ্রাসা (জামেয়া ইসলামীয়া পটিয়া) থেকে, হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা (জামেয়া আহলীয়া) থেকে দাওরায়ে হাদিস এর সনদ গ্রহণ করেন। কক্সবাজার হাশেমিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে কামিল (এম.এম) ডিগ্রী অর্জন করেন। চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ থেকে ¯œাতক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। কুরআন, হাদীস, তাফসীর ও ফিকহার উপর বিশেষ জ্ঞান রাখেন তিনি। বাংলা, ইংরেজী, আরবী, ফার্সি ও উর্দু ভাষায় সমানভাবে পারদর্শী সাংবাদিক শামসুল হক শারেক।

বাবা আলহাজ্ব আসায়াদ আলী ও তাঁর মাতা মরহুমা আলকিস খাতুন’র প্রভাবে ছোট বেলা থেকে তিনি ইসলামী জীবনাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে উঠেন। পড়ালেখা করে বুঝতে পারেন ‘ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান’।‘ইসলামী জীবনাদর্শ জানা এবং মানা ছাড়া ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অসম্ভব’। আর তাবলীগে দ্বীন সকল মুসলমানের উপর ফরজ। সাংবাদিকতার উপর একাডেমিক ডিগ্রী নেয়ার সুযোগ না হলেও ইসলামের প্রচার প্রসারে ছাত্র জীবন শেষ করে ‘সাংবাদিকতাকে’ই পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি।

স¦াধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ৩য়/৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র। ওই সময় রেডিও বিবিসিতে প্রখ্যাত সাংবাদিক মার্কটালীর পরিবেশিত স¦াধীনতা যুদ্ধের সংবাদ তাকে প্রচন্ডভাবে আলোড়িত করেছিল। তখন তাঁর মনে সাংবাদিক হবার বাসনা সৃষ্টি হয়। কক্সবাজারের পথিকৃত সাংবাদিক মরহুম শামসুল ইসলাম সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘কক্সবাজার বার্তা’ দিয়ে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সাংবাদিকতার হাতে খড়ি। সাপ্তাহিক ‘সোনার বাংলা’ সাপ্তাহিক ‘আজকের সূর্যোদয়’ ও ‘দৈনিক সংগ্রাম’ দিয়েই তাঁর সাংবাদিকতায় প্রবেশ।

১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শিক্ষাঙ্গন ভিত্তিক ছাত্রদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে সাংবাদিকতার পাশাপাশি আল কুরআনের আদর্শ প্রচার ভিত্তিক ‘আল কুরআন সোসাইটি’ নামের একটি অরাজনৈতিক ‘দাওয়াহ’ সংগঠনের পরিচালক তিনি। সন্ত্রাসমূক্ত শান্তিময় সমাজ গঠনে সাংবাদিকতার পাশাপাশি এই সংগঠনের মাধ্যমে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ, ও শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সকলের মাঝে ইসলামের দাওয়াত ও কুরআনের আহবান নিয়ে তাবলীগের কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ ৬ ফ্রেব্রুয়ারী দৈনিক হিমছড়ি প্রকাশ করে তিনি সর্বাত্মকভাবে সাংবাদিকতায় আত্মনিয়োগ করেন। কক্সবাজারের পাঠকপ্রিয় দৈনিক হিমছড়ির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তিনি।

সাংবাদিক শামসুল হক শারেক ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে দেশের সাঁড়া জাগানো প্রভাবশালী সংবাদপত্র দৈনিক ইনকিলাবে যোগদান করেন। ইনকিলাবে প্রথমে কক্সবাজার প্রতিনিধি, পরে স্টাফ রিপোর্টার ও আঞ্চলিক প্রধান এবং ‘কক্সবজার ব্যুরোচীফ’ হিসেবে গত ১৮ বছর ধরে কাজ করে আসছেন। সম্প্রতি সাংবাদিক শারেক দৈনিক ইনকিলাবের বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। শত সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকুলতার মধ্যেও তিনি সাংবাদিকতা পেশায় এখনো অবিচল। উখিয়া প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সদস্য তিনি। কক্সবাজার প্রেসক্লাবে বিভিন্ন সময় তিনি কার্যকরি কমিটিতেও দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়াও তিনি একজন সক্রিয় মানবাধিকার কর্মী। হিউম্যান কনসার্ন নামের একটি মানবাধিকার সংগঠনের সেক্রেটারী জেনারেল তিনি। ৯০’র দশকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে মিয়ানমার সীমান্তবাহিনী কর্তৃক স্থাপিত সহস্র ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণে অসংখ্য বাংলাদেশী শ্রমিক হতাহত হয়। হিউম্যান কনসার্ন এর ব্যানারে তিনি দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠন গুলোকে সোচ্চার করলে এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হয়। এতে মিয়ানমার নত স্বীকার করতে বাধ্য হয়।

