জাহাঙ্গীর আলম:
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত টেকনাফ উপজেলা। এই উপজেলায় রয়েছে ছয়টি ইউনিয়ন। এই উপজেলায় রয়েছে লাখের ও অধিক জনসংখ্যা।বরাবরেই শিক্ষায় খুব পিছিয়ে। নব্বই দশক পর্যন্ত বেশ শিক্ষিত মানুষ জন্ম দিয়েছে এই উপজেলাটি। এই মানুষ গুলো সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন জায়গায় দেশমাতৃকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশেষ করে ২০০০ সনের পর থেকে বদলে যেতে শুরু করেছে যেমন রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে, নতুন নতুন স্থাপনা তৈরী হয়েছে, বিভিন্ন নামীদামী কোম্পানি গুলোর আগমন ঘটেছে। যেমন- ওয়াল্টন, সিঙ্গার, ভিশনসহ আরো নাম না জানা অনেক কোম্পানি। জন্ম হয়েছে সর্বনাশা ইয়াবার।
টেকনাফ থেকে এখন এসি বাসে অনায়সে ঢাকা যাওয়া যায় কিংবা ঢাকা থেকে টেকনাফ। যাদের থাকার জায়গা ছিলনা তাদের বহুতল ভবন তৈরী হয়েছে। যারা শ্রমিক ছিল তারা এখন শ্রমিক নেতা হয়েছে। যারা রিকশা চালাতো তারা এখন গাড়ির কোম্পানি হয়েছে। যারা গাড়ির কোম্পানি ছিল তারা এখন জনপ্রতিনিধি হয়েছে। আরো কত্ত পরিবর্তন। বলে শেষ করা যাবেনা।
মানুষ বলে- ‘ঢাকা শহরে টাকা উড়ে’ এই প্রবাদটিকে ভূল প্রমানিত করেছে টেকনাফের লোকজন। এখন বলা যায়, টেকনাফে টাকা উড়ে। ছাত্ররা শিক্ষা প্রতিষ্টান গুলোতে কেউ তেমনটা এখন আর হেঁটে কিংবা রিকশায় যাতায়াত করেনা যাতায়াত করে আপডেট মডেলের মটর বাইক এবং গাড়িতে। যেন শিক্ষা প্রতিষ্টান নয় গাড়ির শোরুম এমনই আমার কাছে মনে হয়েছে। নবম কিংবা দশম শ্রেণীতে পড়ে তাতেই মনে হবে ভার্সিটির ছাত্র। তাদের ফ্যাশন দেখে মনে হয় প্রত্যেকেই গুলশান-বনানীর অভিজাত পরিারের ছেলে। লক্ষাধিক জনসংখ্যার এই উপজেলায় ভার্সিটি কিংবা কলেজে পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের সংখ্যা হাতে গোনে হিসাব করা যাবে। একটা সময় ছিল পড়াশোনার প্রতিযোগীতা আর এখন টাকা কামানোর প্রতিযোগীতা। এই অশ্লিল প্রতিযোগীতার ফলে যুব সমাজ ধ্বংস হওয়ার দ্বার প্রান্তে পৌছে গেছে। টাকা হলেই মানুষের পরিবর্তন আসে এইটাই স্বাভাবিক। কিছু পরিবর্তন মানুষের জীবনে মঙ্গল বয়ে নিয়ে আসে আর কিছু পরিবর্তন মানুষকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। এই শহরের কিছু মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ। যারা সংগ্রাম করে পরিশ্রম করে সৎ উপায়ে ধন সম্পত্তি অর্জন করে সৃষ্টিকর্তা সাথে সাথে তাদেরকে অপরিসীম ধৈর্য্য ও দান করে থাকেন। আর যারা অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে ধন সম্পদের মালিক বনে যান সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে সাময়িক সময়ের জন্য স্বস্তিতে রাখলে ও তার পুরো জেনারেশনেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেন। সর্বনাশা ইয়াবা আমাদেরকে পুরোটা গ্রাস করে ফেলেছে। ইয়াবার ফলে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে ঠিকই কিন্তু মাগার নিজের তৈরী বিলাস বহুল ঘরে রাতে ঘুমাতে পারেনা।স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারেনা। ত্রসফায়ার সবসময় তাদেরকে তাড়া করে বেড়ায়।অধিকাংশ মানুষই মিথ্যা অহংকারে ডুবে আছে। এমনকি অহংকারের জন্য তাদের পাশে দাড়াঁনো যায়না,কথা বলা যায় না। যে পরিবার সর্বনাশা ইয়াবার সাথে জড়িত সেই পরিবার কিভাবে এই দেশকে কিংবা এই সমাজকে ভালো কিছু উপহার দিবে তা কল্পনা ও করা যায় না। যে পরিবারের কর্তা ইয়াবার সাথে জড়িত সে পরিবার থেকে সু- সন্তান আশা করা মানে মরা গাছে ফুল আশা করার সমান।প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব দয়া করে টেকনাফের যুবসমাজকে রক্ষা করুন। আপনারা ছাড়া এই যুবসমাজকে রক্ষা করার মত আর কেউ নেই। কারণ, অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি তারা নিজেরাই এই ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা কি করে এই জাতিকে রক্ষা করবে আমার বোঝে আসেনা।অভিভাবকদের কাছে একটায় অনুরোধ ছেলেমেয়েদেরকে শিক্ষায় অনুপ্রানীত করুন। তাহলে আপনার ভবিষ্যত বংশধর রক্ষা হবে। অন্যথায় বংশধর রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে।
শিক্ষা ছাড়া কোন কিছুই সম্ভব নয় এই সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে শিক্ষা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। নিজের ভালো পাগল ও বোঝে কিন্তু আমরা কেন বুঝিনা তা ও আমার বোঝে আসেনা। শিক্ষা ছাড়া মানুষের ভিতরের মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। জন্মভূমি টেকনাফ বসবাসের উপযোগীতা হারাচ্ছে। যারা এই ব্যবসার সাথে জড়িত জাতি তাদের ক্ষমা করবেনা। হয়তো তোমরা খালি চোখে তোমাদের অবনতি দেখতে পাচ্ছনা। আমরা ঠিকই দেখতে পাচ্ছি। চিরচেনা জন্মভূমি টেকনাফের এই ভয়ংকর রুপ আমরা দেখতে চায়না। আমরা টেকনাফের নয়নাভিরাম সুন্দর্য্য মন ভরে উপভোগ করতে চাই।
লেখক:
জাহাঙ্গীর আলম, উন্নয়ন কর্মী।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।