ঢাকাটাইমস : ২০০৭ সালের শুরু থেকে প্রায় দুই বছর ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশ চালালেও পেছন থেকে কলকাঠি ছিল সে সময়ের সেনা প্রধান মঈন উ আহমদের হাতেই। বলা হয়ে থাকে, মঈনের সম্মতি ছাড়া তখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। সেই মঈনই এখন দেশে আসছেন না প্রায় আট বছর ধরে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে সাবেক সেনা প্রধানদের কেউই এভাবে টানা বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকেননি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও কয়েক মাস সেনাপ্রধান ছিলেন মঈন। ওই বছরের জুনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। বর্তমানে নিউইয়র্কের জ্যামাইকার একটি বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় সাধারণ জীবনযাপন করছেন তিনি।
প্রথমে ফ্লোরিডায় ছোট ভাই ও ছেলের কাছে থাকলেও পরে ‘থ্রোট ক্যানসার’ ধরা পড়লে চিকিৎসার জন্য তিনি নিউইয়র্কে চলে যান। ক্যানসারের জন্য কেমোথেরাপি ও বোনম্যারো অস্ত্রোপচার হয় ওয়ান ইলিভেনের দাপুটে এই ব্যক্তিটি। প্রবাসীরা জানিয়েছেন, দুই কক্ষের একটি সাধারণ অ্যাপার্টমেন্টে থাকছেন ১/১১ মঈন।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের জুলাই মাসের শেষদিকে তাকে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। ওই বিয়েতে বেশ হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় দেখা যায় তাকে। পুরোটা সময়জুড়ে সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী।
২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গেলে তিনি কিছুদিন পরই দেশে ফিরে আসবেন বলা হলেও তা আর হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে একবার শুধুমাত্র সৌদি আরবে হজ করতে গিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি দীর্ঘ সময় ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে। এ সময়ের মধ্যে ফাউন্ডেশন অব ফ্লোরিডার আয়োজনে উত্তর আমেরিকা রবীন্দ্র সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তবে তিনিও বাংলাদেশি কমিউনিটি থেকে নিজেকে দূরে রাখেন।
১/১১ সময়ের বিভিন্ন ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠনের দাবি উঠেছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে। জাতীয় সংসদেও মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরাও একই দাবি তুলেছিলেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতন ঘটনার তদন্ত করেছিলেন। ব্যবস্থা নিতে সুপারিশও জমা দিয়েছিলেন ২০১১ সালে, কিন্তু সেই সুপারিশ প্রকাশিত হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশ ও প্রচারিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী মঈন উ আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে এসেও ভালো নেই। ব্যয়বহুল এ চিকিৎসা করাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন।
২০০৭ সালের ২১ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষ্য দিতে বছর দুয়েক আগে সংসদীয় কমিটি তাকে দেশে তলব করলে মঈন নিজের অসুস্থতার খবর তুলে ধরেন। নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের একটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যবস্থাপত্র সংগ্রহ করেন।
পরে জানা যায়, মঈনের ক্যান্সারের মতো মেরুদণ্ডের হাড়ের ক্ষয় রোগ দেখা দিয়েছে। তবে এজন্য তাকে কেমোথেরাপি নিতে হয়েছে। ওই সময় তার শরীরের ওজন কমে যায়।
সাপ্তাহিক পরিচয় জানিয়েছে, মঈনকে প্রতিমাসে একটি করে কেমোথেরাপি নিতে হচ্ছে। অর্থ সঙ্কটের কারণে ব্যয়বহুল এই চিকিৎসায় তিনি নিউইয়র্কের মেডিকেইড সুবিধা নিচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুধুমাত্র নিউইয়র্ক রাজ্যে অনেকটা বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা থাকায় মঈন উ আহমেদ ফ্লোরিডা থেকে নিউইয়র্কের কুইন্সে মামি শাশুড়ির বাসায় চলে আসেন। তবে এখানে বাড়িটি অনেক ছোট। তাই তিনি প্রায়ই ফ্লোরিডা রাজ্যে ছেলের কাছে চলে যান।
মঈনের মতোই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন তত্ত্বাবধায়কের আমলের সরকার প্রধান ফখরুদ্দিন আহমেদ। তিনিও দেশে আসছেন না
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) আক্তারুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার কারণে মনে হয় দুইটি কারণে ফখরুদ্দিন ও মইন উদ্দিন আহমেদ (সাবেক সেনাপ্রধান) দেশে আসতে পারছেন না। প্রথমত. তারা দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্র দীর্ঘায়িত করেছে। দ্বিতীয়ত. তারা এমন কিছু কাজ করেছে, সেটা নৈতিকভাবে ঠিক হয়নি। এই অপরাধবোধের অনুশোচনা থেকেই তারা বিদেশে আছেন।’
‘দেশে না আসাটাও তাদের অপরাধের একটা স্বীকৃতি। তারা হয়ত মনে করছেন, দেশে আসলেই তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।