এম.আর মাহমুদ
পবিত্র রমজানের ২৯টি রোজা যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দেয়ায় মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজার শুকরিয়া। তবে ঈদের আগের রাত থেকে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় শরীর ও মন এখনও ভাল যাচ্ছে না। কিন্তু পেশাগত কারণে গ্রামের বাড়ি থেকে মেটো ও পাকা পথ অতিক্রম করে চকরিয়া সদরে আসতে হয়েছে। সংবাদপত্র ৩ দিন বন্ধ থাকলেও কিন্তু অনলাইন খোলা থাকায় সংবাদ ঠিকই পাঠাতে হয়েছে। ঈদের নামায আদায় শেষে বাড়িতে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে গিয়ে শুনলাম সড়ক দূর্ঘটনার মত দুঃসংবাদ। আলীকদম থেকে চাঁদের গাড়ি (জীপ) যোগে একদল ১৩-১৯ বছরের (টিনএইজ) যুবক ঈদ আনন্দ উপভোগ করার জন্য চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে জীপটি লামা উপজেলার সর্বোচ্চ পাহাড়ের চূড়া মিরিঞ্জার অনতি দূরে দূর্ঘটনায় পতিত হয়। এতে শিশু সহ ৪ জন মৃত্যুবরণ করে। আরো ৪০-৪২ জন যাত্রী মারাত্মকভাবে আহত হয়ে হাসপাতালের বেডে নিত্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। নিহতরা বেশিরভাগই আলীকদম ও চকরিয়ার বাসিন্দা। সংবাদটি শোনে ইন্নালিল্লাহ পড়ে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো ছাড়া করার কিছুই ছিল না। যাক ২০১৬-২০১৭ অর্থবছর শেষ হয়েছে ৩০ জুন। নতুন অর্থবছর ২০১৭-২০১৮ শুরু হয়েছে। নতুন অর্থবছর শুরু হতে না হতেই গরীবের পর্যটন হিসাবে খ্যাত বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভ্রমণ ফি একলাফে পূর্ণবয়স্কদের ক্ষেত্রে ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, ছোটদের ক্ষেত্রে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা করা হয়েছে। খবরটি শোনে খারাপ লেগেছে। বেরসিক একজন দর্শনার্থী বলতে শোনা গেছে, পার্কের প্রবেশ মূল্য বাড়ানোর বিষয়টি যেন “বারো হাত কাঁঠালের তের হাত বিচির মত”। একদিকে চাউলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, তার সাথে পাল্লা দিয়ে পার্কের দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি যেন মরার উপর খারার ঘা। যাক পার্কে থাকা বন্যপ্রাণীর খাবারসহ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেড়েছে। উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। সব মিলিয়ে পার্কে ঢোকার টিকেটের মূল্য হয়তো সে কারণেই বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করছে অনেকে। বিশেষ করে ঈদ সহ জাতীয় দিবস ছাড়া অন্য দিনগুলোতে তেমন দর্শনার্থী পার্কে ভিট করে না। তবে শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের ভিট বাড়ে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণ করতে দেশী-বিদেশী অসংখ্য পর্যটক কক্সবাজার আসে। সে সাথে তারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কও ভ্রমণ করেন। কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের বেশ ক’টি উপজেলার নিম্ন আয়ের লোকজন ভ্রমণের আশায় এখানে প্রায় সময় এসে থাকে। কারণ তাদের পক্ষে ঢাকা ও চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানা দেখার সৌভাগ্য তেমন হয় না। নয়নাভিরাম ও প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বৃক্ষরাজিতে ঘেরা এ পার্কের বদ্ধ খাঁচায় আবদ্ধ প্রাণীগুলো দেখে বেশিরভাগ মানুষ অবিভূত হয়। কিন্তু নির্ধারিত কিছু দেশীয় প্রাণী ছাড়া এখানে