মোঃ নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম:
দক্ষিণ চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর বিপনী বিতান গুলোতে শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে ঈদ বাজার। রমজানের শুরুতে উপকূলীয় অঞ্চলসহ কয়েকটি এলাকা ঘূণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে ক্ষতিগস্ত হওয়ায় ঈদ তেমন জমে উঠেনি। ঘূণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কেটে না উঠতেই ফের বন্যায় প্লাবিত নিন্মাঞ্চল। বন্যায় আঘাত কেটে উঠায় এখন ভিড় বেড়েছে বিপনী বিতাণগুলোতে। তবে উপকূলীয় এলাকায় বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় সেখানে লোকজনের মাঝে নেই ঈদের আমেজ।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে সর্বস্তরের মানুষের পদভারে জমজমাট হয়ে উঠছে মার্কেটগুলো। শিশু, নারী-পুরুষের পদচারণায় সরগরম বিপনী বিতানগুলো। ভারতীয় সিনেমার নামে বাজারে আসা বাহুবলি পোশাকের সবচেয়ে কদর বেশি। বেচাকেনা চলছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। ক্রেতারা তাদের পছন্দমতো পোশাক-প্রসাধানী ঈদপন্য ক্রয় করছেন। এছাড়া নতুন পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন টেইলার্স কারিগররা। টেইলার্সের দোকানিরা ১৫ রমজান থেকে নতুন জামা সেলাই অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। কারিগররা রাতদিন সমান তালে কাজ করছেন। ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানে বিভিন্ন ডিজাইনের কাপড়, প্রসাধনী, জুতা-সেন্ডেল ও নিত্য প্রয়োজনীয় পসরার সমন্বয় করতে আপ্রান চেষ্টা চালিয়েছেন বিভিন্ন বিপনী কেন্দ্রে ঘুরে তা’ বুঝা গেছে। রমজান শুরুর আগে থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ শপিং মল কেরানীহাটের নিউ মার্কেটকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।
লোহাগাড়ার স্টার সুপার মার্কেট, কর্ণফুলী সিটি, লোহাগাড়া শপিং সেন্টার, মোস্তফা সিটি, চৌধুরী বেস্ট প্লাজা, চন্দনাইশের হাজারী শপিং সেন্টার, হাজারী টাওয়ার, গাছবাড়িয়া ছিদ্দিক বাছুরা শপিং সেন্টার, গনি সুপার মার্কেট, পটিয়ার আলম প্লাজা, চৌধুরী মার্কেট, শাহ আমির মার্কেট, ছমদিয়া সুপার মার্কেট, পটিয়া সুপার মার্কেট, জাকারিয়া টাওয়ার, গুলজার টাওয়ার, বোয়ালখালী সদরের জব্বার মার্কেট, খাজা মার্কেট ও মদিনা মার্কেট ঘুরে গত শনিবার ও রোববার দেখা গেছে, বিপনী বিতাণগুলোতে ক্রেতাদের প্রচ- ভিড়।
দোকানীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগে রমজানের মাঝামাঝিতে ঈদ বাজার শুরু হতো। তবে এখন রমজান শুরুর সপ্তাহ খানেক আগে থেকে লোকজন ঈদের কেনাকাটা শুরু করে দেয়। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও বেড়ে যাচ্ছে। দুর্যোগের কারণে এবার ২০শে রমজানের পর থেকে এই অঞ্চলের বিপনী বিতাণগুলোতে ঈদ বাজার জমে উঠেছে। এছাড়া নি¤েœ আয়ের মানুষগুলো ফুটফাতের দোকানগুলোতে ভিড় করেছেন। নতুন পোশাক না হলে ঈদ আনন্দ যেন পূর্ণতা আসে না। ফলে ধনী-গরীব সকলেই সামর্থ অনুযায়ী নতুন পোশাকের জন্য ভিড় করেছেন বিপনী বিতাণগুলোতে।
কেরানীহাট নিউ মার্কেটের মৌলানা ক্লথ ষ্টোরের মালিক মো. লোকমান বলেন, ‘বহুবলি-২, লেহেঙ্গা থ্রিপিস, জামদানি শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় সিরিয়ালের নামে আসা পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ একটু বেশি। কাপড়ের দামও মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে।’
নিউ মার্কেট উপহার বস্ত্র বিতাণের সত্ত্বাধীকারী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এবারের রমজানে বিক্রির জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে থ্রি পিস ও শাড়ি সংগ্রহ করেছি। রমজানের শুরুতে দুর্যোগের কারণে মার্কেটে ক্রেতা কম থাকলেও এখন বেড়েছে ক্রেতাদের সমাগম। বিক্রিও ভালো হচ্ছে।’
বাজালিয়ার বড়দুয়ারা থেকে আসা মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘নিউ মার্কেটে বেশি দোকান ঘুরে দেখতে হয়নি। কয়েকটি দোকান ঘুরে পরিবারের সবার জন্য পছন্দের কাপড় কিনতে পেরেছি। এক মার্কেটে সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে। তবে সবকিছুর যেন দামটা একটু বেশী।’
ঈদের কেনাকাটা করার জন্য উপজেলার পুরাণগড় থেকে আসা পারভীন আক্তার বলেন, ‘এবার ঈদে পোশাকের ধরন বদলে গেছে। একটি বহুবলি-২ থ্রিপিস কিনেছি ৩ হাজার ৫ শত টাকায়। তবে দাম একটু বেশি হলেও মার্কেটে ভালো মানের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।’
কেরানীহাট নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমবয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ঈদ বাজারকে ঘিরে মার্কেটে যাতে ক্রেতারা প্রতারিত না হয়, সে জন্য দোকানীদেরকে বলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিউ মার্কেটে ক্রেতাদের আর্কষণের জন্য আলোক সজ্জা করা হয়েছে। ক্রেতাদের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।’
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি.) মো. রফিকুল হোসেন বলেন, ‘ঈদ বাজারকে ঘিরে যাতে কোন অপরাধ সংঘটিত না হয়, সেই জন্য উপজেলার প্রতিটি বাজারে রাতদিন পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া অরাধীরা মাথাছাড়া দিয়ে যাতে উঠতে না পারে নিয়মিত এলাকায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।