শিক্ষা প্রসারে তারঁ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তিনি কক্সবাজারের প্রাচীনতম ইসলামী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার হাশেমিয়া কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির অন্যতম সদস্য মনোনীত হন। নিজ গ্রাম উখিয়ায় গয়ালমারা দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ওই মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও জীবন সদস্য। কক্সবাজার ইসলামিয়া মহিলা কামিল (মাস্টার্স) মাদ্রাসার শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির নির্বাচিত সভাতি তিনি। কর্মজীবনে উখিয়া কেজি স্কুল ও কক্সবাজার আলহেরা একাডেমীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষা, চিকিৎসা ও আর্তমানবতার সেবায় সাংবাদিক শারেকের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

দেশী-বিদেশী ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ৫০ জন ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাতকার নিয়ে ‘ইন্টারভিউজ’ নামে একটি প্রকাশনা প্রকাশিতব্য রয়েছে। দেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রভাবশালী শতাধিক মনিষীদের সাহচর্য গ্রহণ ও তাঁদের মহিমা নিয়ে ‘আলোর পরশ’ নামে আরো একটি বই প্রকাশ হওয়ার অপেক্ষায়। ইতোমধে ‘দিল্লি বহুদূর’ নামে তাঁর ভ্রমণ কাহিনী ভিত্তিক একটি বই বেশ সাঁড়া জাগিয়েছে।

সৌদি আরব ভিত্তিক একটি বিদেশী এনজিও সংস্থায় কাজের সুবাদে ‘৯০’র দশকে বছর দু’এক সৌদি আরবে অবস্থান করেন। পারিবারিক জীবনে মা-বাবার দুই মেয়ে ও এক পুত্র সন্তানের সবার বড় তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী আয়েশা বেগম তিন কন্যা ও এক মাত্র পুত্র সন্তানের জনক তিনি। ১ম মেয়ে মারজান বিনতে শারেক ডাক্তার (বিডিএস)। একমাত্র পুত্র সন্তান মুহাম্মদ নাঈম শারেক নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে অনার্স করছে। ২য় মেয়ে তাসনীম বিনেত শারেক ও ছোট মেয়ে ফারহান বিনতে শারেক ইসলামিয়া মহিলা কামিল অনার্স মাদরাসায় মাধ্যমিক স্তরে পড়ে। স্ত্রী আয়েশা বেগম কক্সবাজার সরকারী কলেজ থেকে গ্রেজুয়েশন করেছে। ছোট বোন নাজিয়া শারমিন কক্সবাজার ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদ্রাসার অনার্সের ছাত্রী।

বর্তমানে পৌরসভা এলাকার দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার সী-হিল হাউজিং’এ বসবাস করে আসছেন তিনি। সেপ্টেম্বর ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে কক্সবাজার পৌরসভা দক্ষিণ রুমালিরছরা এলাকায় তারঁ বাড়ি সংলগ্ন সড়কটি তাঁর সম্মানে ‘সাংবাদিক শামসুল হক শারেক সড়ক’ নামে নাম করণ করেন। সড়কটির নির্মাণ কাজ উদ্ভোধন করেন পৌর মেয়র সরওয়ার কামাল।

সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে কক্সবজার সাংবাদিক সংসদ তাঁকে সম্মাননা লাভ করেন। পরিবেশ সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে ‘মরহুম এড. ফিরোজ আহমদ চৌধুরী ফাউন্ডেশন’ এবং সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৫ সালে ‘খুরুস্কুল তাফহিমুল কুরআন ট্রাষ্ট’ তাঁকে সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করে।

বেশ কয়েকবার পবিত্র হজ্ব এবং ওমরা আদায় করেন তিনি। কুরআন-হাদিস এবং আধুনিক বিষয়ে বেশ পান্ডিত্ব রয়েছে তাঁর। সদ্বালাপি, হাস্যোজ্জল, বন্ধুবৎসল ও সহজ সরল জীবন যাপনকারী সাংবাদিক শামসুল হক শারেক সাংবাদিকতা ছাড়াও ইসলামী ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুখ্যাতি রয়েছে তাঁর।

সার্ক অঞ্চলের সাংবাদিকদের ফোরাম ‘সাফমা’র উদ্যোগে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ছাড়া ও ‘ইউএনএইচসিআর’ আয়োজিত শরনার্থী বিষয়ক অপর এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন। সৌদি আরব ও ভারত ভ্রমণ করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্থ সহচর, কক্সবাজারে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম এ কে এম মোজাম্মেল হকের পারিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক শামসুল হক শারেক তাঁরই তথ্যাবধানে কক্সবাজারে বেড়ে উঠেন। ছাত্র জীবনে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্রলীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রয়োজনীয় খাবার ও পাকিস্তানীদের খবরাখবর সরবরাহ করে সেই শৈশবে ক্ষুধে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উপাধী পেয়েছিলেন সংবাদিক শারেক।

উখিয়া-টেকনাফের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি অধ্যাপক মুহাম্মদ আলীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক শারেক ১৯৯৬ সালে দৈনিক হিমছড়ি প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা (তৎকালীন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রমোট করেন। এখনো তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে লেখেই চলেছেন। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের ইতিবাচক কর্মকান্ড নিয়ে তাঁর লেখা ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, ‘বড় অকৃতজ্ঞ জাতি’ ‘আশার আলো’ ও ‘শেখ হাসিনার সালাম’ নিবন্ধ গুলো ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।