বিদেশী কোন প্রাণী নেই বললেই চলে। হরিণ, বানর, ভাল্লুক, বাঘ, সিংহ, হাতি, কয়েকটি অজগর সাপ, জলহস্তি, কুমির ও ইমু পাখিসহ কিছু পাখি ছাড়া আছেই বা কি? অথচ দর্শনার্থী এ নান্দনিক পার্কে যায়, জীবনে দেখেনি এমন দেশী-বিদেশী জীব-জন্তু দেখার জন্য। পার্কের যাত্রালগ্ন ৩টি পাহাড়ী গরু (তম) রয়েছে। যাদের আয়ূশকাল শেষের দিকে। যে কোন মূহুর্তে মৃত্যু মুখে পতিত হতে পারে। পার্কটি দেশের জন্য একটি সম্পদ। এ পার্ক সৃষ্টি না হলে শত কোটি টাকার গর্জন গাছগুলোর অস্তিত্ব থাকতো না। শুধুমাত্র পার্ক হওয়ার কারণে গাছগুলো ‘তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে’ থাকার মত অবস্থায় থাকতো না। বনদস্যুরা এসব গর্জন গাছ কেটে সাবাড় করে পুরো বনভূমি গ্রাস করতো। ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি দেশের জন্য প্রথম। এটির আগে দেশের কোন সাফারি পার্ক ছিল না। ইতিমধ্যে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গাজীপুরে আরো একটি বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক স্থাপন করেছে। যা দেখার সৌভাগ্য এখনও হয়নি। তবে পত্র-পত্রিকায় দেখে মনে হয়েছে গাজীপুরস্থ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক একটি পরিপূর্ণ পার্ক। যেখানে বিদেশী বন্য-প্রাণীর অভাব নেই। গাজীপুরের সাফারি পার্ক পরিপূর্ণ হওয়ার যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। যার অবস্থান রাজধানীর অনতি দূরে। তাই এখানে দেশী-বিদেশী বেশুমার পর্যটক ভ্রমণ করে। এক্ষেত্রে গাজীপুরের সাফারি পার্কের সাথে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের তুলনা করাটা বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কথায় আছে ‘জাইংগা ছেড়া হলেও ব্যবহার করা যায়, তবে প্যান্ট ছেড়া হলে কি আর পড়া যায়?’ এ যুুক্তি মেনে নিয়ে মনকে সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে আসা দর্শনার্থীদের কোন উপায় নেই। এ পার্কের একজন নিয়মিত দর্শনার্থী হিসাবে ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক একটি পরিপূর্ণ পার্কে পরিণত করা হলে গাজীপুরের চাইতে দর্শনার্থী কমবে না; বরং বাড়বে। কারণ এ পার্কটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, অতি নান্দনিক। দ্রব্যমূল্যের সাথে পাল্লা দিয়ে দর্শনার্থীদের টিকেটের মূল্য বাড়ানো সাথে সাথে এখানে দেশী-বিদেশী বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি করলে দর্শনার্থীদের চাহিদা মিটবে। একজন দর্শনার্থী ৫০ টাকা ফি দিয়ে পার্কে প্রবেশ করে সেই পুরানো বন্যপ্রাণী ছাড়া অন্য কিছুই দেখছে না। দর্শনার্থীরা অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে দেশী-বিদেশী বন্য প্রাণী দেখতে না পেলে এক সময় পার্কে দর্শনার্থীর ভিট কমবে। তখন সরকারের লাভের চাইতে ক্ষতি বেশি হবে। প্রসঙ্গক্রমে একটি কথার অবতারণা না করলে হয় না ‘গেল শীত মৌসুমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ডুলাহাজারী সাফারি পার্ক ভ্রমণ শেষে বলতে শোনা গেছে, ‘এটা কিসের সাফারি পার্ক?’ সাফারি পার্কের সংজ্ঞা কি পার্কের বন্যপ্রাণী কি খাঁচাবন্ধী থাকে? পার্ক হলে প্রাণীরা থাকবে মুক্ত। ওইসব শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব পার্কের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা যথাযথভাবে দিতে পারেনি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।