আমাদেরসময় :
আগামী দুই বছর নতুন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট আইন) বাস্তবায়ন স্থগিত রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় বিষয়টি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে যেহেতু কথা উঠেছে এবং ব্যবসায়ীরাও এই আইনে তেমন সাড়া দিচ্ছেন না, সে কারণে আমি মনে করি এই আইন আগে যেমন ছিল আগামী দুই বছরও তেমনই থাকবে। এছাড়া ব্যাংকের আবগারি শুল্ক তিন স্তরে করারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার বাজেট নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে এবং অর্থমন্ত্রীর অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। বাজেট মানুষের জন্য, মানুষের কোন কষ্ট কিংবা দুর্ভোগ হোক তা আমরা চাই না, অর্থমন্ত্রীও চান না।
গত ১ জুন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব বিষয় অর্থমন্ত্রী তুলে ধরেছেন তার মধ্যে লাখ টাকার ওপরে ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি এবং নিত্যপণ্য ছাড়া সব সেবা ও পণ্যে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। সংসদের বাইরে বিএনপি এবং সংসদের ভেতরে জাতীয় পার্টি তো বটেই, খোদ সরকারি দলের বেশ কয়েকজন সদস্যও এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, এই প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার কথা।
বরাবর বাজেট আলোচনার শেষভাবে প্রধানমন্ত্রী কিছু সুপারিশ করেন এবং এরপর অর্থমন্ত্রী তার বাজেট প্রস্তাবে কিছু পরিবর্তন আনেন। আর অর্থবছর শেষ হওয়ার আগের দিন এই বাজেট পাস হয় সংসদে।
বাজেট পাসের আগের দিন প্রধানমন্ত্রী তার দীর্ঘ বক্তব্য শেষে অর্থমন্ত্রীকে মোট তিনটি পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীতে তিনটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ নজর দিতে আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী চাল আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর কথা বলেন। হাওরে ফসলহানির প্রেক্ষিতে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এরই মধ্যে সরকার চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ কর এবং তিন শতাংশ সম্পূরক শুল্ক থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন বাজেটের অপেক্ষা না করে চাল আমদানিতে যে ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং ৩০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি ফি ছিলো, এ দুইটিকে সমন্বয় করে আমরা আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ নির্ধারণ করেছি। আমাদের যথেষ্ট খাদ্য উৎপাদন হলে এ ব্যবস্থা আর রাখা লাগবে না। তারপরও যে পর্যন্ত আমরা চাল আমদানির উপর নির্ভরশীল থাকব, এ নীতি বলবৎ থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, হাওর অঞ্চলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছি। নানা ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। সেখানে বন্যার কারণে চালের ক্ষতি হয়েছে, নইলে আমদানি করতে হতো না। যদি আগামীতেও বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়, তাহলে আগাম ব্যবস্থা করে যাবো।
এরপর ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সঞ্চয়ী হিসাবে আগে কেউ যদি বিশ হাজার টাকার বেশি রাখতো তাকে নির্দিষ্ট হারে আবগারি শুল্ক দিতে হতো। অর্থমন্ত্রী বলার কারণে মানুষ উল্টো বুঝেছে। তিনি বিশ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়ী হিসাবকে শুল্ক মুক্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু সবাই বুঝেছে উল্টো। অপপ্রচার হয়েছে। বলা হয়েছিলো এক লাখ টাকা থাকলেই এক হাজার টাকা কর দিতে হবে। এ বিষয়টি অর্থমন্ত্রী আরও পরিষ্কার করে দেবেন। তবে এক লাখ টাকা সঞ্চয়ে তিনি যে শুল্ক মুক্ত রেখেছেন, এ জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।
অর্থমন্ত্রী এক লাখের ঊর্ধ্ব থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাক হিসাবে আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এটাকে সংশোধন করে দুটি স্তর করার প্রস্তাব দিয়েছেন। বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী এক লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব আবগারি শুল্কমুক্ত রাখা এবং এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫০ টাকা এবং পাঁচ লাখের ঊর্ধ্ব থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
১০ লাখ টাকার ঊর্ধ্ব ব্যাংক হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শুল্ক বৃদ্ধির যে প্রস্তাব করেছিলেন বাজেটে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো প্রস্তাব করেননি।
২০১২ সালে পাস হওয়া ভ্যাট আইন অনুযায়ী এবারের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী নিত্যপণ্য ও চিকিৎসা ছাড়া বাকি পণ্যে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এই আইনটি দুই বছর পিছিয়ে গিয়ে আগের হারেই ভ্যাট আদায়ের কথা বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন আইনটা খুব ভাল। কিন্তু এটা নিয়ে যেহেতু নানা কথা হয়েছে, আমি মনে করি, মূল্য সংযোজন কর নিয়ে যেহেতু নানা ধরনের কথা হচ্ছে, সে জন্য আগের পর্যায়ে যে রকম ছিল, সেভাবেই থাকবে দুই বছরের জন্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনটি ১৯৯১ সালে করা। এখানে সংশোধনীর জন্য ২০০৮ সালে খসড়া তৈরি করা হয়। এ নিয়ে আমাদের সরকার সাড়ে তিন বছর কাজ করে। এ জন্য বিভিন্ন সংগঠনের সাথে আমরা মতবিনিময় করি। এরপর আমরা ২০১২ সালে আমরা আইন তৈরি করি দেই। কিন্তু এখনও তা অনেকেই ভুলেই গেছি। এখন এটা নিয়ে যেহেতু নানা কথা উঠেছে। ব্যবসায়ীরা সমালোচনা করছে। তাই এটা আগের পর্যায়ে যেভাবে ছিলো সেভাবে থাকবে অন্তত আরও দুই বছরের জন্য। এ আবেদন আমি সকলের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীর কাছে করেছি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।